স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। দলটির দায়িত্বশীলরা বলছেন, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। একাধিকবার নির্বাচনে গিয়ে তা বুঝতে পেরেছে বিএনপি। যে কারণে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি দলটির। এ দাবি আদায়ে অনড় অবস্থান তাদের। তারা বলছে, দলীয় সরকারের অধীনে বিএনপিকে নির্বাচনে নিতে নতুন নতুন ফাঁদ ফেলা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের আর কোনো ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি। দলের সব পরিকল্পনা এখন এই নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি ঘিরে। এ দাবি আদায় হলেই চূড়ান্ত বিজয় অর্জন সম্ভব।
দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেবে না বিএনপি। নিরপেক্ষ সরকার আদায় করেই জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া আগামীতে কোনো নির্বাচন হতেও দেওয়া হবে না।
জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির প্রতি অনড় বিএনপি নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সবকিছু বর্জন করে চলেছে। গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এরপর আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেয়নি দলটি। প্রথমে হুদা কমিশনের অধীনে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন ফখরুল। পরে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। এর পর থেকে সিদ্ধান্তে অনড় থেকেছে দলটি। সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে যারাই নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তাদের বিএনপির সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। জানা যায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি করে ঘরে বসে নেই মাঠের প্রধান বিরোধী দল। দাবি আদায়ে নানা তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। কষছে নতুন নতুন পরিকল্পনা। নানামুখী প্রস্তুতি নিচ্ছে। উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু বন্ধু দেশকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সরকারবিরোধীদের নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্যের প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ২২টি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে দলটি।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ভোটারদের আস্থা-বিশ্বাস সম্পূর্ণ ধ্বংস করে দিয়েছে সরকার ও নির্বাচন কমিশন। তাই ক্ষমতাসীন দলের অধীনে আগামীতে কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না বিএনপি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার কথায় কথায় গণতন্ত্রের কথা বলে, গণতান্ত্রিক দেশে সভা-সমাবেশের অনুমতি নিতে হয় না। অথচ বিএনপি ঘরোয়া পরিবেশে একটি মিলাদেরও আয়োজন করতে পারে না। এ অবস্থায় কীসের নির্বাচন, কীসের সংলাপ? জানা যায়, চলতি মাসের শেষ দিকে জাতীয় ঐক্যের চূড়ান্ত একটি রূপরেখা তুলে ধরার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এবার গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পথে হাঁটবে না বিএনপি। প্রায় দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ঐক্য কিংবা বৃহত্তর জোট গঠন করলেও তার স্টিয়ারিং কারও হাতে দেবে না। ২০১৮ সালের মতো কাউকে ইমাম বানাতে নারাজ বিএনপি। অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিতে চায় তারা। জাতীয় ঐক্য হলে তার প্রধান হবে বিএনপি। তবে সব দলকে অভিন্ন মঞ্চে আনার জোর চেষ্টা করা হবে। যাতে কেউ সরকারের প্রলোভনে পড়ে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে। তাদের দাবি-দাওয়াগুলো পর্যালোচনা সাপেক্ষে অনেকটা মানা হবে।
বিএনপি সরকারবিরোধী ‘বৃহত্তর রাজনৈতিক জোট’ গড়তে এরই মধ্যে বেশির ভাগ ছোট-বড় সমমনা ডান-বাম ও ইসলামী দলের সঙ্গে প্রাথমিক সংলাপ শেষ করেছে।
সংলাপসূত্রে জানা গেছে, ‘জাতীয় ঐক্য’ গড়তে সরকারের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে ঐকমত্য হয়েছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর। সরকার পতনের আন্দোলনে সংলাপে অংশ নেওয়া সব দল বিএনপির পাশে থাকবে। সেই সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ব্যাপারেও একমত হয়েছে তারা। এদিকে নির্বাচনে জয়ী হলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে সম্পৃক্ত সব দলকে নিয়ে ‘জাতীয় সরকার’ গঠনের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো অবস্থাতেই নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারগুলোর নির্বাচনে এ সত্য প্রমাণিত হয়েছে। তাই মনে করি, এ সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় সবার গ্রহণযোগ্য, একটি অংশীদারিমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠাই বর্তমান সংকট উত্তরণের একমাত্র পথ।’