স্টাফ রিপোর্টার: পৌষের শেষ ভাগে এসে মওসুমের প্রথম শৈত্যপ্রবাহ জেঁকে বসেছে। দেশের অন্তত ২০ জেলায় চলছে শীতের দাপট। এক দিনের ব্যবধানে এসব জেলায় তাপমাত্রার পারদ নেমেছে আড়াই ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। এ সব জেলায় তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। গতকাল বুধবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১০ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৪ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উত্তরের জেলাগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং এ পরিস্থিতি কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এদিকে কুয়াশা ও কনকনে ঠান্ডায় সারা দেশের জনজীবন প্রায় স্থবির। সূর্যের দেখা মিলছে না কোনো কোনো জেলায়। এছাড়া দেশব্যাপী অতি ঘন কুয়াশা বিস্তৃত হওয়ায় বিমান ও নৌযান চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। দৃষ্টিসীমা হরণ করছে কুয়াশাচ্ছন্ন আবরণ। সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বাড়ছে। ঘন কুয়াশার কারণে আগামী বোরো মওসুমের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।
দেশের অন্যান্য অঞ্চলে তাপমাত্রা খুব বেশি না কমলেও ঘন কুয়াশার কারণে শীতের অনুভূতি বেড়ে গেছে অনেকটাই। বুধবার ভোর থেকে ঢাকার আকাশ ছিল কুয়াশায় ঘেরা। আর সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১৪.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তবে বেলা বাড়তেই কুয়াশা কেটে উঁকি মারে সূর্য। বুধবার সকালে আগামী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ জানান, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে অতি ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। অতি ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ এবং সড়ক যোগাযোগে বিঘœ ঘটতে পারে। তিনি বলেন, ‘ভারতের দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, বিহার হয়ে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে মিয়ানমার পর্যন্ত ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া আরব সাগর থেকে জলীয় বাষ্প ও কিছু মেঘ বাংলাদেশের দিকে ভেসে আসছে। দিল্লি-উত্তর প্রদেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে কুয়াশা কেটে যাবে।’
আবহাওয়া বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার সকালে দিনাজপুরে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং নীলফামারীর ডিমলায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। রাজশাহী, রংপুর ও ময়মনসিংহের গড় তাপমাত্রা অপরিবর্তিত আছে। তবে ঢাকা ও সিলেট বিভাগে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা বেড়েছে এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা কমেছে।
ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পশ্চিমে ও শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ উপকূলে বায়ুমন্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরের মধ্যবর্তী অংশে একটি ঘূর্ণিঝড় পুঞ্জিভূত হতে শুরু করেছে। ফলে ভারতের উত্তর প্রদেশের মাঝামাঝি অংশ থেকে শুরু করে মধ্য প্রদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে বায়ুমন্ডলের ট্রপোস্ফিয়ার স্তরের নিচের অংশে নি¤œচাপ দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে দক্ষিণ তামিলনাড়ু, দক্ষিণ কেরালা ও লক্ষদ্বীপে আগামী তিন-চার দিন মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হতে পারে।
অন্যদিকে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচ.ডি গবেষক, আবহাওয়া ও জলবায়ু গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ কৃত্রিম ভূ-উপগ্রহ থেকে পাওয়া চিত্র বিশ্লেষণ করে জানিয়েছেন, বুধবার দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৭ জেলার ওপরে ঘন কুয়াশা ছিলো। সকাল ৭টায় সবচেয়ে বেশি কুয়াশা ছিল রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের ওপরে। রংপুর বিভাগের জেলাগুলোতে সূর্যের আলো দিনভর প্রায় দেখাই যায়নি। দেশের সব বড় নদ-নদীতে ভারী কুয়াশার আস্তর কয়েকদিন অব্যাহত থাকবে। এ সময় রাতে দূরপালস্নার বাস-ট্রাকসহ সব ধরনের যানবাহন চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে নির্দিষ্ট সময় ধরে সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে বলে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে হলে তাকে বলে মাঝারি এবং তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে বলে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নামলে তাকে বলে অতি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। আজ বৃহস্পতিবার ও আগামীকাল শুক্রবার অতি ঘন কুয়াশা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে জানিয়ে আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানায়, এই দুই দিন সারা দেশে রাত এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। তবে পরবর্তী পাঁচ দিনে রাতের তাপমাত্রা কমতে পারে।
ঘন কুয়াশায় দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে সাড়ে ৮ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। এতে ঘাটপাড়ে আটকা পড়ে দূরপাল্লার বাসসহ শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান। চরম দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ যাত্রী, পরিবহণ শ্রমিক ও ঘাটসংশ্লিষ্টরা।
বিআইডবিস্নউটিসি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে ১১টা থেকে অতি ঘন কুয়াশার কারণে নদীতে থাকা মার্কার, বিকনো বাতি ও চরগুলো দৃশ্যমান ছিল না। ফলে দুর্ঘটনা এড়াতে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এই নৌরুটে ৯টি বড় ও ৭টি ছোট মিলিয়ে ১৬টি ফেরি চলাচল করছে। বুধবার সকাল ৮টার পর কুয়াশার ঘনত্ব কমে এলে ধীরে ধীরে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এদিকে, শীতের কারণে শহরে গ্রামের মানুষের আনাগোনা কমে গেছে। দিনমজুররা কাজে বের হতে পারছেন না। শীতের কারণে অনেকে কাজ বন্ধ রেখেছেন। এতে অসহায় হয়ে পড়েছেন দিনমজুররা। একইসঙ্গে দরিদ্রদের মাঝে কাপড়ের চাহিদা বাড়ছে। অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। একইসঙ্গে বাড়ছে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে এসব এলাকায়।