স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেয়ার অনুমতি না পেলে সংসদ থেকে দলীয় সদস্যরা পদত্যাগ করতে পারেন। দলটির একাধিক নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তারা জানান, সংরক্ষিত নারী আসনসহ বিএনপির সাতজন সংসদ সদস্য (এমপি) রয়েছেন। দলের চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা এখন চরম খারাপ। যা নিয়ে তৃণমূলসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উদ্বিগ্ন। এ অবস্থায় সরকার মানবিক বিবেচনায় বিদেশে সুচিকিৎসার অনুমতি দেবে বলে সবার প্রত্যাশা। তা না হলে কঠোর কর্মসূচির বাইরেও সংসদ থেকে দলীয় সদস্যদের পদত্যাগের কথা চিন্তা করা হচ্ছে।
জাতীয় সংসদে বৃহস্পতিবার পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য জিএম সিরাজ খালেদা জিয়াকে মানবিক দিক বিবেচনায় দু-এক দিনের মধ্যে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানান। এ সময় তিনি বলেন, বিএনপির ছয়জন (সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ছাড়া) এ সংসদে আছেন। আওয়ামী লীগের বন্ধুরা বলেন, এটা এ পার্লামেন্টের জন্য অলংকার। তাই বলতে চাই, আমাদের সংসদ নেতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, যদি আমরা সত্যি সত্যি অলংকারই হয়ে থাকি তাহলে পার্লামেন্ট অলংকারবিহীন করবেন না। এ কারণে আমাদের দলীয় সিদ্ধান্তে এমনও হতে পারে, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) যদি চরম অবস্থায় চলে যান, তাহলে হয়তো এ পার্লামেন্টে আমাদের থাকা সম্ভব নাও হতে পারে।
বিএনপি সূত্র জানায়, শনিবার স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসার সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৈঠকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে পাঠানো দরকার-মেডিকেল বোর্ডের এমন পরামর্শের কথা তুলে ধরা হয়। একইসঙ্গে বিদেশে নিতে পরিবারের আবেদনের বিষয়েও অবহিত করা হয়। এ সময় নেতারা বিদেশে নেওয়ার ব্যাপারে সরকার থেকে অনুমতি পাওয়া ও না পাওয়া-দুটি দিক নিয়েই আলোচনা করেন। দলীয় প্রধানের শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে সরকার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেবে বলে প্রত্যাশা করেন নেতারা। অনুমতি না দেয়া হলে কর্মসূচির পাশাপাশি সংসদে থাকা দলীয় সদস্যদের পদত্যাগের বিষয়টি বৈঠকে উঠে আসে। কিন্তু বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে বুধবার সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিএনপির সিনিয়র নেতাদের কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল। পরে করণীয় নিয়ে রাতে বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেন দলটির হাইকমান্ড। নেতারা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য কঠোর কর্মসূচিসহ দলীয় সংসদ সদস্যদের পদত্যাগের বিষয়ে পরামর্শ দেন। একই সঙ্গে সরকারের সঙ্গে তার (খালেদা জিয়া) পরিবারের সদস্যদের আরও আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। একাদশ জাতীয় সংসদে বিএনপির সংদস্যরা হলেন-উকিল আব্দুস সাত্তার (ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২), হারুনুর রশীদ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩), আমিনুল ইসলাম (চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২), মোশাররফ হোসেন (বগুড়া-৪), জাহিদুর রহমান (ঠাকুরগাঁও-৩) ও গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) সিরাজ (বগুড়া-৬)। এছাড়া সংরক্ষিত নারী আসনে বিএনপির একমাত্র সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা।
হারুনুর রশীদ বলেন, পদত্যাগের বিষয়ে সংসদে দেয়া জিএম সিরাজের বক্তব্যের সঙ্গে আমরা সব সংসদ সদস্য একমত। ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) মুক্তি ও সুচিকিৎসা নিয়ে তার পরিবার ও দল থেকে বারবার দাবি জানিয়ে আসছে। কিন্তু সরকার তা কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে এর দায়-দায়িত্ব সরকারের ওপর পড়বে। তখন পার্লামেন্ট থেকে আমরা বেরিয়ে যেতে পারি।