ইসি গঠন আইন সংসদে : প্রতি পদে দুজনের নাম সুপারিশ করবে সার্চ কমিটি

তোলা যাবে না প্রশ্ন : আইন হলে বিএনপি আর ভোট চুরি করতে পারবে না; আইনমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার: দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে সংবিধানের নির্দেশনার আলোকে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসাবে রোববার জাতীয় সংসদে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ বিল-২০২২’ উত্থাপন করা হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এটি অধিবেশনে উত্থাপন করেন। পরে বিলটি সাত দিনের মধ্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জাতীয় সংসদে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য তার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। এর আগে আইনটিকে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে এটি উত্থাপনের বিরোধিতা করেন বিএনপির সংসদ-সদস্য মো. হারুনুর রশীদ। যদিও তার এই আপত্তি কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
নতুন এই বিলে সার্চ কমিটির মাধ্যমে এর আগে গঠিত সব নির্বাচন কমিশনের (ইসি) বৈধতা দেয়ার পাশাপাশি কমিটির কাজ নিয়ে আদালতে কোনো ধরনের প্রশ্ন তোলার সুযোগ বন্ধ করা হয়েছে। ২০১২ ও ২০১৭ সালে যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতি ইসি নিয়োগ করেছিলেন, সেই প্রক্রিয়াটিই আইনের অধীনে আনা হচ্ছে এই বিলের মাধ্যমে। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনার (ইসি) পদে যোগ্যতা-অযোগ্যতাও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার ৫০ বছরের মাথায় আইনের আলোকে ইসি গঠনের পথে হাঁটছে দেশ।
আইনটি প্রণয়নের উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বিলে বলেন, ‘প্রস্তাবিত বিলটি আইনে পরিণত হলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদান স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ হবে, গণতন্ত্র সুসংহত ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে এবং জনস্বার্থ সমুন্নত হবে মর্মে আশা করা যায়।’ বিলে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনার নিয়োগদানের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ইতঃপূর্বে গঠিত অনুসন্ধান কমিটির ও তৎকর্তৃক সম্পাদিত কার্যবলি এবং উক্ত অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগ বৈধ ছিলো বলিয়া গণ্য হইবে এবং উক্ত বিষয়ে কোনো আদালতে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইবে না।’
কী হবে সার্চ কমিটির কাজ : খসড়া আইনে সার্চ কমিটির (অনুসন্ধান কমিটি) কাজ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ কমিটি স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার নীতি অনুসরণ করে দায়িত্ব পালন করবে। আইনে বেঁধে দেয়া যোগ্যতা, অযোগ্যতা অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও সুনাম বিবেচনা করে সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে সুপারিশ করবে। এ অনুসন্ধান কমিটি সিইসি ও কমিশনারদের প্রতি পদের জন্য দুইজন করে ব্যক্তির নাম সুপারিশ করবে। কমিটি গঠনের ১০ কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে দেবে বলে খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে। বিলে বলা আছে, সার্চ কমিটি সিইসি এবং নির্বাচন কমিশনার পদে যোগ্যদের অনুসন্ধানের জন্য রাজনৈতিক দল এবং পেশাজীবী সংগঠনের কাছ থেকে নাম আহ্বান করতে পারবে।
