স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচন কমিশন (ইসি) আয়োজিত সংলাপে অংশ নিচ্ছে না বিএনপি। এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটির হাইকমান্ড। বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিকরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও তাদের অংশ নেয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। সংলাপের চিঠি পাওয়ার পর দলীয় ফোরাম এবং বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে তারা। আগামীকাল থেকে শুরু হয়ে তিন দিন নিবন্ধিত দলগুলোর সঙ্গে বসবে ইসি। এর আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের সিদ্ধান্ত নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বর্তমান ইসির সঙ্গে সংলাপে বসার প্রশ্নই ওঠে না। আমরা সংলাপে যাব না।
দায়িত্ব নেয়ার পর সাবেক নির্বাচন কমিশনার, সাংবাদিক, পর্যবেক্ষকসহ পেশাজীবীদের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ করে আসছে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নতুন নির্বাচন কমিশন। এবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন তারা। ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কারিগরি দিক যাচাইয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিনিধি ও কারিগরি টিমের সঙ্গে এ বৈঠক হবে।
ইসি সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, নিবন্ধিত ৩৯টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিন দিন বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিদিন ১৩টি দলের সঙ্গে বসবেন তারা। ১৯ জুন থেকে শুরু হবে এ বৈঠক। ওইদিন সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টিসহ ১৩টি দলের সঙ্গে সংলাপ করবে। ২১ জুন বসবে বিএনপিসহ ১৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। সর্বশেষ ২৬ জুন আওয়ামী লীগসহ ১৩টি দলের সঙ্গে বৈঠক করবে ইসি।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন গঠনের শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছে বিএনপি। ইসি গঠনের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির ডাকা সংলাপেও অংশ নেয়নি দলটি। এমনকি রাষ্ট্রপতির গঠিত সার্চ কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করেন নেতারা। সার্চ কমিটি ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নাম চাইলে তাতেও সাড়া দেয়নি। বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দলের অংশগ্রহণ ও মতামত উপেক্ষা করেই গঠন করা হয় নতুন নির্বাচন কমিশন। শুরু থেকেই নতুন কমিশনকে প্রত্যাখ্যান করে এর বিরোধিতা করে আসছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। তাদের দাবি, বর্তমান কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট। তাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন সময়ে সরকারের সুবিধাভোগী এবং সরকার সমর্থক।
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক বলেন, বর্তমান নির্বাচনি ব্যবস্থায় একটি অবাধ ও সুষ্ঠু ভোট করার ক্ষেত্রে কমিশনের তেমন কিছু করার নেই। দলীয় সরকারের ইচ্ছামতোই হবে ভোট। তাই তাদের কাছে এই মুহূর্তে ইসির কর্মকা- মুখ্য নয়। তাদের একমাত্র লক্ষ্য নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার। সেই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করবে। তাই বর্তমান নির্বাচন কমিশনের সংলাপে অংশ নেওয়া মানে তাদের বৈধতা দেওয়া। তাদের কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে আমরা ইসিকে বৈধতা দিতে চাই না। তাই সবকিছু বিবেচনা করে এ সংলাপে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
২০ দলীয় জোটে বিএনপিসহ চারটি দল নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত। দলগুলো হলো-লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ। জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা ২০ দলীয় জোটে থাকলেও আদালতের নির্দেশে দলটির নিবন্ধন স্থগিত রয়েছে। বিএনপির পাশাপাশি ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও ইসির সংলাপে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। শরিক দলগুলো যাতে ইসির সংলাপে না যায় সে ব্যাপারে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে। বিএনপির আহ্বানে শেষ পর্যন্ত তাদের সংলাপে অংশ নেয়ার সম্ভাবনা কম।
জানতে চাইলে জোটের শরিক এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, আমরা এখনো সংলাপের আমন্ত্রণ পাইনি। চিঠি পেলে দলীয় ফোরাম ও বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেব।
প্রায় একই সুরে কথা বলেন জোটের আরেক শরিক বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। তিনি বলেন, সংলাপে যাওয়া কিংবা না যাওয়ার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। আমন্ত্রণ পাওয়ার পর দলীয় ফোরাম ও বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।