স্টাফ রিপোর্টার: করোনার ভয়াবহতায় গত দুই বছর ঈদে ঘরমুখী মানুষের চাপ ছিলো কিছুটা কম। এবার করোনা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক। তাই নাড়ির টানে বাড়ি যাবেন অসংখ্য মানুষ। কিন্তু ঘরমুখী মানুষের জন্য নেই সুখবর। সড়ক কিংবা আকাশ, রেল কিংবা লঞ্চ সব জায়গায় চরম ভোগান্তির আশঙ্কা। ঢাকা থেকে বেরোনোর পথগুলোয় এখনই শুরু হয়েছে যানজট। সামনের দিনে এটা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। এবার ট্রেনে ৫ গুণের বেশি যাত্রী হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলানোই এবার ট্রেনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। যারা আকাশ পথে বাড়ি ফিরতে চান তাদের সেই ইচ্ছাও পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ ইতোমধ্যে দেশের সব রুটের এয়ারলাইন্সগুলোর টিকিট হাওয়া। এতসব ভোগান্তিকে সঙ্গী করেই ঢাকা ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন অনেকে। আগামী সপ্তাহে স্কুল-কলেজ বন্ধ হওয়ার পর পরই তারা ছুটবেন বাড়ি।
ঢাকা থেকে বের হওয়ার সড়কগুলোতে দীর্ঘ যানজটের আশঙ্কা করছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি নিয়েই রওনা হতে হবে। রাজধানীর গাবতলী-নবীনগর-ধামরাই, এয়ারপোর্ট-আশুলিয়া-বাইপাইল, এয়ারপোর্ট-গাজীপুর মহাসড়কের কোথাও ভাঙাচোরা, কোথাও চলছে উন্নয়ন কাজ। এছাড়া সড়কের ফুটপাতসহ অনেক জায়গা দখল করে আছে হকার। অবাধে চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, ভ্যান ও অটোরিকশাসহ ছোট যান। এসব কারণে রাজধানী থেকে বের হওয়ার দূরপাল্লার গাড়ি বার বার থমকে যাচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে গাড়ির গতি আরও কমে যাবে। তীব্র যানজটের সঙ্গে তীব্র ধুলা ও গরমে যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোয়াতে হবে। যানজটের ভোগান্তির সঙ্গে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ভাড়া। শুক্রবার থেকে দূরপাল্লার বাসের অগ্রিম টিকিট ছাড়া হয়েছে। নির্ধারিত মূল্যে টিকিট পাওয়া নিয়েও রয়েছে নানা শঙ্কা।
পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আপাতত তেমন কোনো সমস্যা নেই। তবে ঈদে গাড়ির চাপ বাড়ার সঙ্গে এসব মহাসড়কেও যানজট তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। তারা বলেন, এবারের অবস্থা অন্য বছরের চেয়ে ভালো। তবে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সমস্যা রয়েছে। মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায় সংস্কার কাজও চলছে। সম্প্রতি সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঈদ ও বর্ষা সামনে রেখে মহাসড়ক যান চলাচলের উপযোগী করতে কাজের গতি বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত থাকার কারণে যাতে যানজট না হয় সেদিকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। এছাড়া সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাও নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন। এদিকে ঈদ সামনে রেখে বাসের আগাম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রথম দিন শুক্রবার টিকিট প্রত্যাশীদের চাপ কম ছিল। এদিন ২৮ থেকে ৩০ এপ্রিলের টিকিটের চাহিদা বেশি। টিকিট সংগ্রহে আসা যাত্রীরা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণ থাকায় গত দুই বছর ওই অর্থে ঈদ আনন্দ ছিল না। এবার করোনার প্রকোপ কমে আসায় গ্রামে গিয়ে ঈদ উদ্যাপনের আনন্দ ফিরে এসেছে। এ কারণে এবার ঈদযাত্রায় গত দুই বছরের তুলনায় মানুষের চাপ বেশি থাকবে বলেও মনে করেন তারা।
ঈদযাত্রার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি ও একতা পরিবহণের মালিক মো. আবুল কালাম বলেন, সড়কের অবস্থা অন্য বছরের চেয়ে এবার কিছুটা ভালো। তবুও উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তির শঙ্কা আছে। রাজধানীর এয়ারপোর্ট থেকে টঙ্গী কলেজ গেট পর্যন্ত রাস্তায় থেমে থেমে যানজট হচ্ছে। এয়ারপোর্ট থেকে আশুলিয়া বাইপাইল পর্যন্ত সড়কের যেন বাপ-মা নেই। গত কয়েক বছর ধরেই সড়কটির বেহাল অবস্থা। পিচ ঢালাই রাস্তায় বড় গর্ত হলে ইট দিয়ে মেরামত করা হয়। আর ব্যাটারিচালিত রিকশার কারণে গাড়ি চালানোই দায়। এসব কারণে এখন মাঝেমধ্যে যানজট হচ্ছে। তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, ঢাকা থেকে রাজশাহী যেতে ৭-৭.৩০ ঘণ্টা সময় লাগছে। রাস্তা ভালো হলে ৫-৫.৩০ ঘণ্টা লাগত।
বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট রায় রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ফেরি পার হতে সময় বেশি লাগছে। সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, বগুড়াসহ কয়েকটি জেলায় সড়কে উন্নয়নকাজ, ফ্লাইওভার নির্মাণ কাজ চলছে। ওইসব জায়গায় গাড়ি থেমে থেমে চলে। কখনো কখনো হালকা যানজট হচ্ছে, যা এখনো সহনীয়। তবে গাড়ির চাপ বাড়লে কী হয় সেটা দেখার বিষয়।