রেকর্ড মৃত্যুর পরদিন দেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা কিছুটা কমে এসেছে, দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও নেমে এসেছে ১১ হাজারের ঘরে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে সাড়ে ৩৯ হাজার নমুনা পরীক্ষা করে ১১ হাজার ৫৭৯ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তাতে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১ লাখ ২৮ হাজার ৮৮৯ জন। করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে গত এক দিনে মারা গেছেন আরও ২০০ জন। তাদের নিয়ে এ পর্যন্ত মোট ১৮ হাজার ৩২৫ জনের মৃত্যুর খবর সরকারের খাতায় এসেছে। কেবল ঢাকা বিভাগেই এক দিনে ৪ হাজার ৮৫৬ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা দিনের মোট শনাক্তের প্রায় ৪২ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে রোগী শনাক্ত বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৬৩২ জন। আর যে ২০০ জন গত এক দিনে মারা গেছেন, তাদের ৭৩ জনই ছিলেন ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। খুলনা বিভাগে ৫০ এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারি হিসাবে গত এক দিনে আরও ৯ হাজার ৯৯৭ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৯ লাখ ৫১ হাজার ৩৪০ জন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গতবছর ৮ মার্চ; তা ১১ লাখ পেরিয়ে যায় এ বছর ১৮ জুলাই। তার আগে ১২ জুলাই দেশে রেকর্ড ১৩ হাজার ৭৬৮ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পরে। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছরের ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বছরের ১০ জুন তা ১ হাজার ছাড়ায়। ১৯ জুলাই এক দিনে রেকর্ড ২৩১ জনের মৃত্যুর খবর জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিশ্বে শনাক্ত রোগী ইতোমধ্যে ১৯ কোটি ১০ লাখ ছাড়িয়ে গেছে, করোনাভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ৪০ লাখ ৯৮ হাজারের বেশি মানুষের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ৬৩৯টি ল্যাবে ৩৯ হাজার ৫১০টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ৭৩ লাখ ৩৯ হাজার ৯০৯টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৩১ শতাংশ, যা আগেরদিন ২৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ ছিল। দেশে এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৪ দশমিক ২৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৬২ শতাংশ। ঢাকা বিভাগের মধ্যে ঢাকা জেলায় তিন হাজার ১৩৯ জন, ফরিদপুরে ১৯৭ জন, গাজীপুরে ১৬৭ জন, গোপালগঞ্জে ১১৭ জন, মুন্সিগঞ্জে ১৭৭ জন, নারায়ণগঞ্জে ৩১৬ জন, নরসিংদীতে ১৫৯ জন এবং টাঙ্গাইল জেলায় ২২৩ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রাম জেলায় ৯২৫ জন, কক্সবাজারে ২১৫, ফেনীতে ২০০ জন, নোয়াখালীতে ১৭৭ জন, চাঁদপুরে ১৬২ জন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১৪৪ জন এবং কুমিল্লায় ৬০৬ জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। রাজশাহী বিভাগের মধ্যে রাজশাহী জেলায় ২২২ জন, পাবনায় ১৮৬ জন, সিরাজগঞ্জে ১২২ জন, নাটোরে ১২১ জন এবং বগুড়ায় ২৪৬ জন নতুন রোগী মিলেছে। খুলনা বিভাগের যশোরে ১৬৫ জন, খুলনা জেলায় ২৭৪ জন, মেহেরপুরে ১৪৮ জন এবং কুষ্টিয়ায় ৪২১ জনের মধ্যে ধরা পড়েছে সংক্রমণ। এছাড়া অন্য বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে বরিশাল জেলায় ২৬৩ জন, ময়মনসিংহ জেলায় ২০১ জন, সিলেট জেলায় ২১৯ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে গত এক দিনে।
গত এক দিনে ঢাকা বিভাগে যে ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে ২৭ জন ঢাকা জেলার। খুলনা বিভাগে মারা যাওয়া ৫০ জনের মধ্যে ১০ জন কুষ্টিয়া জেলার এবং চট্টগ্রাম বিভাগে মারা যাওয়া ৪৯ জনের মধ্যে ১৫ জন চট্টগ্রাম জেলার বাসিন্দা ছিলেন। এছাড়া রাজশাহী বিভাগে ১২ জন, রংপুর বিভাগে ১২ জন, সিলেট বিভাগে ১১ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৮ জন এবং বরিশাল বিভাগে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। মৃত ২০০ জনের মধ্যে ৬২ জনের বয়স ছিল ৬১ থেকে ৭০ বছরের কোঠায়; ৫১ থেকে ৬০ বছর বয়সী ৪৮ জন, ৭১ থেকে ৮০ বছর বয়সী ৩৫ জন এবং ৪১ থেকে ৫০ বছর বয়সী ২৭ জন মারা গেছেন। ১১১ জন ছিলেন পুরুষ, ৮৯ জন ছিলেন নারী। ১৬৪ জন সরকারি হাসপাতালে, ৩০ জন বেসরকারি হাসপাতালে এবং ৬ জন বাসায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, সারাদেশে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালের বাইরে যেসব হাসপাতালে কোভিডের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে, তার মধ্যে ৭টিতে এখন শয্যার তুলনায় বেশি রোগী ভর্তি আছেন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ৮০ জন অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছেন কিশোরগঞ্জের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালে আইসিইউ ও জেনারেল মিলিয়ে কোভিড রোগীদের জন্য শয্যা আছে মোট ১৫০টি। রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪৬ অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছেন, যেখানে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের জন্য মোট শয্যা আছে ৪৫৪টি। এছাড়া চাঁদপুরের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ১১ জন, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ৭ জন, বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ৫ জন, বরগুনার জেলা সদর হাসপাতালে ১৪ জন এবং ফেনীতে (উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সমূহসহ) ২ জন অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছেন।