স্টাফ রিপোর্টার: ‘হে নতুুন/দেখা দিক আর-বার জন্মের প্রথম শুভক্ষণ। তোমার প্রকাশ হোক কুহেলিকা করি উদ্ঘাটন/সূর্যের মতন।’ নিজের জন্মদিন উপলক্ষে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দে এভাবেই নতুনের ডাক দিয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বছর ঘুরে আবার এসেছে সেই দিন। আজ শুক্রবার, পঁচিশে বৈশাখ, কবিগুরুর ১৫৯তম জন্মজয়ন্তী। কবির ভাষায়, ‘আকাশভরা সূর্যতারা/ বিশ্বভরা প্রাণ…’। সেই বিশ্বভরা প্রাণের উচ্ছ্বাসে গভীর শ্রদ্ধায় আজ বাঙালি স্মরণ করবে কবিগুরুকে তারই লেখা গানে, কবিতায়, নাটকে…। নতুন চিন্তনে ও হৃদয়ের সুকুমার অনুভূতির প্রকাশে অনূভব করবে তার প্রাসঙ্গিকতা। তবে এবার করোনাভাইরাসের প্রার্দুভারের কারণে কবি গুরুর জন্মদিনের নেই কোনো আনুষ্ঠানিকতা। ঘরের মধ্যে থেকেই কবিকে স্মরণ করবেন তার ভক্ত ও শুভানুধারীরা।
১২৬৮ বঙ্গাব্দের (১৮৬১ খ্রিস্টাব্দ) পঁচিশে বৈশাখ ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকোর বিখ্যাত ঠাকুর পরিবারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে প্রতিবছর জাতীয় পর্যায়ে কবির স্মৃতিধন্য কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নওগাঁর পতিসর ও খুলনার দক্ষিণ ডিহি-পিঠাভোগে থাকে সরকারি আয়োজনে নানা অনুষ্ঠান। এছাড়াও রাজধানীতে সরকারি উদ্যোগ ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করে। তবে চলতি বছর করোনাভাইরাসের কারণে জন্মবার্ষিকীর সব অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে। বরীন্দ্রসরোবরে নেই কোনো অনুষ্ঠান। তবে দৈনিক পত্রিকাগুলো সীমিত পরিসরে প্রকাশ করেছে বিশেষ নিবন্ধ। সরকারি-বেসরকারি চ্যানেলগুলো প্রচার করবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।
বাঙালির বিস্ময়কর এই প্রতিভার সৃষ্টি বহুমাত্রিক। তার রচনা বিপুল ও বিচিত্র। কবিতা, উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, নাটক, ভ্রমণকাহিনি, সঙ্গীত, শিশুসাহিত্য-নানা শাখায় তার অবদান অতুলনীয়। চিত্রকলাকেও তিনি সমৃদ্ধ করে গেছেন। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তার অবদান যুগান্তকারী।
১৯১৩ সালে ‘গীতাঞ্জলি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি। তার গান ‘আমার সোনার বাংলা’ আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার রচনা বাঙালিকে প্রেরণা জুগিয়েছে।
বাণী: কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে পৃথক বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, রবীন্দ্রনাথ বাঙালির চিন্তা-চেতনা ও মননের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছেন। তিনি বলেন, ‘বাঙালির সুখ-দুঃখ, আবেগ-ভালোবাসা, আশা-আকাক্সক্ষাসহ এমন কোনো অনুভূতি নেই, যা রবীন্দ্রনাথ স্পর্শ করেননি।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ রচিত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ আমাদের জাতীয় সংগীত। এই গান জাতীয় ঐক্য ও সম্প্রীতির স্মারক। যেকোনো দুর্যোগ-সংকটে ও আনন্দ-বেদনায় রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যসম্ভার শক্তি ও সাহস জোগায়। তার সাহিত্যপাঠে আমরা আনন্দিত হই, আন্দোলিত হই।’
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির ব্যক্তি ও সমাজজীবনের উজ্জ্বল বাতিঘর। আমি তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।’