স্টাফ রিপোর্টার: ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরসহ সারাদেশে গণহত্যার উপর দূর্লভ আলোকচিত্র, প্রমাণ্যচিত্র, গণহত্যা ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মোমবতি প্রজ্জলন ও আলোচনাসভার মধ্যে দিয়ে ২৫মার্চ গণহত্যা দিবস পালন করা হয়েছে। এছাড়াও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের বিভীষিকাময় কালরাতের হত্যাযজ্ঞ স্মরণে শুক্রবার রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত ‘ব্ল্যাক আউট’ কর্মসূচি পালন করেছে বাংলাদেশ। এই ১ মিনিট অন্ধকারে ছিলো পুরো দেশ। এর মাধ্যমে অর্ধশতক আগে এই রাতে নিরীহ বাঙালি জাতির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর নিধনযজ্ঞের বিভীষিকার স্মৃতি স্মরণ করা হলো। তবে জরুরি স্থাপনাগুলো এ ব্ল্যাক আউটের আওতার বাইরে ছিলো। ১৯৭১ সালের এই দিনে রাতের আঁধারে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। অপারেশন সার্চলাইট নামে তারা মেতে ওঠে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যায়। জাতির জীবনে আসা এই ‘ভয়াল কালরাত’ এ ঘুমন্ত বাঙালিকে নির্বিচারে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা। জাতীয় সংসদে ২০১৭ সালের ১১ মার্চ এদিন অর্থাৎ ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত হয়। তখন থেকে দিনটি জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
বেগমপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গার হিজলগাড়ী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্মৃতিচারণ, আলোচনাসভা দোয়া অনুষ্ঠিত হয়েছে। সহকারী প্রধান শিক্ষক আলী হোসেনের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র শিক্ষক সফিকুল ইসলাম, আবুল হোসেন, আজিজুল হক, সাজেদুর রহমান, শেফালী পারভীন, শাহানাজ পারভীন, মাসুদ রানা, নজরুল ইসলাম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিপুল হোসেন, নাহিদ পারভেজ, রিপন প্রমুখ ।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আলমডাঙ্গায় বধ্যভূমিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করে উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা পরিষদ, আলামডাঙ্গা থানা পুলিশ, আলমডাঙ্গা মুক্তিযোদ্ধা সংসদসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এর পরে ’৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধে বীর শহীদদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয়। পরে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা মঞ্চে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে গণহত্যার স্মৃতিচারণ, আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনাসভায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার রনি আলম নূরের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আইয়ুব হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাড. সালমুন আহম্মেদ ডন, মহিলা ভাইসচেয়ার ম্যান কাজী মারজাহান নিতু, সহকারী কমিশনার ভূমি রেজওয়ানা নাহিদ, আলমডাঙ্গা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যাড. আব্দুর রশিদ মোল্লা, অগ্নিসেনা মঈন উদ্দিন, আলহাজ নূর মোহাম্মদ জকু। সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শামীম রেজার উপস্থাপনায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহিল কাফি, মৎস্য কর্মকর্তা ফাতেমা কামরুন্নাহার আখি, মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল মালেক, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক, উপজেলা রিসোর্স সেন্টারের ইন্সটেক্টর জামাল উদ্দিন, সহকারি উপজেলা শিক্ষা অফিসার শামীম সুলতান, রশিদুল ইসলাম, যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা দেওয়ান জাহাঙ্গীর হোসেন, উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা আজিজুল হাকিম, বিআরডিবি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন, তথ্য কর্মকর্তা সিগ্ধা দাস প্রমুখ। এর আগে আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজে ও পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস-২০২২ উপলক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কণ্ঠে গণহত্যার স্মৃতিচারণ ও আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, দামুড়হুদায় গণহত্যা দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের সভাকক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় সভাপতিত্ব করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাছলিমা আক্তার। উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আছির উদ্দীন, বীর মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা তমছের আলী, উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি সুদীপ্ত কুমার, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাকি সালাম, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল মতিন, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আয়ুব আলী, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী কর্মকর্তা হোসনে মোবারক শিলন প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন উপজেলা সমবায় অফিসার হারুন অর রশিদ।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, সকালে দর্শনা পৌর আ.আলীগের কার্যালয়ে জাতীয়, দলীয় ও শোক পতাকা উত্তোলন করা হয়। সন্ধ্যায় দর্শনা রেলবাজারের ফুলতলা চত্বরে শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাত সাড়ে ৯টায় সারাদেশের ন্যায় দর্শনায় বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়। দর্শনা পৌরসভার আয়োজনে সন্ধ্যায় দর্শনা রেলবাজার ফুলতলা চত্বরে গণহত্যা দিবসে আলোচনা করেন দামুড়হুদা উপজেলা আ.