স্টাফ রিপোর্টার: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশে চলমান বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলতে পারে-এমন তথ্য জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বীরবিক্রম। বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘যুদ্ধাবস্থা’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেপ্টেম্বরের পর বিদ্যুৎ পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। তিনি আশা করছেন এই সময়ের পর জাতীয় গ্রিডে আরও ২ হাজার থেকে ৩ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যোগ হতে পারে। বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির বর্তমান পরিস্থিতিতে করণীয় বিষয়ক এক জরুরি বৈঠক শেষে ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। জ্বালানি উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি সচিব মাহবুবুর রহমান, বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমান, পেট্রোবাংলা, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
জ্বালানি উপদেষ্টা আরও বলেন, জ্বালানি সংকটের কারণে এই মুহূর্তে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে দুই হাজার মেগাওয়াটের মতো। আমরা যদি বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে পারি তাহলে ঘাটতি ৫শ মেগাওয়াটে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। অফিস সময় কমিয়ে আনার কথা ভাবা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি ভাবছি সপ্তাহে একদিন হোম অফিস চালু করা যায় কিনা। পাশাপাশি এখন করোনা সংক্রমণও বাড়ছে। সবাই মেনে চললে, ৫০০ মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হবে না। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট প্রতিদিন প্রয়োজন। সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত করা হলে, এই চাহিদা ১২ হাজার ৫০০ মেগাওয়াটে নামিয়ে নিয়ে আসা সম্ভব।
বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে সরকারের তরফ থেকে কোনো ধরনের নির্দেশনা আসতে পারে-সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. তৌফিক-ই-ইলাহী বলেন, বাসাবাড়ি, অফিসে ব্যবহার করার এসি ২৫ ডিগ্রির নিচে চালানো যাবে না, কোন ধরনের আলোকসজ্জা করা যাবে না, বিয়েসহ সব অনুষ্ঠান সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে, অফিস সময় কমানোসহ আরও কিছু বিষয় আছে। অফিস সময় করোনার সময় যেমন ছিল ৯টা থেকে তিনটা, মানে পিক আওয়ারের আগে অফিস শেষ করা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। আমরা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সেক্টরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য এসব প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
লোডশেডিংয়ের বিষয়ে গ্রাহকদের আগে জানানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, লোডশেডিংয়ের তথ্য নির্দিষ্ট করে আগে জানানো সম্ভব নয়। তার পরও সম্ভাব্য লোডশেডিং জানানো যাবে। তিনি বলেন, এরই মধ্যে ডিপিডিসি লোডশেডিংয়ের তথ্য জানাতে একটা অ্যাপ তৈরি করেছে। সেটা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে সব কোম্পানিকে ডেভেলপ করে ব্যবহার করার জন্য বলা হয়েছে। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে যেসব নির্দেশনা আসছে, তা বাস্তবায়ন করবে জেলা পর্যায়ে থাকা নয়টি কমিটি। উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে দেশে গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রমের ওপর বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ২০২৫ সাল নাগাদ ৬১৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। আমরা এলএনজি আমদানির শুরুতে চার মার্কিন ডলার করে কিনতে পেরেছি, এখন সেটা ৪১ মার্কিন ডলার। গ্যাস চুরি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গ্যাস সঞ্চালন লাইনের কোন কোন স্থান থেকে গ্যাস চুরি হচ্ছে, তা কোম্পানিগুলো নির্ধারণ করেছে। এখন সেসব স্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হচ্ছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে গ্যাস চুরি বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, উন্নত দেশ জাপানেও লোডশেডিং হচ্ছে। ব্রিটেনে রেশনিং করা হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়াতে একই অবস্থা। সারাবিশ্বেই পরিস্থিতি নাজুক। তাই আমাদের এখনই সাশ্রয়ী মনোভাবে চলতে হবে। ব্রিফিংয়ে প্রেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান নাজমুল আহসান, পরিচালক (অপারেশন) প্রকৌশলী আলী আল মামুনসহ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি বিভাগের বিভিন্ন কোম্পানির শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।