কারা থাকবেন সার্চ কমিটিতে : বিলে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করবেন। যার সভাপতি হবেন প্রধান বিচারপতি মনোনীত আপিল বিভাগের একজন বিচারক। সদস্য হিসাবে থাকবেন প্রধান বিচারপতির মনোনীত হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারক, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রাষ্ট্রপতি মনোনীত দুইজন বিশিষ্ট নাগরিক। তিনজন সদস্যের উপস্থিতিতে কমিটির সভার কোরাম হবে বলে প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই কমিটির কাজে সাচিবিক সহায়তা দেবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
সিইসি ও কমিশনারদের যোগ্যতা : সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার পদে কাউকে সুপারিশের ক্ষেত্রে তিনটি যোগ্যতা বিবেচনায় আনতে হবে বলে বিলে বলা হয়েছে। তাকে বাংলাদেশের নাগরিক হতে হবে। ন্যূনতম ৫০ বছর বয়স হতে হবে। কোনো গুরুত্বপূর্ণ সরকারি, বিচার বিভাগীয়, আধা সরকারি বা বেসরকারি পদে তার অন্যূন ২০ বছর কাজের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।
সিইসি ও কমিশনারদের অযোগ্যতা : প্রস্তাবিত আইনে সিইসি ও কমিশনার পদের জন্য ছয়টি অযোগ্যতার কথা বলা হয়েছে। আদালত অপ্রকৃতিস্থ ঘোষণা করলে। দেউলিয়া হওয়ার পর দায় থেকে অব্যাহতি না পেলে। কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব নিলে কিংবা বিদেশি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা বা স্বীকার করলে। নৈতিক স্খলনজনিত ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদ-ে দ-িত হলে। ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনালস) অ্যাক্ট-১৯৭৩ বা বাংলাদেশ কোলাবরেটরস (স্পেশাল ট্রাইব্যুনালস) অর্ডার-১৯৭২-এর অধীনে কোনো অপরাধের জন্য দ-িত হলে। আইনের দ্বারা পদাধিকারীকে অযোগ্য ঘোষণা করছে না, এমন পদ ব্যতীত প্রজাতন্ত্রের কর্মে লাভজনক পদে অধিষ্ঠিত থাকলে।
বাংলাদেশের সংবিধানে বলা আছে, সাংবিধানিক সংস্থা ইসিতে কমিশনার নিয়োগের এখতিয়ার রাষ্ট্রপতির। আর তা একটি আইনের অধীনে হবে। দীর্ঘ ৫০ বছরেও এই আইনটি প্রণীত না হওয়ায় প্রতিবারই ইসি গঠনের সময় শুরু হয় বিতর্ক। আর এই বিতর্ক এড়াতে প্রথমবারের মতো ২০১২ সালে নতুন কমিশন নিয়োগের সময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান সার্চ কমিটি নামে একটি মধ্যস্থ ফোরাম তৈরি করেন, যেটি নিয়েও পরে বিতর্ক হয়। এ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে একজন বিচারপতির নেতৃত্বে বিশিষ্ট কয়েকজন নাগরিককে নিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করেন। ওই সার্চ কমিটি সিইসি ও ইসি হতে যোগ্যদের নামের একটি তালিকা তৈরি করেন। সেই তালিকা থেকে একজন সিইসিসহ অনধিক পাঁচজন কমিশনার নিয়োগ দেন।
এরপর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ২০১৭ সালে সেই পদ্ধতিই অনুসরণ করেছিলেন। এবারও একই পদ্ধতিতে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। কিন্তু সংলাপে অংশ নেয়া ২৫টি রাজনৈতিক দলের প্রায় সবকটি ইসি গঠনে স্থায়ী সমাধান হিসাবে সংবিধানের আলোকে আইন প্রণয়নের ওপর জোর দেয়। আলোচনায় রাষ্ট্রপতিও এ বিষয়ে সম্মত হন বলে দলগুলোর নেতারা জানান। বিএনপিসহ সাতটি দল অবশ্য এবারের রাষ্ট্রপতির এই সংলাপে অংশ নেয়নি।
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠন এবং সার্চ কমিটি নিয়ে অনেক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সংবিধানের ১১৮(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং নির্বাচন কমিশনার (ইসি) নিয়োগের জন্য বিলটি আনা হচ্ছে। কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের বিদায়লগ্নে আকস্মিকভাবে নতুন আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর এখন সংসদে পাশের উদ্যোগ নেয়া হলো সরকারের পক্ষ থেকে।
যদিও আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক গত ডিসেম্বরে ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির সংলাপ শুরুর আগে বলেছিলেন, ‘সময়ের স্বল্পতার কারণে’ এবার আইন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সংলাপে অংশ নেয়া সব দলই আইন করার পক্ষে জোরালোভাবে দাবি জানালে পরিস্থিতি পালটে যায়। গত সোমবার প্রস্তাবিত আইনটির খসড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়। এর পরই চলতি অধিবেশনেই বিলটি উত্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১৪ ফেব্রুয়ারি কেএম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগেই নতুন কমিশন গঠন করতে হবে রাষ্ট্রপতিকে। এক্ষেত্রে আইনটি জাতীয় সংসদে উত্থাপনের পর এটি পাশ করে গেজেট প্রকাশের জন্য হাতে সময় রয়েছে চার সপ্তাহ। তবে আইনটি পাশের আগে সব অংশীজনের মতামত নেওয়ার দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
সংসদে আপত্তি, আইনমন্ত্রীর জবাব : বিলটি জাতীয় সংসদে উত্থাপনের বিরোধিতা করে বিএনপির সংসদ-সদস্য মো. হারুনুর রশীদ বলেন, যে বিলটি আইনমন্ত্রী এনেছেন, তা জনগণের প্রত্যাশা, রাজনৈতিক দলগুলোর এবং সুশীলসমাজের যে প্রত্যাশা, তার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। তিনি বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার জন্য একটি আইন প্রণয়নের আহ্বান জানিয়ে আসছিলাম। কিন্তু তা গ্রাহ্য করা হলো না। আজ যে আইনটি তোলা হয়েছে, তাতে ধরে নিতে পারি ইতঃপূর্বে সার্চ কমিটির মাধ্যমে গঠিত দুটি কমিশনকে বৈধতা দেয়ার জন্য আনা হয়েছে। এখানে নতুনত্ব কিছু নেই। ইতঃপূর্বে যে কমিশন গঠিত হয়েছে, ঠিক তার অনুরূপ বিল এখানে তোলা হয়েছে। তিনি বলেন, এই আইনটি প্রশ্নবিদ্ধ। এই আইন দিয়ে বর্তমান সংকটের নিরসন হবে না। সংকট থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব না। আমি দাবি করব-আইনটি প্রত্যাহার করা হোক।
বিএনপির এই সংসদ-সদস্য বলেন, আইনমন্ত্রী কিছুদিন আগে বলেছিলেন এরকম একটি আইন প্রণয়নের জন্য রাজনৈতিক দল ও সুধী সমাজের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তাহলে এখন তিনি কীভাবে বিলটি সংসদে তুললেন। বক্তব্য দেয়ার সময় সংসদে উত্থাপিত বিল এবং সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ থেকে পড়ে শোনান তিনি।
জবাব দিতে উঠে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হকও খসড়া আইনের বিভিন্ন ধারা পড়ে ব্যাখ্যা করেন। আইনমন্ত্রী কথা বলার সময় তার সামনের আসন থেকে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদনেতা শেখ হাসিনা অ্যাডভোকেট আনিসুল হককে বিভিন্ন বিষয় মনে করিয়ে দেন। মন্ত্রী বলেন, ‘প্রথম কথা হচ্ছে, ওনাদের (বিএনপি) ইতিহাস বলতে হয়। নিজেরা নির্বাচনে জয়লাভের জন্য যতরকম কারসাজি-বিচারপতি আজিজ সাহেবকে দিয়ে কমিশন গঠন, ১ কোটি ৩০ লাখ ভুয়া ভোটার তৈরি, একজন ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করার জন্য বিচারকদের বয়স ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৬৭ করেছিলেন। এসব করতে গিয়ে তারা কার সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন? এখানে (সংসদে) বসে নিজেরা নিজেরা করে ফেলেছিলেন। ওনারা কারও সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন মনে করেননি। কারচুপি করে ক্ষমতায় আসার জন্য তারা নিরবচ্ছিন্ন ইলেকশন করতে চেয়েছিলেন। মানে কারচুপি করে ক্ষমতায় আসার জন্য।’
