স্টাফ রিপোর্টার: ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনায় আবার রদবদল এনেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে ইউনিয়ন পরিষদের একটি ধাপের ভোট হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু সেখান থেকে সরে এসেছে ইসি। নভেম্বর মাসে মাত্র দুটি ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ ভোট হবে। তৃতীয় ধাপে এক হাজারের বেশি ইউনিয়ন পরিষদ ভোটের জন্য চলতি সপ্তাহে তফসিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। এ ধাপের ভোট এসএসসি পরীক্ষার পর নেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সম্প্রতি কমিশনের এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে নীতিগত এসব সিদ্ধান্ত হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রসঙ্গত, এ পর্যন্ত একটি ধাপে ইউনিয়ন পরিষদ ভোট হয়েছে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে পিছিয়ে জানুয়ারিতে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। জেলা পরিষদের নির্বাচন আয়োজন না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন। তবে কয়েকটি জেলার সব ধরনের ভোট ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হলে বিচ্ছিন্নভাবে সেগুলোতে ভোট করবে।
সম্প্রতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নূরুল হুদার কার্যালয়ে এ অনানুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার ছাড়া বাকি কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের বিষয়টি ‘অভ্যন্তরীণ’ আখ্যায়িত করে এ প্রসঙ্গে তারা আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
নির্বাচনি পরিকল্পনা বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চলতি সপ্তাহে কমিশনের একটি সভা হওয়ার কথা। সেখানে এ বিষয়ে যেসব সিদ্ধান্ত হবে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ইসি সচিবালয়ের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর কমিশনের ৮৬তম সভায় দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদের তফসিল চূড়ান্ত করা হয়। ওই সব ইউনিয়ন পরিষদে আগামী ১১ নভেম্বর ভোট হবে। এছাড়া অক্টোবরের ৩ থেকে ৭ তারিখের মধ্যে যে কোনো একদিন তৃতীয় ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে এমনও ইঙ্গিত দেন ইসি সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। ওইদিন সভা শেষে সিইসি কেএম নূরুল হুদা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ডিসেম্বরের মধ্যে সব ইউনিয়ন পরিষদ ও জানুয়ারিতে জেলা পরিষদে ভোট করার পরিকল্পনা আছে।
আরও জানা গেছে, গত বুধবার সিইসির কার্যালয়ে তিনজন কমিশনার অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। বৈঠকে ইসির সক্ষমতা, মাঠ পর্যায়ের ডিসি, এসপি ও ইসির কর্মকর্তাদের মতামত, এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা, বিভিন্ন দিবস ও ধর্মীয় উৎসব বিবেচনায় ভোটের পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী নভেম্বরে দুটি ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ ভোট হবে। ইতোমধ্যে দ্বিতীয় ধাপের তফসিল ঘোষিত ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল হয়েছে। তৃতীয় ধাপের তফসিল চলতি সপ্তাহে দেওয়া হবে। ভোট হবে নভেম্বরের শেষ দিকে এসএসসি পরীক্ষার পর। বাকি ইউনিয়ন পরিষদগুলোর ভোট হবে ডিসেম্বর মাসে। এইচএসসি পরীক্ষা ও জাতীয় দিবসগুলো বিবেচনায় রেখে ভোটের তারিখ নির্ধারণ করা হবে। তবে প্রত্যেক ধাপের ইউপির সংখ্যা কমবেশি এক হাজার হবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা জানান, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের তথ্য অনুযায়ী প্রত্যেকটি জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কমবেশি তিন হাজার সদস্য থাকেন। নির্বাচনে ওই সদস্যরাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন। ওই সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে দুটি থেকে সর্বোচ্চ তিনটি উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে ভোট করা যায়। ওই পরিসংখ্যান মাথায় রেখে কোন উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদ কোন ধাপে রাখা হলে ভালো হয়, সেই মতামতও নেয়া হয়েছে। তফসিল ঘোষণার সময়ে সেই বিষয়টি বিবেচনায় রাখার জন্য কমিশনের নির্দেশনা রয়েছে।
সূত্রমতে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে নভেম্বরে। ভোট হবে জানুয়ারিতে। এ সিটির ভোট ডিসেম্বরে করার পরিকল্পনা ছিল। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন এই কমিশন আয়োজনের পরিকল্পনা মাথা রাখলেও সেটি বাদ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে জেলা পরিষদ নির্বাচনও আয়োজন করবে না এই কমিশন। এর যুক্তি হচ্ছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন শেষ করতেই ডিসেম্বর লাগবে। এতে জয়ী জনপ্রতিনিধিদের গেজেট প্রকাশ হতে আরও কয়েকদিন সময়ের প্রয়োজন হবে। এ পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরাই জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার। সেই কারণে জেলা পরিষদ নির্বাচনের সুযোগ পাবে না এই কমিশন। প্রসঙ্গত, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে।