স্টাফ রিপোর্টার: নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রথম সভা হবে কাল। সভায় আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নিয়ে ভোটের বড় আয়োজন যাবে কমিশন। এদিকে আসন্ন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে কোনো আইনি জটিলতা নেই, কাল বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলে রোজায় তফসিল দিয়ে ঈদের পরে ভোট করবে ইসি। এছাড়া আটকে থাকা পৌরসভা-ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ঈদের পরে করার চিন্তা করছে কমিশন। কমিশন সভায় সিদ্ধান্ত হলে রোজার মধ্যেও এসব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে পারে।
ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, কাল ৫ এপ্রিল সকাল ১১টায় নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রথম এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে। প্রথম বৈঠকের আলোচ্য সূচিতে রয়েছে- কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন; পৌরসভা নির্বাচন; ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন; স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য নির্বাচন ও উপনির্বান এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা খচিত স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত বিষয়।
ইসি সূত্র জানায়, ৫ এপ্রিল বৈঠকে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন ছাড়াও ১০০-এর মতো ইউনিয়ন পরিষদ ও দীর্ঘদিন আটকে থাকা বিভিন্ন পৌরসভা নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হবে। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হলে ওদিন এসব নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে। তবে ভোট হবে ঈদের পরে। তবে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ক্লিয়ারেন্সের ওপর নির্ভর করছে।
নির্বাচনের বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানান, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন আয়োজনে কোনো আইনি বাধা নেই। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এ সংক্রান্ত চিঠি হয়তো দ্রুত পেয়ে যাব। ৫ এপ্রিল কমিশন সভা রয়েছে, সেদিন এ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, কমিশন সভায় আলোচ্য স‚চিতে কমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের বিষয়টি রয়েছে। সভায় কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে ৭ মার্চ এ বিষয়ে জানতে চেয়েও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কোনো সাড়া না পেয়ে গত ৩০ মার্চ আবারও চিঠি দেয় কমিশন। ইসির উপসচিব মো. আতিয়ার রহমান স্বাক্ষরতি এ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়, কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সীমানা বা ওয়ার্ড বিভক্তিকরণ সংক্রান্ত কোনো জটিরতা অথবা অন্য কোনো সমস্যা বা আইনি কোনো জটিলতা আছে কি না সে সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছিল, যা অদ্যাবধি পাওয়া যায়নি। এ সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠান সংক্রান্ত পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সর্বাধিক গুরুত্ব বিবেচনায় তথ্যগুলো প্রয়োজন। স্থানীয় সরকারের আনুষ্ঠানিক চিটি পেলে, কাল প্রথম সভায় সার্বিক বিষয় পযালোচনা করে কুমিল্লার ভোট নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবে ইসি। এর আগে কুমিল্লা সিটির ভোটের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুরোধেই আমরা স্থানীয় নির্বাচনগুলো করে থাকি। কোনো ধরনের জটিলতা না থাকলে স্থানীয় সরকার বিভাগের ক্লিয়ারেন্স পেলেই সভায় আলোচনা করে কুমিল্লা ভোটের বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। তিনি জানান, রমজান মাসে ভোট হবে না। তবে মে মাসে নির্বাচন করতে হলে রমজানের মধ্যে তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভোটের তারিখ ঈদের পরে উপযুক্ত সময়ে নির্ধারণ করা হতে পারে। সবকিছু কমিশন সভার পরে জানানো সম্ভব হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, কুমিল্লা সর্বশেষ ২০১৭ সালের ৩০ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় একই বছরের ১৭ মে। আইন অনুযায়ী প্রথম সভা থেকে পরবর্তী পাঁচ বছর হয় নির্বাচিত করপোরেশনের মেয়াদ। সে অনুযায়ী এ সিটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের ১৬ মে। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট গ্রহণ করতে হয়। সেদিক থেকে গত ১৬ নভেম্বর এ সিটি নির্বাচনের সময় গণনা শুরু হয়েছে। দুটি পৌরসভাকে একীভ‚ত করে ২০১১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। ওই বছরই প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ২০১৭ সালে এসে এ সিটি পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ইউপিকে অন্তর্ভুক্ত করে আয়তন বাড়ানো হয় প্রায় তিন গুণ। এতে দেখা দেয় সীমানা জটিলতা। বর্তমানে এ সিটিতে ২৭টি সাধারণ ওয়ার্ড রয়েছে। গত নির্বাচনে এ সিটিতে ১০৩টি ভোট কেন্দ্র ছিল আর ভোটার ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬। গত ২৬ ফেব্রæয়ারি কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশনকে নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি। নিয়োগ পাওয়ার পর দিন তারা শপথ নিয়ে প্রথম অফিস করেন ২৮ ফেব্রæয়ারি। তবে নতুন কমিশন যোগ দেয়ার পর কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক করেনি নতুন ইসি। তার আগেই দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ তৈরি করার জন্য রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের মতামত নেওয়ার জন্য ১৩ মার্চ থেকে সংলাপ শুরু করেছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।