২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারির ভোটের তপশিলের প্রসঙ্গ টেনে মন্ত্রী বলেন, ‘ওনারা ২২ জানুয়ারি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি আরও বলেন, সংবিধানে বলা আছে, নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য আইন করতে হবে। আমরা সেই আইন করেছি। ওনারা বুঝে বলুক না বুঝে বলুক, বলছেন এটা সার্চ কমিটির আইন। ওনারা বলছেন আইনটা আমরা ঠিক করিনি। ওনাদের সঙ্গে আলোচনা করিনি। মন্ত্রী বলেন, ‘সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন নামের এনজিও আমার কাছে একটি ড্রাফট দিয়েছিল। তখন আমি বলেছিলাম, কোভিড সিচুয়েশনের জন্য আইনটি এই সংসদে পাশ করা করা সম্ভব হবে না, অন্যকিছু না, কোভিড সিচুয়েশনের জন্য। ওনারা শুনলেন না।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ২০১৭ সালেই বলেছিলেন এই আইন করা প্রয়োজন। ওনারা বলেছিলেন অর্ডিন্যান্স করে আইন করে দিতে হবে। আমি বলেছিলাম, এই আইন সংসদে না এনে করা ঠিক হবে না।
সবার সঙ্গে আলোচনা করে তারপরে সংসদে করা উচিত।’ সার্চ কমিটি গঠনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের উদ্যোগের প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বলেন, তখন একটা কনসেনশাস হয়েছিল। তখন গেজেট হলো। নির্বাচন কমিশন গঠন হলো। পরেরবার আবার একইভাবে হলো। এটা আইন ছিল না, কিন্তু এটা ছিল ফোর্স অব ল। কারণ এটি রাষ্ট্রপ্রধান করেছিলেন। রাষ্ট্রপ্রধানের চেয়ে বড় কেউ না। তখন বিএনপির আপত্তি ছিল না।’
খসড়া আইন থেকে সার্চ কমিটির বিধান তুলে ধরে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘উইদাউট প্রেজুডিস বলছি, যদি কোনো নির্বাচন কমিশনার কোনো অন্যায় করে থাকেন, তাহলে কি তাকে এই আইনের নয় দফায় ইনডেমনিটি দেয়া হয়েছে?’ তিনি আরও বলেন, ‘মহামান্য রাষ্ট্রপতি যে দুবার সার্চ কমিটি করেছেন, সেটাও আইনসিদ্ধ ছিল। সেটাও আইনের আওতায় আনা হলো। এটা কনসেনশাসের ভিত্তিতে করা হয়েছিল। ওনাদের কথা হচ্ছে, যা করেন করেন, তালগাছ আমার। কিন্তু বুঝতে হবে-তালগাছ ওনাদের না। তালগাছ জনগণের। ওনারা না বুঝে বলছেন। আইনটা যখন করে ফেললাম, পালের হাওয়া চলে গেছে। সেজন্য এখন কী বলবেন। এইটা নাই, ওইটা আছে। ওইটা নাই, এসব বলে নাচগান শুরু করে দিয়েছেন।’
আইনমন্ত্রী বলেন, ‘ওনারা চান ওনাদের পকেটে যে নাম, সেই নাম দিয়ে ইসি গঠন হবে। সেটা হবে না। এটা বাংলাদেশ। জনগণ ঠিক করবে। কোনো দল অগ্রাধিকার পাবে না।’
আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের সময় বিরোধী দলের আসন থেকে মো. হারুনুর রশীদ কথা বলা শুরু করলে অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেন, ‘ওনারা (বিএনপি) না শুনলে শিখবেন কীভাবে। বুঝবেন তো না, শিখবেন কী?’
সার্চ কমিটির গঠন খসড়া আইন থেকে তুলে ধরে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘চারজন সাংবিধানিক পদের অধিকারী। মহামান্য রাষ্ট্রপতি ইচ্ছা করলেও চাকরিচ্যুত করতে পারবেন না। মহামান্য রাষ্ট্রপতি পছন্দ না করলেও দশজনের ভেতরে তাকে থাকতে হবে।’ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অনিয়মের বিচারের জন্য মো. হারুনুর রশীদের দাবির জবাব দিতে গিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, আগে আজিজ কমিশনের বিচার করতে হবে। ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটারের বিচার করতে হবে। এত তাড়াতাড়ি তিনতলায় ওঠা যাবে না। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের উদাহরণ তুলে আইনমন্ত্রী বলেন, কোথাও এরকম স্বচ্ছ ইসি গঠনের নিয়ম নেই। এ আইনের মধ্যে ইসি গঠন হলে বিএনপি ভোট চুরি করতে পারবে না। সেজন্য তাদের গাত্রদাহ শুরু হয়েছে।

 

Comments (0)
Add Comment