দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার পিতা বীর মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখের ওপর হামলা চালিয়েছে ইউএনওর কার্যালয়েরই এক মালি। তিনি প্রাথমিকভাবে হামলার ঘটনার দায় স্বীকার করেছেন। শনিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য। এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন স্থানীয় যুবলীগ নেতা আসাদুল হক ও তার দুই সহযোগী নবীরুল ইসলাম ও সান্টু কুমার বিশ্বাস। তখন র্যাব দাবি করেছিল, গ্রেপ্তার আসাদুল জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনার মূল আসামি তিনি। পূর্বপরিকল্পিতভাবে চুরির করার উদ্দেশ্যে তারা ইউএনওর বাসায় ঢুকেছিলেন।
তবে শনিবারের প্রেস ব্রিফিংয়ে পুলিশ দাবি করছে, আসাদুল ওই ঘটনায় জড়িত ছিলেন না। পুলিশের এই বক্তব্যে ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনার তদন্তে নতুন মোড় নিল।প্রেস ব্রিফিংয়ে দিনাজপুরে পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শচীন চাকমা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাফিজুর রহমান, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি ইমাম জাফরসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ১১ সেপ্টেম্বর রবিউলকে আটক করা হয়। তিনি বিরল উপজেলার বিজোড়া ইউনিয়নের বিজোড়া গ্রামের খতিব উদ্দীনের ছেলে। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের মালি পদে নিযুক্ত ছিলেন। ৫০ হাজার টাকা চুরি করার অপরাধে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ডিআইজি দেবদাস ভট্টাচার্য জানান, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলার ঘটনার পর থেকে পুলিশ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় রবিউল ইসলাম নামে সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সরকারি কর্মচারীকে আমরা আটক করেছি। তার দেয়া তথ্যে মই ও হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া তার বক্তব্য ও জব্দ করা সিসিটিভ ফুটেজের সাথে মিল পাওয়া গেছে। আমরা অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিজ্ঞ আদালতে তার রিমান্ড আবেদন করব।
আসাদুল র্যাবের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছিল এ ঘটনার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত, এখন অন্য বিষয় সামনে এলো- আমরা কোন দিক দেখবো এমন প্রশ্নে ডিআইজি বলেন, আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। র্যাবের কর্মকর্তা যিনি তিনি অত্যন্ত একজন চৌকস। তাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। আসাদুল হয়তো র্যাবকে মিসগাইড করেছে। আমরা সবগুলো বিষয় দেখছি তদন্ত করে। ঘটনাটি চুরি নিয়ে নাকি অন্য কিছু এমন প্রশ্নের জবাবে দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, আমি আর কোন মন্তব্য করবো না।
প্রেস ব্রিফিং শেষে আটক রবিউল ও এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে চিহ্নিত আসাদুলকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এই মামলার প্রধান আসামি আসাদুল ইসলাম ৭ দিন ধরে রিমান্ডে ছিলেন। শনিবার পুলিশের রিমান্ড শেষে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এছাড়াও ইউএনওর বাসভবনের নৈশ্যপ্রহরী নাদিম হোসেন পলাশকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এই মামলায় রবিউল ইসলামকে আটক করে সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে।
গত ২ সেপ্টেম্বর রাতে ইউএনওর সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে ভেতরে ঢুকে ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলী শেখের ওপর নৃশংস হামলা চালানো হয়। ইউএনও ঢাকায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন। এই হামলার ঘটনায় ইউএনওর ভাই শেখ ফরিদ বাদী হয়ে ঘোড়াঘাট থানায় মামলা করেন। মামলাটি বর্তমানে দিনাজপুর জেলা ডিবি তদন্ত করছে। ওই মামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৩০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও র্যাব তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার কারণে ঘোড়াঘাট থানার ওসি আমিরুল ইসলামকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।