প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা : আগের কাজ শেষ না হলে নতুন কোনো কাজ পাবে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান
স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্মাণ প্রকল্প দেরি হওয়ার একটি বড় কারণ হলো একই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনেকগুলো কাজ একসঙ্গে করে থাকে। তাই একটি প্রকল্পে কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আরেকটি প্রকল্পের কাজ একই প্রতিষ্ঠানকে না দেয়ার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ নির্দেশনা দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মুষ্টিমেয় প্রতিষ্ঠান সরকারি নির্মাণকাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কে কতগুলো কাজ পেয়েছে, কাজ সময়মতো শেষ করেছে কি না, কোন সময় শেষ করেছে, এসবের একটি তালিকা সব মন্ত্রণালয় তৈরি করবে এবং তা প্রকাশ করতে হবে। মুষ্টিমেয় প্রতিষ্ঠানের হাতে যেনো প্রকল্পের কাজ না থাকে।
গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী, একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভা শেষে পরিকল্পনা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আসাদুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসনগুলো সাংবাদিকদের অবহিত করেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, করোনা ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে আমাদের ভালো ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু ভ্যাকসিন আমদানি নয়, এর সরবরাহ, বিতরণসহ সব পর্যায়ে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ আমাদের বেশি সংখ্যক মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। ভ্যাকসিন দিতে যথাযথ প্রশিক্ষণ নেয়ার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে এই ভ্যাকসিন দেওয়ার পর যে বর্জ্য থাকবে সেগুলোকে যথাযথ ব্যবস্থাও নিতে হবে।
একনেক সভায় মোট সাতটি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে, এর মধ্যে দুইটি সংশোধিত। নতুন প্রকল্পের বরাদ্দ এবং সংশোধিত প্রকল্পের বাড়তি বরাদ্দ মিলিয়ে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ৭০২ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন (জিওবি) ৬ হাজার ৪৫৯ কোটি ২৭ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক উৎস হতে প্রাপ্ত ঋণ ৪ হাজার ২৪২ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। সভায় ১১৬ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে প্রাণিপুষ্টির উন্নয়নে উন্নত জাতের ঘাস চাষ সম্প্রসারণ ও লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি সারা দেশে ৪৭৫টি উপজেলার ৪ হাজার ৪৮৫টি ইউনিয়নে বাস্তবায়ন করা হবে।
সভায় ২ হাজার ১৮০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীনে ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোর অ্যান্ড রিজিওনাল এনহান্সমেন্ট প্রোগ্রাম ফেজ-১: রুরাল কানেকটিভিটি, মার্কেট অ্যান্ড লজিস্টিক ইনফ্রাস্ট্রাকচার শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রকল্পটি চলতি বছর শুরু হয়ে ২০২৫ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়ন করবে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)। প্রকল্পটির মাধ্যমে যশোর, মাগুরা, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহ জেলার ১৮টি উপজেলায় গ্রামীণ যোগাযোগব্যবস্থা উন্নয়ন, কৃষিপণ্য বিপণন, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণের ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। প্রকল্পটিতে বিশ্বব্যাংকের ঋণ ১ হাজার ৫৩৭ কোটি টাকা। সভায় ৪ হাজার ১৮৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর কর্তৃক উইকেয়ার ফেজ-১: ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে বিশ্বব্যাংক হতে ঋণ নেয়া হবে ২ হাজার ৭০৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটির মাধ্যমে ওয়েস্টার্ন ইকোনমিক করিডোরের ঝিনাইদহ-যশোর অংশের ৪৮ দশমিক ৫০ কিলোমিটার সড়ক উভয় পাশে সার্ভিস লেনসহ ছয় লেনে উন্নীত করা হবে। সেই সঙ্গে স্মার্ট হাইওয়ে নির্মাণের লক্ষ্যে অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল এবং সড়ক ব্যবস্থাপনার জন্য ইন্টেলিজেন্ট ট্রান্সপোর্ট সিস্টেম স্থাপন করা হবে।
সড়কের প্রকল্পের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য তুলে ধরে জ্যেষ্ঠ সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবারও বলেছেন, রাস্তা টেকসই এবং ভালো রাখার জন্য সড়কের পাশে জলাধার, বৃষ্টির পানি নামার ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তার পাশে গাছ লাগাতে হবে। বিশেষত হাইওয়ের পাশে চালকদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী।
সভায় বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের অধীনে ১ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) (২য় পর্যায়) প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। সভায় জানানো হয়েছে, এ প্রকল্পের মাধ্যমে স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র আরও সম্প্রসারণ করা হবে। এর ফলে ১৪ বছরের ওপরের বয়সি সকলে এই পরিচয়পত্র পাবেন। প্রাথমিক অবস্থায় ৪০টি দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি স্মার্ট আইডি সুবিধার আওতায় আসবেন। পর্যায়ক্রমে এর আওতা আরো বাড়ানো হবে। তাছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবার বিষয়টি আরো সমম্বিতভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।
সভায় ১ হাজার ৩৩৩ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারে খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উদ্যোগে সেনাবাহিনী প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে জলবায়ু উদ্বাস্তু এবং কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণের কারণে ভূমিহীন ৩ হাজার ৮০৮টি পরিবারের পুনর্বাসন করা হবে।
সভায় কৃষি মন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ হাসান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীসহ একনেক সংশ্লিষ্টরা সভা কার্যক্রমে অংশ নেন।