স্টাফ রিপোর্টার: আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতি। ভোটের বছরে রাজপথ দখলে রাখতে মাঠে রয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। যদিও দল দুটির লক্ষ্য ভিন্ন। নির্বাচন ঘিরেই পুরোপুরি মনোযোগ ক্ষমতাসীনদের। এ লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করেছেন তারা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তৃণমূল সফর অনেকটাই রুপ পাচ্ছে নির্বাচনী জনসভায়। তিনি নিজেও ভোট চাইছেন নৌকা মার্কায়। দলটির কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত লেগেছে ভোটের হাওয়া। সভা-সমাবেশ থেকে শুরু করে তাদের প্রতিটি কর্মকা-ই থাকছে নির্বাচনি আবহ। আওয়ামী লীগ যখন নির্বাচনি প্রচারে ঠিক সেই সময় সরকার পতনের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে আছে বিএনপি। আপাতত দলটির ভাবনায় শুধুই সরকারবিরোধী আন্দোলন। দাবি আদায়ে তৈরি করা হচ্ছে আন্দোলনের রোডম্যাপ। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের প্রস্তুত করা হচ্ছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে যে কোনো মুহূর্তে যেন অলআউট মাঠে নামতে পারে। সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে বলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদের দেয়া হয়েছে সতর্কবার্তা। খালি মাঠে গোল দেয়ার চিন্তা বাদ দিয়ে ভোটারদের কাছে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচারের পাশাপাশি সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরতে বলা হয়েছে। হাইকমান্ডের এমন নির্দেশনা পেয়ে মন্ত্রী-এমপি এবং সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিয়মিতই যাচ্ছেন নিজ নিজ এলাকায়। সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ সম্ভাব্য প্রার্থীরাও নড়েচড়ে বসেছেন। দীর্ঘদিন নিষ্ক্রীয় থাকলেও এখন নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন দলীয় কর্মসূচিতে। কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গেও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন। নেতাকর্মীদের নির্বাচনমুখী করতে দলের হাইকমান্ডও নানা উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে তৃণমূল সফর শুরু করেছেন। সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এসব সফর হলেও শেষ মুহূর্তে তা বিশাল নির্বাচনি জনসভায় রুপ নিচ্ছে। নেতাকর্মীদের ভোটের প্রস্তুতি নেয়ার পাশাপাশি সাধারণ জনগণের কাছে নৌকা মার্কায় ভোটও চাচ্ছেন তিনি। জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমরা আমাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি শুরু করেছি। ইশতেহার তৈরির কাজ চলছে। আমরা যে উন্নয়ন করেছি নির্বাচনকে সামনে রেখে তা নিয়ে দেশের মানুষের কাছে যাচ্ছি। তৃণমূল পর্যন্ত সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে থাকবে। আমাদের কর্মসূচিও চলছে। এগুলো নির্বাচন পর্যন্ত চলবে। এদিকে রাজপথের আন্দোলনে চূড়ান্ত সফলতায় সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। সংগঠনে গতি আনতে পুনর্গঠন করা হচ্ছে মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটি। যারা এখনো নিষ্ক্রিয় আছেন তাদের মাঠে নামানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরপরও যারা কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন না তাদের দেয়া হচ্ছে সতর্কবার্তা। বিগত সময়ে যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল তা প্রত্যাহারেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে আপাতত তাদের মূল ভাবনায় আন্দোলন থাকলেও নির্বাচনের প্রস্তুতিও যে একেবারে নেই তা বলা যাবে না। এ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো তৎপরতা না থাকলেও চলছে নির্বাচনি হোমওয়ার্ক। জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আপাতত আমাদের ভাবনায় আন্দোলন ছাড়া কিছু নেই। এ সরকারের পতন ছাড়া আমাদের সামনে আর কোনো বিকল্পও নেই। সাধারণ জনগণও তাদের কর্মকা-ে অতিষ্ঠ। তাদের বিদায়ের প্রহর গুনছেন। আমাদের কর্মসূচিতে দিন দিন তাদের উপস্থিতিও বাড়ছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কেউ ঘরে ফিরবে না। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে আপাতত আমরা ভাবছি না। এ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দেশে একটি নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে। তারা নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন। আমরা সেই নির্বাচনে অংশ নেব। বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। যে কোনো পরিস্থিতিতেই নির্বাচন করার মতো সক্ষমতা রয়েছে।