স্টাফ রিপোর্টার: নভেম্বরেই যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা দিতে চায় বিএনপি। এজন্য দ্বিতীয় দফায় আবারও সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসছে দলটি। গুলশান কার্যালয়ে আজ প্রথম দল হিসাবে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সঙ্গে সংলাপ করবে। পর্যায়ক্রমে সরকারবিরোধী সব দলের সঙ্গে বসবে। প্রথম দফার সংলাপে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব, আন্দোলনের বিষয়ে করণীয়, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্র পরিচালনায় গুণগত পরিববর্তন, খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ নানা ইস্যুতে একমত হতেই দলটি এ সংলাপ করছে। বিএনপি সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, চলতি মাসেই দ্বিতীয় দফার সংলাপ শেষ করা হবে। প্রথম দফার সংলাপ অনেক দলের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে করা হয়েছে। কিন্তু এবার সব দলের সঙ্গে সংলাপ হবে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে। কল্যাণ পার্টির পর ৩ অক্টোবর জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), ৪ অক্টোবর এলডিপির সঙ্গে সংলাপের কথা রয়েছে। মূলত যুগপৎ আন্দোলনের জন্য বিএনপি কিছু দাবি চূড়ান্ত করেছে। এসব দাবি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে উপস্থাপন করা হবে। আশা করছি, তারা বিএনপির দাবির সঙ্গে একমত হবেন। আর না হলে সংযোজন-বিয়োজন করে তাদের কিছু দাবি যোগ করে তা চূড়ান্ত করা হবে। সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো একই দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনে নামবে-সে চেষ্টা করা হচ্ছে। বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ শেষে জানুয়ারিতেই সব দলের যুগপৎ আন্দোলনে নামার পরিকল্পনা রয়েছে। সে লক্ষেই বিএনপি কাজ করছে। প্রথম দফায় ২২টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করে বিএনপি। ২৪ মে মাহমুদুর রহমান মান্নার নাগরিক ঐক্যের সঙ্গে বৈঠকের মধ্য দিয়ে প্রথম দফার সংলাপ শুরু করে বিএনপি। যা ৩ আগস্ট গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে শেষ করে। ২২টি দলের মধ্যে আরও ছিল-বাংলাদেশ লেবার পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, মুসলিম লীগ, জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), জাগপা, ন্যাশনাল পার্টি-ন্যাপ (ভাসানী) এলডিপি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, সাম্যবাদী দল, ডেমোক্রেটিক লীগ, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক পার্টি, এনডিপি, পিপলস লীগ, বাংলাদেশ জাতীয় দল, বাংলাদেশ ন্যাপ ও গণফোরাম (মন্টু)। জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা দ্বিতীয় দফার সংলাপ করতে যাচ্ছি। কল্যাণ পার্টির মাধ্যমে এই সংলাপ শুরু হচ্ছে। মূলত আন্দোলনের রূপরেখা প্রণয়নে বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করছি। তাদের সঙ্গে আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করা হবে। কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, রোববার (আজ) দুপুর ২টায় বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে সংলাপ হবে। এতে প্রথম দফার সংলাপে বিভিন্ন দল থেকে দেয়া প্রস্তাবগুলোর সমন্বয় ও যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হবে। আগামী জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ থেকে যুগপৎ আন্দোলনের নামার একটা পরিকল্পনা আছে বলেও তিনি জানান। জানা গেছে, আজকের সংলাপে কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের নেতৃত্বে ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেবে। প্রতিনিধি দলে আরও রয়েছেন-দলটির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন, অতিরিক্ত মহাসচিব নুরুল কবির পিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সোহেল মোল্লা ও আব্দুল্লাহ আল হাসান সাকিব, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি মাহবুবুর রহমান শামিম, সেক্রেটারি জামাল হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি আবু হানিফ ও সেক্রেটারি আবু ইউসুফ। আর বিএনপির পক্ষে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের অংশ নেয়ার কথা রয়েছে। সূত্রমতে, দ্বিতীয় দফার সংলাপে ২২ দলের পাশাপাশি আরও কয়েকটি বাম ও ইসলামী দলের সঙ্গেও বসবে বিএনপি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মতবিরোধ ১৪ দলের এমন দুটি দলের সঙ্গেও অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। এছাড়া ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে ‘সমাঝোতা’ হয়েছে। নির্দলীয় সরকারের অধীনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের দাবির পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের মাধ্যমে যুগপৎ আন্দোলনের রূপরেখা চূড়ান্ত করবে বিএনপি। যা নভেম্বরের যে কোনো সময় সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে দলটি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে বিএনপির মূল দাবিগুলো হচ্ছে-বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর ও তাদের অধীনে নির্বাচন, সংসদ বাতিল করে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনের মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন এবং খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তির দাবি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বিএনপির এসব দাবি নিয়ে অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে। আলোচনার মধ্য দিয়ে তাদের অন্যান্য দাবি নিয়ে একক দাবিনামা তৈরি করা হবে। একক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যুগপৎ আন্দোলন শুরু করবেন। দলটির নীতিনির্ধারক সূত্র জানিয়েছে, নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচনের দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে দলীয় নেতা, সমমনা দল ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনা করেছে বিএনপি। আলোচনার মাধ্যমে একটি খসড়া রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। তিন পৃষ্ঠার এ খসড়া রূপরেখা নিয়ে প্রথমে ইস্যুভিত্তিক নিজ নিজ অবস্থান থেকে যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তাব করবে বিএনপি। দলীয় ব্যাপারে আন্দোলনের কর্মসূচির একপর্যায়ে ঐক্যবদ্ধভাবে এক মঞ্চ থেকেও আন্দোলনের প্রস্তাব রয়েছে দলটির। বিএনপির একজন নেতা জানিয়েছেন, যেসব রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে বিএনপির সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে থাকবে, তাদের সবাইকে নিয়ে বিরোধী জোট আসন বণ্টনের মাধ্যমে নির্বাচন করবে। নির্বাচনে বিরোধী জোট বিজয়ী হলে, জোটের কোনো দলের শীর্ষ নেতা পরাজিত হলেও তাকে সরকারের অংশীদার হিসাবে রাখার আশ্বাস রয়েছে। বিএনপির ওই নেতা আরও জানান, বিএনপির খসড়া রূপরেখার সঙ্গে অন্যান্য দলের গ্রহণযোগ্য মতামত যুক্ত করা হবে। সেজন্যই দ্বিতীয় দফায় এ সংলাপ করা হচ্ছে। সবার লক্ষ্য যখন এক হবে, তখন রূপরেখার শর্তাবলি পরিবর্তন ও পরিবর্ধন কোনো সমস্যা হবে না। বিএনপি দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল ও নেতাদের যথাযোগ্য সম্মান ও মূল্যায়ন অতীতেও দিয়েছে এবং ভবিষ্যতেও দেবে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বর্তমান স্বৈরশাসক আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যেসব রাজনৈতিক দল আন্দোলন করছে, তাদের সঙ্গে আমরা আলোচনা করছি। আলোচনার মাধ্যমে আন্দোলনের একটি চূড়ান্ত রূপরেখা তৈরি করব।