লীগের সভাপতি মাহফুজুর রহমান মনজু, দামুড়হুদা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দর্শনা পৌর আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক আলী মুনছুর বাবু, সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি চুয়াডাঙ্গা জেলা সভাপতি সৈয়দ মজনুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক সভাপতি মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক অ্যাড. শহিদুল ইসলাম, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম সবুর, বদরুল আলম ফিট্টু, আ.লীগ নেতা শফিকুল আলম, আতিয়ার রহমান হাবু, হাজি এরশাদ মাস্টার, অ্যাড. মুন্সি সিরাজুল ইসলাম, বিল্লাল হোসেন, আজাদ, পৌর প্যানেল মেয়র রবিউল হক সুমন, যুবলীগ নেতা আব্দুল হান্নান ছোট, সোলায়মান কবির, শেখ আসলাম আলী তোতা, ইকবাল হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা আরিফ মল্লিক, রফিকুল ইসলাম ববি। এদিকে কেরুজ চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোশারফ হোসেনের নেতৃত্বে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনে উপস্থিত ছিলেন মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) শেখ শাহাব উদ্দিন, কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান প্রমুখ। এছাড়া দর্শনা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক শহীদুল ইসলামের নেতৃত্বে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, আলোচনাসভা ও দোয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপাধ্যক্ষ মফিজুর রহমানসহ শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস জীবননগরে পালিত হয়েছে। এ উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার উপজেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে সকালে দলীয় কার্যালয়ে পতাকা উত্তোলন, আলোচনাসভা ও সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি উপাধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। সাধারণ সম্পাদক আবু মো. আব্দুল লতিফ অমলের সঞ্চলনায় অনুষ্ঠিত আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন সাবেক সভাপতি গোলাম মোর্তুজা, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি নাসিরউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম, পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম, যুবলীগ সভাপতি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম ঈশা প্রমুখ। সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস উপলক্ষে মেহেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গতকাল শুক্রবার রাতে মেহেরপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে এ আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মো. রফিউল আলম, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক। পরে সেখানে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর শিল্পীরা এতে সংগীত ও নৃত্য পরিবেশন করেন। গণহত্যা দিবস উপলক্ষে বীর শহীদদের প্রতি মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। এদিন সন্ধ্যায় মেহেরপুর শহীদ ড. সামসুজ্জোহা নগর উদ্যান শহীদ মিনারে মোমবাতি প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে ২৫ মার্চ কালরাত্রি নিহতদের স্মরণ করা হয়। জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান, পুলিশ সুপার মো. রাফিউল আলম মোমবাতি প্রজ্বলনের সূচনা করেন।
এসব অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক মৃধা মো. মোজাহিদুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক লিংকন বিশ্বাস, নাজমুল হুদা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামিরুল ইসলাম, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান রিপন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবু সাঈদ, সদর থানার ওসি শাহা দারা খান, মেহেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্মসম্পাদক অ্যাড. ইব্রাহীম শাহীন, পিপি পল্লব ভট্টাচার্য, মেহেরপুর জেলা বঙ্গবন্ধু শিক্ষা ও গবেষণা পরিষদের সভাপতি প্রফেসর হাসানুজ্জামান মালেক, জেলা শিল্পকলা একাডেমীর সহ-সভাপতি নুরুল আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শাশ্বত নিপ্পন চক্রবর্তী প্রমুখ এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে গণহত্যা দিবস উপলক্ষে মেহেরপুর সদর উপজেলার আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উদ্যোগে শুক্রবার সকালে আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলনায়তনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আমঝুপি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আহমেদ আলীর সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন শরিফুজ্জামান, ফয়জুল কবীর প্রমুখ।
এছাড়া ভয়াল ২৫ মার্চ ও জাতীয় গণহত্যা দিবস উপলক্ষে মেহেরপুর সদর উপজেলার আশরাফপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উদ্যোগে আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়। শুক্রবার সকালে আশরাফপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মিলনায়তনে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। আশরাফপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাজের সভাপতিত্বে আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তৌফিক-ই-এলাহী, মহাসিন আলী, ফজলুল হক, কাজিম উদ্দিন, সহকারী প্রধান শিক্ষক রুহুল আমিন প্রমুখ।