স্টাফ রিপোর্টার:
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ২৪ ডিসেম্বর। এর আগেই ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে তৃণমূলের মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটির সম্মেলনের কাজ শেষ করার নির্দেশনা দিয়েছেন দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া জাতীয় সম্মেলনের আগেই মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারকের সঙ্গে আলাপ করে আরও জানা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে গত জাতীয় সম্মেলনের আগের ৩৩টি জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বাকি ছিল ৪৫ জেলার সম্মেলন। বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির নেতারা দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পর্যন্ত ২৩টির মতো জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে আরও অন্তত ১৪টি জেলার সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি আটটি জেলায় এখনো সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়নি। মেয়াদোত্তীর্ণ রয়েছে আরও প্রায় ৭০-৮০টি উপজেলা শাখা।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, করোনাসহ নানা কারণে আমাদের সম্মেলনগুলো শেষ করতে একটু দেরি হচ্ছে। আমরা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষের পাশে ছিলাম। তবে এখন আমরা দ্রুতগতিতে আমাদের সম্মেলনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছি। এছাড়া আমরা একেবারে তৃণমূলে বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। ওয়ার্ড, ইউনিয়ন থেকে জেলা পর্যন্ত সম্মেলন করছি। ঢাকা মহানগরে দেখবেন আমরা ইউনিট থেকে সম্মেলন করেছি। এর মধ্য দিয়ে কিন্তু‘ আমাদের তৃণমূলে একটা ভিত্তি দাঁড়িয়ে যাচ্ছে। এভাবেই জাতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতি নিচ্ছি।
দেশের আট বিভাগে আওয়ামী লীগের ৭৮টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। অন্যদিকে সারা দেশে আওয়ামী লীগের উপজেলা, থানা ও পৌর কমিটির সংখ্যা প্রায় সাড়ে ছয়শর মতো। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১৬০টি, চট্টগ্রামে ১২৯টি, রাজশাহীতে ৮৩টি, খুলনায় ৭৪টি, রংপুরে ৬৬টি, বরিশালে ৫৩টি, সিলেটে ৪৯টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৯টির মতো কমিটি রয়েছে।
বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির নেতারা দায়িত্ব নেওয়ার পর এ পর্যন্ত ২৩টির মতো জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তবে সম্মেলন হলেও এসব জেলার বেশির ভাগেই এখনো হয়নি পূর্ণাঙ্গ কমিটি। এছাড়া এসব জেলার অধীন বেশ কিছু উপজেলা, থানা ও পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন এবং পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন বাকি রয়েছে।
এদিকে সম্মেলন না হলেও বেশ কয়েকটি জেলার সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫ নভেম্বর কুমিল্লা মহানগর, ৭ নভেম্বর টাঙ্গাইল, ১২ নভেম্বর চুয়াডাঙ্গা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১৩ নভেম্বর ঝিনাইদহ, ১৬ নভেম্বর বরগুনা, ২১ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর, ২৬ নভেম্বর পিরোজপুর, কুমিল্লা দক্ষিণ এবং জামালপুর, ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম দক্ষিণ, ৩ ডিসেম্বর নোয়াখালী এবং ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর এবং ৫ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
এখনো পর্যন্ত তারিখ হয়নি এমন জেলা রয়েছে আরও অন্তত আটটি। এর মধ্যে ২০১২ সালের ২৭ ডিসেম্বর বরিশাল, ২০১৪ সালের ১৯ জুন মুন্সীগঞ্জ, ২০১৫ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি গাজীপুর মহানগর, ২০১৫ সালের ১১ নভেম্বর গোপালগঞ্জ, ২০১৬ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কিশোরগঞ্জ, ২০১৬ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি শরীয়তপুর, ২০১৬ সালের ২৯ এপ্রিল ময়মনসিংহ জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এছাড়া দীর্ঘদিন সম্মেলন হয় না মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের। সম্মেলন ছাড়াই এর আগে কমিটি গঠন করা হয়েছিল জেলাটিতে।
ঢাকা বিভাগে আওয়ামী লীগের ১৭টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে চারটা মহানগর ও বাকি ১৩টা জেলা শাখা। ইতোমধ্যে দুটি মহানগরসহ আটটি জেলার সম্মেলন শেষ হয়েছে। আওয়ামী লীগের গত সম্মেলনের আগে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এবারও জাতীয় সম্মেলনের আগেই ঢাকা উত্তর-দক্ষিণসহ বাকি জেলা শাখার সম্মেলনও করার পরিকল্পনা রয়েছে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের। পাশাপাশি ওয়ার্ড থেকে শুরু করে উপজেলা ও থানা কমিটি গঠনের কাজও চলছে। ইতোমধ্যে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের থানা ও ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ হয়েছে। বাকি জেলাগুলোর থানা ওয়ার্ড সম্মেলনের কাজও এগিয়ে চলছে বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।
