ঘুষ না পেয়ে মালিককে মারধরের অভিযোগ : ৬ দিন ধরে বঙ্গ পাইপ কারখানা বন্ধ

কাস্টমস কর্মকর্তার শাস্তির দাবিতে আজ একঘণ্টা দোকানপাট বন্ধ রেখে মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার: কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, যশোর-এর অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান কর্তৃক ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি এবং তা না পেয়ে স্বত্ত্বাধিকারী সেলিম আহমেদকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদ ও অভিযুক্ত কর্মকর্তার শাস্তির দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় সর্বস্তরের ব্যবসায়ী সমাজ এবার আন্দোলনে নেমেছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজ বুধবার বেলা ১০টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে বড়বাজার শহীদ হাসান চত্বরে মানববন্ধন কর্মসূচির ডাক দেয়া হয়েছে। তবে, এসময় জরুরি ওষুধ, মাছ-মাংস ও কাঁচামালের দোকানকে কর্মসূচির আওতামুক্ত রাখা হয়েছে। ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের পক্ষে জেলা দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল কাদের জগলু বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। আন্দোলন সফল করতে মঙ্গলবার ব্যাপকভাবে মাইকিং করা হয়েছে।
আব্দুল কাদের জগলু বলেন, চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, জেলা পরিবেশক সমিতি, সমবায় নিউ মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতিসহ জেলায় ব্যবসায়ীদের সকল সংগঠন ঐক্যবদ্ধভাবে এই আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। আন্দোলনের ডাক দেয়া ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং বন্ধ ঘোষিত মেসার্স বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনসহ কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, যশোর-এর ১২ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ৬ জানুয়ারি বঙ্গ পাইপ ইন্ডাস্ট্রিতে যায় এবং তল্লাশির নামে যাচ্ছেতাই আচরণ করেন। অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান প্রতিষ্ঠানের মালিক সেলিম আহমেদের কাছে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন। সেলিম আহমেদ ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। এতে অপমানিত হয়ে মালিকপক্ষ ৯ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার থেকে ২৪ বছরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ীভাবে বন্ধ ঘোষণা করে দেয়। এতে শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিকসহ প্রতিষ্ঠানটির উপর নির্ভরশীল পাঁচ শতাধিক পরিবার চরম অনিশ্চয়তায় পড়ে।
এদিকে অভিযুক্ত অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান ও তার ঘনিষ্ট সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনের শাস্তি, কাস্টমস কর্মকর্তাদের দ্বারা অনৈতিক হয়রানি বন্ধ এবং প্রতিষ্ঠানটি চালুর দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তারা ৯ জানুয়ারি আন্দোলনে নামে। ওইদিন দুপুরে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন, এরপর স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে শহরে বিক্ষোভ মিছিল, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে মানববন্ধন ও জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি পেশ করেন। স্মারকলিপির ভাষ্যমতে প্রতিষ্ঠানটি ২৪ বছর ধরে সুনামের সাথে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছে। ২০১৮-২০১৯. ২০২০-২০২১ ও ২০২১-২০২২ অর্থবছরে উৎপাদন পর্যায়ে জেলায় সর্বোচ্চ ভ্যাট পরিশোধকারী হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। শতাধিক কর্মী প্রত্যক্ষভাবে সেখানে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। এর বাইরে পরোক্ষভাবে উপকারভোগী আরও পাঁচশতাধিক পরিবার। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট, যশোর-এর প্রিভেনটিভ দল কর্তৃক হয়রানি শিকার হচ্ছেন। তারা বিভিন্ন সময়ে মোটা অংকের ঘুষ দাবীসহ নানাভাবে হয়রানি করে থাকেন। ৬ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান ও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনসহ ১২ সদস্যের একটি প্রিভেনটিভ দল (চুয়াডাঙ্গার দৌলাতদিয়াড়) প্রতিষ্ঠানে আসেন। তল্লাশির নামে তারা ডাকাতের মতো আচরণ করে এবং স্বত্ত্বাধিকারী সেলিম আহমেদের কাছে মোটা অংকের টাকা ঘুষ দাবি করেন। যেটা তার (স্বত্ত্বাধিকারী) পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না। এক পর্যায়ে অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান স্বত্ত্বাধিকারী সেলিম আহমেদের সাথে বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এবং তাকে (সেলিম আহমেদ) জোরপূর্বক অফিস কক্ষ থেকে বের করে দিয়ে মূল্যবান কাগজপত্র তছনছ করে প্রতিষ্ঠানের ক্ষতিসাধন করেন। সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা সাদ্দাম হোসেনসহ প্রিভেনটিভ দলের সদস্যরা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে উগ্র আচরণ করে। যার ফলে মালিকপক্ষ প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ীভাবে বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। স্বত্ত্বাধিকারী মৌখিকভাবে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৫ দিনের বেতন-ভাতা পরিশোধপূর্বক শ্রমিক-কর্মচারীদের অব্যাহতিদানের সিদ্ধান্ত নেন। আন্দোলনকারীদের দাবি অভিযুক্তদের শাস্তি এবং কাস্টমস কর্মকর্তাদের দ্বারা অনৈতিক হয়রানি বন্ধসহ বঙ্গ পিভিসি পাইপ ইন্ডাস্ট্রিজ চালুর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। ৯ জানুয়ারি আন্দোলনরত শ্রমিক কর্মচারীরা ঘোষণা দেয় যে পরবর্তী ৫ কার্যদিবসের মধ্যে দাবী পূরণ না হলে পরিবার পরিজন নিয়ে রাস্তায় বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ কঠোর আন্দোলন করা হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ দাবি করেন, অতিরিক্ত কমিশনার রাকিবুল হাসান অফিসে ঢুকে প্রথমে মালিক সেলিম আহমেদকে বলেন যে, অনেক তো লাভ করছেন। এরপর সরাসরি ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেন এবং নিজেই জানিয়ে দেন যে ৩০ লাখের নিচে হবে না। এই বিপুল পরিমাণ টাকা ঘুষ দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে অকথ্য গালাগালিসহ কলার টেনে ধরে চেয়ার থেকে তুলে অফিসকক্ষের বাইরে বের করে দেন প্রতিষ্ঠান মালিককে। দীর্ঘসময় ধরে সদলবলে অফিসের কাগজপত্র তছনছ করে দেয়। তাই, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে মালিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেন।