এখনো হদিস নেই ১২ আসামির

 

স্টাফ রিপোর্টার: বহুল আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ১৯ বছর পেরিয়ে গেলেও হদিস নেই ১২ আসামির। এ তালিকার কেবল চারজনের নাম ঝুলছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের রেড নোটিসে। বাকিদের নাম কেন তালিকায় দেয়া হচ্ছে না, এ বিষয়ে সদুত্তর নেই সংশ্লিষ্টদের। দীর্ঘ এ সময়ে কেবল তারেক রহমান ছাড়া কারও ব্যাপারে অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত না হতে পারা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। আবার রেড নোটিসে নাম থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী রহস্যেরও কোনো কূলকিনারা করতে পারেনি সরকার। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডিকে দায়িত্ব দিলেও গতকাল পর্যন্ত এর কোনো অগ্রগতি ছিল না। ২০০৪ সালের সেই গ্রেনেড হামলায় নিহত হয়েছিলেন ২৪ জন। আহত হয়েছেন অন্তত কয়েকশ। অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তখনকার বিরোধীদলীয় নেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেড় যুগ আগের সেই মর্মান্তিক ঘটনার মামলা নিম্ন আদালতে শেষ হলেও উচ্চ আদালতে এখনো বিচারাধীন। এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৫২ আসামির মধ্যে কারাগারে আটক আছেন ৩১ জন। অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তিন আসামির। করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত বছর ১৫ আগস্ট মারা গেছেন কারাবন্দি ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুর রহিম। ৪ নভেম্বর সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে মারা যান মাওলানা আবদুস সালাম। জানা গেছে, অতীতে ছয়জনের নাম ইন্টারপোলের রেড নোটিসে থাকলেও বর্তমানে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দলটির সাবেক সংসদ সদস্য শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের নাম সরানো হয়েছে। রাতুল আহমেদ বাবুর নাম থাকলেও ছবি নেই। তবে হারিছ চৌধুরী কিছুদিন আগে ঢাকায় অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়ে একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও সে বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য আরও সময় প্রয়োজন। এ বিষয়ে কাজ চলছে উল্লেখ করে কয়েক দফা পুলিশ সদর দফতরের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোতে (এনসিবি) চিঠি দিয়েছে সিআইডি। এ বিষয়ে কথা হয় পুলিশ সদর দফতরের উপমহাপরিদর্শক (অপারেশন্স) আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, পলাতক আসামিদের অবস্থান শনাক্ত এবং তাদের গ্রেফতার করতে আমাদের প্রচেষ্টার কোনো কমতি নেই। এ জন্য আমরা ইন্টারপোল সদর দফতরের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। চারজনের বাইরে বাকিদের নাম নেই কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, দেখুন, আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টাটাই করে যাচ্ছি। তবে পুলিশ সদর দফতর সূত্র বলছে, পলাতক ১৩ জনের মধ্যে কেবল ছয়জনের নামসহ তাদের তথ্য পাঠানো হয়েছিল ইন্টারপোল সদর দফতরে। তখন ছয়জনের নাম রেড নোটিসে ঝোলানো হলেও পরবর্তী সময়ে তারেক রহমান ও শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের নাম রেড নোটিস থেকে তুলে ফেলা হয়। তারা ইন্টারপোলকে বুঝিয়েছেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের নাম রেড নোটিসে ওঠানো হয়েছে। তারেক রহমানের রেড নোটিস জারি হয়েছিল ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল, কায়কোবাদের একই বছরের ১২ নভেম্বর। তাজউদ্দিনের রেড নোটিস জারি হয় ২০০৮ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, হারিছ চৌধুরীর ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর এবং রাতুলের নোটিস জারি হয় ২০১৭ সালের ১৩  ফেব্রুয়ারি। পলাতকরা কে কোথায় : ১৯ বছর ধরে পলাতক থাকা ১৩ জন হলেন তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন আহমদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, জঙ্গিনেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মোরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, জাহাঙ্গীর আলম বদর ও রাতুল আহমেদ বাবু। এর বাইরে পুলিশের সাবেক তিন তিন আইজিপি খোদা বক্স, আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক, সাবেক ডিআইজি খান সাঈদ হাসান, সাবেক ডিসি ওবায়দুল হক খান ইতোমধ্যে সাজা খেটে বের হয়ে গেছেন। তারেক রহমান এক দশকের বেশি সময় ধরে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন সপরিবার। ২১ আগস্ট ছাড়াও মুদ্রা পাচারের এক মামলায় সাত বছর এবং জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছর, জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য গোপনের জন্য ৯ বছরের দ-প্রাপ্ত আসামি তিনি। পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেছেন, পলাতকরা দেশের বাইরে রয়েছেন, এটা নিশ্চিত। কিন্তু কে কোথায় আছেন, সে বিষয়ে কিছু ধারণা থাকলেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, তাজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকা বা পাকিস্তানে আর রাতুল রয়েছেন দক্ষিণ অফ্রিকায়। কায়কোবাদ মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে, হানিফ থাইল্যান্ড বা মালয়েশিয়ায়, সাবেক সেনা কর্মকর্তা এ টি এম আমিন যুক্তরাষ্ট্র বা দুবাইয়ে, সাইফুল জোয়ারদার কানাডায়, জঙ্গি আনিসুল মুরসালিন ও মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে রয়েছেন। গত বছর ১৪ এপ্রিল যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি মুফতি শফিকুর রহমানকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে এবং ২৫ মে রাতে মুফতি আবদুল হাইকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। ওই হামলায় ২৪ জন নিহত এবং কয়েকশ আহত হন। প্রাণে বেঁচে গেলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী (সাবেক বিরোধীদলীয় নেত্রী) শেখ হাসিনার শ্রবণশক্তি। এ ঘটনার পর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জঙ্গিনেতা মুফতি আবদুল হান্নানসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে মামলার অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। এর দুই বছর পর ২০০৯ সালে মামলার অধিকতর তদন্তের আদেশ হলে আরও দুই বছর সময় নিয়ে সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। সিআইডির সাবেক অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক আবদুল কাহার আকন্দ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সম্পূরক অভিযোগপত্রে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেকসহ ৩০ জন আসামির তালিকায় যোগ হন। সব মিলিয়ে আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে। যেসব আসামি পলাতক, তাদের মধ্যে যারা বিদেশে রয়েছেন তাদের অবস্থান শনাক্ত করে দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্টরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।’

Comments (0)
Add Comment