রাজশাহী বিভাগে আওয়ামী লীগের ৮টি জেলা ও একটি মহানগর রয়েছে। এর সবগুলোর সম্মেলন শেষ হয়েছে। এই বিভাগে ৮২টি উপজেলার সমমর্যাদার কমিটি রয়েছে। এর মধ্যে ৭৯টির সম্মেলন ইতোমধ্যে কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয়। বাকি তিনটির আগামী মাসের মাঝামাঝিতে হবে। আওয়ামী লীগের রাজশাহী বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন যুগান্তরকে বলেন, সম্মেলনের মধ্য দিয়েই সব জায়গায় কাউন্সিলরদের মতামতে বা আলোচনার মাধ্যমে কমিটি হয়েছে। বেশকিছু জেলা ও উপজেলার পূর্ণাঙ্গ কমিটিও জমা পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিভাগে আওয়ামী লীগের ১৫টা সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি জেলা এবং দুটি মহানগর। এই বিভাগে ১২৯ উপজেলা সমমর্যাদার শাখা কমিটি রয়েছে। আওয়ামী লীগের চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জাতীয় সংসদের হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন যুগান্তরকে জানান, ৫ নভেম্বর কুমিল্লা মহানগর, ১২ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২১ নভেম্বর লক্ষ্মীপুর, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ, ১ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম দক্ষিণ, ৩ ডিসেম্বর নোয়াখালী এবং ৪ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম মহানগর এবং ৫ ডিসেম্বর কক্সবাজার আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া চাঁদপুরের সম্মেলন ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হবে। আগামী সপ্তাহে নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ হবে। তিনি আরও বলেন, রাঙামাটি জেলা সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। কুমিল্লা উত্তর, ফেনী, চট্টগ্রাম উত্তর, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান জেলার মেয়াদোত্তীর্ণ হয়নি।
ময়মনসিংহ বিভাগে আওয়ামী লীগের চারটি জেলা এবং একটি মহানগর কমিটি রয়েছে। যার সবগুলোই বর্তমানে মেয়াদোত্তীর্ণ। তবে একটি জেলার (২৬ নভেম্বর জামালপুর) জেলার সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে। আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, বাকি চারটি জেলার সম্মেলনের তারিখ দু-একদিনের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে। আমরা আশা করছি নভেম্বরের ২৫ থেকে ডিসেম্বরের ৫ তারিখের মধ্যে বাকি চারটি জেলার সম্মেলনও শেষ করতে পারব। এই বিভাগের ৩৯টি উপজেলা কমিটির মধ্যে ৩২টির সম্মেলন ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে বলেও জানান তিনি।
সিলেট বিভাগে আওয়ামী লীগের ৫টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। সেগুলো হলো-সিলেট জেলা, সিলেট মহানগর, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ। এর মধ্যে গত জাতীয় সম্মেলনের আগে সুনামগঞ্জ ছাড়া অন্য জেলাগুলোর সম্মেলন হয়েছে। এগুলোর পূর্ণাঙ্গ কমিটিও হয়েছে। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, আমার বিভাগে একটি ছাড়া বাকি সব জেলার সম্মেলন হয়েছে। বাকি থাকা সুনামগঞ্জ জেলার সম্মেলন নভেম্বরে করে ফেলব। এছাড়া যেসব উপজেলা-থানা ও পৌর কমিটির সম্মেলনের কাজও শেষ করে ফেলব।
বরিশাল বিভাগে আওয়ামী লীগের ৭টি সাংগঠনিক জেলা রয়েছে। এর মধ্যে তিন জেলা এখনো মেয়াদোত্তীর্ণ। বরিশাল বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন, আমার বিভাগের দুটি জেলার (বরগুনা ও পিরোজপুর) সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। বাকি রয়েছে একটি জেলা-বরিশাল। খুব শিগগিরই এই জেলার সম্মেলন করা হবে।
রংপুর বিভাগে আওয়ামী লীগের আটটি জেলা এবং একটা মহানগর রয়েছে। এর মধ্যে গত জাতীয় সম্মেলনের আগে ৬টির সম্মেলন হয়েছিল। সেগুলো হলো-রংপুর জেলা, রংপুর মহানগর, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বর্তমান কমিটির সময়ে পঞ্চগড় ও গাইবান্ধা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই বিভাগের এখন একটি জেলার (দিনাজপুরের) সম্মেলন বাকি আছে।
খুলনা বিভাগে আওয়ামী লীগের ১১টি সাংগঠনিক জেলা কমিটি রয়েছে। আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনে আগে সাতটির সম্মেলন ও কমিটি হয়েছিল। বাকি ছিল চারটি জেলার সম্মেলন। এর মধ্যে ইতোমধ্যে মাগুরা, মেহেরপুর জেলার সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত হয়েছে বাকি দুটি জেলা চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের। এখন চলছে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ। এ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক বলেন, ডিসেম্বরের মধ্যেই সম্মেলনগুলো শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।
এদিকে রোববার দলীয় সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জাতীয় সম্মেলন নিয়ে এক সভা করে আওয়ামী লীগ। সভার শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর সম্মেলন করার জন্য দলীয় সভাপতি নির্দেশ দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আমরা সমন্বয় করছি। তারা নেত্রীর উপস্থিতিতে সম্মেলন করতে চান। তার সময়সূচির সঙ্গে মিলিয়ে আমরা তারিখগুলো দিয়ে দেব। আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে এই সম্মেলনগুলো হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জাতীয় সম্মেলনের মেয়াদোত্তীর্ণ সব (সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম) সংগঠনের সম্মেলন করে ফেলব। ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগের সম্মেলনও করা হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হবে। সব সংগঠনের সম্মেলন হবে।