স্টাফ রিপোর্টার: আইসিইউ, হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সঙ্কটে দেশের জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোয় বাড়ছে করোনা রোগীর মৃত্যু। ৫ দিন ধরে শতাধিক প্রাণহানি ঘটছে। করোনা আক্রান্ত হয়ে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে অনেকের করতে হচ্ছে প্রাণান্ত চেষ্টা। এ মুমুর্ষু সময়ে মিলছে না আইসিইউ। সীমান্ত ও আশপাশের জেলাগুলোয় ছড়িয়ে পড়েছে সংক্রমণ। কিন্তু এখনো দেশের ৩৭ জেলায় নেই করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউর ব্যবস্থা। এজন্য শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রোগী নিয়ে বিভাগীয় শহরের হাসপাতালে ছুটছেন স্বজনরা। হাসপাতালগুলোয় বাড়ছে ভিড়, রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। আইসিইউর জন্য রোগীর দীর্ঘ সিরিয়াল। একজন মারা গেলে আরেকজনকে বাঁচাতে নেয়া হচ্ছে আইসিইউতে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরসূত্রে জানা যায়, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩৭টিতেই কভিড চিকিৎসার জন্য আইসিইউ নেই। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগের ৫, চট্টগ্রামের ৮, রংপুরের ৬, সিলেটের ২, বরিশালের ৪, খুলনার ৪, রাজশাহীর ৬ ও ময়মনসিংহের দুটি জেলা রয়েছে। সারা দেশে মোট আইসিইউ শয্যা ২ হাজার ৪২০টি। এর মধ্যে এক হাজার ২১৮টি ঢাকা মহানগরীতে এবং ৫৯টি চট্টগ্রাম মহানগরে। বাকি এক হাজার ১৪৩টি আইসিইউ শয্যা রয়েছে ২৫ জেলায়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম বাদে বিভিন্ন জেলায় ‘হাই ফ্লো নেজাল ক্যানোলা’-সংবলিত আইসিইউ সমতুল্য শয্যা আছে এক হাজার ৬০৩টি। ১১ জেলায় সে রকম শয্যাও নেই।
খুলনা বিভাগের ঝিনাইদহে করোনা সংক্রমণ, মৃত্যু বাড়লেও সেখানে মুমূর্মু রোগীর চিকিৎসায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) নেই। ফলে এ জেলার রোগীদের আইসিইউর প্রয়োজনে খুলনা ও যশোরে নেয়া হয়। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয় জানিয়েছে, বিভাগের ১০ জেলায় মোট ৪৯টি আইসিইউ শয্যা আছে। কিন্তু রোগীর চাপে হাসপাতালে গেলেই আইসিইউ শয্যা পাওয়া যায় না। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে আইসিইউ শয্যা পেতে সেখানে ভর্তি একজনের মৃত্যুর অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে রোগীর স্বজনদের। এ অবস্থা সামলাতে খুলনা মেডিকেলে অতিরিক্ত ২০, কুষ্টিয়ায় ৬, সাতক্ষীরায় ১২ ও যশোরে ২০টি হাই ডিফেন্স ইউনিট (এইচডিইউ) চালু করা হয়েছে।
খুলনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের সমন্বয়কারী ডা. মো. খসরুল আলম জানান, হাসপাতালের নতুন অক্সিজেন প্লান্টটি দীর্ঘদিনেও চালু না হওয়ায় অক্সিজেন সরবরাহে চাপ বাড়ছে। করোনা রোগীর প্রায় প্রত্যেকের অক্সিজেন সাপোর্ট প্রয়োজন হচ্ছে ও হঠাৎ করে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. রাশিদা সুলতানা বলেন, ‘পরিস্থিতি সামলাতে নড়াইল, কুষ্টিয়া, বাগেরহাট, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুরায় আইসিইউ সেবা চালু করা হয়েছে। খুলনা ও যশোরে আইসিইউর সঙ্গে এইচডিইউর সক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।’
জানা যায়, বিভাগীয় শহর হওয়ায় খুলনা ডেডিকেটেট হাসপাতালে করোনা রোগীর চাপ তুলনামূলক বেশি। ফলে এখানে আইসিইউ সক্ষমতা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ জানান, খুলনা ডেডিকেটেট হাসপাতালে লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টটি স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় হাসপাতালের পুরনো লিকুইড অক্সিজেন প্লান্টের সক্ষমতা দ্বিগুণ বাড়িয়ে করোনা রোগীর জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে।