স্টাফ রিপোর্টার: করোনার নতুন ধরন ওমিক্রন সংক্রমণ রোধ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ পদে পদেই উপেক্ষিত হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বাজার, মার্কেট, অফিস-আদালত, রাস্তাঘাটে মাস্কবিহীন লোকজন ঘুরতে দেখা গেছে। বৃহস্পতিবার থেকে সরকার ১১ দফা বিধিনিষেধ জারি করেছে কিন্তু এ বিধিনিষেধ মানাতে সংশ্লিষ্টদের সর্বোচ্চ কঠোর হতে দেখা যায়নি। ফলে মাঠের চিত্র পুরো উলটো। প্রায় সর্বত্রই উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। অলিগলি চায়ের দোকান থেকে হোটেল-রেস্টুরেন্ট সর্বত্রই মানুষের ভিড়। লঞ্চ-বাস, ট্রেনেও মাস্কবিহীন যাত্রী চলাচল করতে দেখা গেছে। শুক্রবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা মাঠে থাকলেও তৎপরতা খুব একটা ছিলো না। আজ থেকে লঞ্চ ও বাস যত সিট তত যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে। ট্রেন চলবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে।
পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, আজ (শনিবার) থেকে বিধিনিষেধ মানাতে পুলিশসহ সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা কঠোর অবস্থানে যাবে। বিধিনিষেধ না মানা লোকজনদের জেল-জরিমানাসহ আটক করা হবে।
শুক্রবারও রাস্তাঘাট, বাজার-মার্কেট এমনকি মসজিদেও মাস্কবিহীন লোকজনকে নামাজ পড়তে দেখা গেছে। সরেজমিন দেখা যায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বিভিন্ন সড়ক ও ফুটপাত ঘিরে অস্থায়ী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা গরমের কাপড়সহ বিভিন্ন ধরনের পসরা নিয়ে বসছেন। এসব স্থানে অধিকাংশ লোকজনই মাস্কবিহীন দেখা গেছে। কিছু কিছু এলাকায় বিধিনিষেধ মানাতে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টরা তৎপর থাকলেও সাধারণ মানুষের মধ্যে অসচেতনতাই বেশি দেখা গেছে। কোথাও মোবাইলকোর্ট বসতে দেখা যায়নি। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মো. ফারুক হোসেন জানান, শুক্রবার রাজধানীর লালবাগ বিভাগে পুলিশ প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। ফানুস উড়ানোর বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে করোনা প্রতিরোধে সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ মানতে বিভিন্ন মহল্লা ও মসজিদে প্রচার চালানো হয়েছে। প্রায় ৫০টি থানা এলাকায় সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্য এবং নির্ধারিত টিম করোনা প্রতিরোধে কাজ করছেন। শনিবার থেকে পুলিশ কঠোর অবস্থানে যাবে।
মো. ফারুক হোসেন জানান, রাস্তাঘাট, বাজার-মার্কেট, উন্মুক্ত স্থানে মাস্কবিহীন কাউকে পাওয়া গেলে জেল-জরিমানাসহ আটক করা হবে। শনিবার সকাল থেকেই গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে মোবাইলকোর্ট বসবে। বিধিনিষেধ না মানলে গ্রেফতার পযর্ন্ত করা হবে। মিছিল-সমাবেশ করলে প্রয়োজনে গ্রেফতার করার নির্দেশ রয়েছে। যাত্রী কিংবা চালক-কারও মুখে মাস্ক পরা না থাকলে বাস থেকেই তাদের আটক করা হবে। বিধিনিষেধ মানতে সাধারণ লোকজনের প্রতিও তিনি অনুরোধ জানান।
শুক্রবার বিকালে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, সরকারের দেয়া ১১ দফা বিধিনিষেধ মানাতে পুলিশের সঙ্গে আমরাও কঠোর হচ্ছি। ইতোমধ্যে বাসচালক, হেলপারসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। শনিবার থেকে রাজধানীতে যত সিট তত যাত্রী নিয়ে বাস চলবে। কোনো অবস্থাতেই বাসে অতিরিক্ত যাত্রী উঠাতে দেয়া হবে না। সরকারের দেয়া বিধিনিষেধ মানতে সাধারণ যাত্রীদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
ঢাকা রেলওয়ে বিভাগের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শওকত জামিল মোহসী জানান, শনিবার থেকে আন্তঃনগর ট্রেন অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচল করবে। মোট ৩৫৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করছে। এর মধ্যে ১০৪টি আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট (মোট আসন সংখ্যার অর্ধেক টিকিট) বুধবার থেকে বিক্রি হচ্ছে। নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো যাত্রীকেই মাস্কবিহীন, তাপমাত্রা মাপা ছাড়া স্টেশনে প্রবেশ এবং ট্রেনে উঠতে দেয়া হবে না। এটা নিশ্চিত করতে রেলওয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্কাবস্থায় রয়েছে। মাস্কবিহীন যাত্রীদের স্টেশনে প্রবেশ করতেই দেয়া হবে না।
বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, শনিবার থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব লঞ্চ চলাচল করবে। আমরা সবসময়ই চেষ্টা করছি বিধিনিষেধ অনুযায়ী লঞ্চ চালাতে। কিন্তু যাত্রীদের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। অনেকেই মাস্কবিহীন লঞ্চে উঠে পড়ে। কেউ আবার মাস্ক নিয়ে লঞ্চে উঠে-ভেতরে যাওয়ার পর খুলে ফেলছে। আমরা এ বিষয়ে কঠোর হচ্ছি। মাস্ক পরা না থাকলে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন জানান, শনিবার থেকে বিধিনিষেধ মানাতে সর্বোচ্চ কঠোর হবে সংশ্লিষ্টরা। সিট ও ধারণ ক্ষমতার বাইরে কাউকেই লঞ্চে উঠতে দেয়া হবে না।