স্টাফ রিপোর্টার: বাজারে নিত্যপণ্যের দাম এখন আকাশছোঁয়া। চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দাসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। প্রতিটি ডিমের দাম ১৪ থেকে ১৫ টাকা। পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ১৫-২০ টাকা। মাছ-মাংসে হাত দেয়ার উপায় নেই। বাজারে নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে তাতে ‘আগুনে হাত পুড়ে’ যাওয়ার মতো অবস্থা দাঁড়িয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত ভোক্তার জন্য বাজার করা আর্থিক ও মানসিক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যাদের আলুভর্তা ও ডিম-ডাল দিয়ে কোনোভাবে দুবেলা চলতো, তারাও এখন প্রায় নিরুপায়। বাড়তি চাল-ডালের দামের কারণে ডাল-ভাত জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছেন অধিকাংশ ভোক্তা। পুষ্টির চিন্তা কেউ মাথায় আনতে পারছেন না। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের সেবার দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছে। ফলে মানুষের জীবনযাত্রায় খরচ বেড়েই চলেছে। কিন্তু আয় বাড়ছে না। এতে অধিকাংশ ভোক্তার সংসার চালানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। এদিকে চলমান পরিস্থিতিতে স্বল্পআয়ের মানুষের নিত্যদিনের চাহিদায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে। সব মিলে নিত্যণ্যের বাড়তি দাম মেটাতে ভোক্তার হাঁসফাঁস অবস্থা। অনেক ক্রেতা অপরিহার্য পণ্য ছাড়া অন্য কিছু কেনা বাদ দিয়েছেন। অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার খাবারের বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। যে কারণে শরীরে পুষ্টি ঘাটতিও দেখা দিচ্ছে। খুচরা বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হয়েছে ১৬৫ টাকা। আর পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকা। যা সাত দিন আগে বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। আর এক মাস আগে ১৪০ টাকা ছিলো। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ৮০ টাকা। যা সাত দিন আগে ৫৫-৬০ টাকা ছিলো। দেশি রসুন প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ২৪০, যা এক মাস আগে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা। যা আগে ৩৫০ টাকা ছিলো। ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮৫ টাকা, এক মাস আগে ১৬৫-১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতিলিটার খোলা পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকা, যা এক মাস আগে ১৩০ টাকা ছিলো। প্রতিকেজি মোটা চালের মধ্যে স্বর্ণা জাতের চাল বিক্রি হয়েছে ৫২-৫৩ টাকা, যা এক মাস আগে ৫০ টাকা ছিলো। গত মাসে প্রতিকেজি আলু ৩৫ টাকায় বিক্রি হলেও এখন ৪০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি সব ধরনের শিল্পপণ্যের দামও বেড়েছে। বিস্কুটের প্যাকেট আগে যেগুলো ১০ টাকা ছিলো, তা এখন ১৫ টাকা। ৬৮ টাকা দামের চানাচুরের প্যাকেট ৮০ টাকা। ৩০ টাকা দামের সাবান ৫৫ টাকা। নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. সালাউদ্দিন বলেন, বাজারে পণ্যের দাম শুনে এখন ভয় হয়। এমন কোনো পণ্য নেই যার দাম বাড়েনি। বিভিন্ন অজুহাত ও ভোক্তাকে জিম্মি করে অসাধুরা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। কিন্তু যে বা যারা এসব দেখবে তারা এক প্রকার নির্বিকার। পরিস্থিতি এমন-ব্যয়ের সঙ্গে আয় না বাড়ায় আমাদের দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয়েছে। তাই পণ্য কেনাকাটায় কাটছাঁট করতে হচ্ছে। এছাড়া গত সাত দিনে ডিম ও পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়ানো হয়েছে। দেখার যেন কেউ নেই। জানতে চাইলে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, প্রতিবছর পণ্যের দাম বাড়ছে। কিন্তু সেভাবে ক্রেতার আয় বাড়ছে না। আয় না বাড়ায় ক্রেতার বাড়তি দরে পণ্য কেনা এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক ক্রেতা অপরিহার্য পণ্য ছাড়া অন্যকিছু কেনা বাদ দিয়েছেন। অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার খাবারের বাজেট কমিয়ে দিয়েছে। যে কারণে শরীরে পুষ্টি ঘাটতিও দেখা দিচ্ছে। তিনি আরও জানান, পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি ঠিক রাখতে সরকার যথেষ্টভাবে চেষ্টা করছে। কারণ বিশ্বমন্ডলে এখন পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি অনেক চড়া। তবে অনেক অসাধু ব্যবসায়ী এমন পরিস্থিতির মধ্যেও সুযোগ নিচ্ছে। তারা সুযোগ বুঝে পণ্যের দাম বাড়তি রেখে ভোক্তার পকেট কাটছে। অনেক সময় একই সিন্ডিকেট চক্র বারবার ভোক্তার পকেট কাটলেও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। তাই এদিকে নজর দিতে হবে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান বলেন, পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে বাজারে তদারকি করা হচ্ছে। অনেক পণ্য আছে যেগুলো আমাদের আমদানি করতে হয়। সেক্ষেত্রে ডলার ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে পণ্যের দাম বেড়েছে। পরিবহণ ভাড়াও বেড়েছে। যার প্রভাব পণ্যের ওপর গিয়ে পড়েছে। তবে অসাধু পন্থায় যারা পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। কাউকেই ছাড় দেয়া হচ্ছে না।