স্টাফ রিপোর্টার: সরকারের পদত্যাগের দাবিতে এখন একদফার আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। আগামী দু’একদিনের মধ্যেই নতুন কর্মসূচির ঘোষণা করবে দলটি। সেখানে কী ধরনের কর্মসূচি আসছে। বিএনপি নেতারা বলছেন, আগামী দুই সপ্তাহ নরম কর্মসূচিতেই মাঠ গরম রাখতে চান। এতে সমাবেশ ছাড়াও গণমিছিল, অনশন এবং সরকারের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার সামনে অবস্থান কর্মসূচি থাকতে পারে। অর্থাৎ গণভবন, বঙ্গভবন, সচিবালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সামনের দিনে কী ধরনের কর্মসূচি আসছে? জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা তো এখন একদফার আন্দোলনে আছি। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে যাব। আপাতত আমরা সমাবেশ, গণমিছিল, অবস্থান কর্মসূচি, অনশনসহ এই ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি নিয়েই আমরা ভাবছি।’ সামনের দিনে আন্দোলনের কর্মসূচি নিয়ে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে কর্মসূচির ব্যাপারে প্রস্তাবনা নিয়েছে দলটি। সমমনা দলগুলো থেকে কী ধরনের প্রস্তাবনা এসেছে? জানতে চাইলে বিএনপি যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, ‘সমমনা দলগুলো থেকে যে প্রস্তাবনা এসেছে, সেগুলোর সঙ্গে আমাদের কর্মসূচির সমন্বয়ের কাজ চলছে। তবে এটা বলা যায়, এখন আমাদের কর্মসূচি হবে ঢাকাকেন্দ্রিক। বিশেষ করে যেসব জায়গা থেকে ক্ষমতা পরিচালিত হয়, সেই সব জায়গায় অবস্থান কর্মসূচি দেয়ার ব্যাপারে আমরা ভাবছি। অর্থাৎ ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে যারা আছেন তাদের কাছে বার্তা পৌঁছে দেয়া যায়।’ কবে নাগাদ এই কর্মসূচি আসতে পারে? জানতে চাইলে জনাব আলাল বলেন, ‘আগামীকালই (রোববার) এই কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে।’
সর্বশেষ কর্মসূচি হিসেবে শুক্রবার ঢাকায় গণমিছিল করেছে বিএনপি। ঢাকার দুই প্রান্তে পৃথকভাবে এ গণমিছিল করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি শাখা। বাড্ডার সুবাস্তু মার্কেটের সামনে থেকে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি গণমিছিলের নেতৃত্ব দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবির যে আওয়াজ উঠেছে তা গণভবন এবং বঙ্গভবন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে। আমরা নতুন যুদ্ধে নতুন লড়াই শুরু করেছি। মিছিলের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চাই তোমাদের দিন শেষ। মানে মানে পদত্যাগ করো। শেখ হাসিনার পতন না ঘটিয়ে জনগণ ঘরে ফিরে যাবে না। এবারের আন্দোলনে সরকারের পতন ঘটানো হবে। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন করে পার পেতে চায় আওয়ামী লীগ। দেশের জনগণ কি সেটা হতে দেবে? না। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এই নির্বাচন কমিশন ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে।’ অন্যদিকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির নেতৃত্ব দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। কমলাপুর স্টেডিয়ামে পাশে গণমিছিলপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশ তিনি বলেন, ‘নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া নির্বাচন হলে সেটাকে প্রতিহত করা হবে। বর্তমান অবৈধ সরকার আমাদের শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ করার অধিকারও কেড়ে নিয়েছে। পেটোয়া পুলিশ বাহিনী দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার ও হয়রানি করছে। তারা সরাসরি গুলি করছে। এই নির্বাচন কমিশন আমরা মানি না। কারণ এরা নিশিরাতের ভোটের সরকারের নির্বাচন কমিশন। সুতরাং তারা সরকারের অন্যায় আইন আদেশ মানছে। আপনাদের নির্বাচন করার সাংবিধানিক অধিকার নেই। তারা নির্বাচন করতে চাইলে সেটাকে অবশ্যই-অবশ্যই প্রতিহত করবো। আমাদের একটাই দাবি, শেখ হাসিনার পদত্যাগ। তার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের লাগাতার প্রোগ্রাম হতে থাকবে।’ আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে একদফার নতুন কর্মকৌশল ও কর্মসূচি নির্ধারণে যুগপৎ আন্দোলনে যুক্ত থাকা বিভিন্ন দল ও জোটের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করে বিএনপি। এরই মধ্যে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২-দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, নুর-রাশেদের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ, গণফোরাম (মন্টু)-বিপিপি, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। এসব বৈঠকে মহাসমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচির সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে মূল্যায়ন করা হয়। সূত্র জানিয়েছে, শরিকেরা অভিমত ব্যক্ত করেন, ঢাকায় মহাসমাবেশের পরদিনই অবস্থানের মতো কঠোর ও সাংঘর্ষিক কর্মসূচি দেওয়ার বিষয়ে আরও ভালোভাবে হিসাব-নিকাশ করা উচিত ছিল। অনেকে কর্মসূচি প্রণয়নে সমন্বয়হীনতার কথা জানিয়ে তা নিরসনের ওপর জোর দেন। পাশাপাশি সরকারের উসকানি ও সহিংসতার মুখে বিরোধী দলের আন্দোলনকারীরা যেন সহিংস না হন, তা নিশ্চিতেরও আহ্বান জানানো হয়। এ ছাড়া একদফার আন্দোলন ঘিরে সরকারের দমনপীড়ন, হামলা-মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে কর্মসূচি প্রণয়নে ‘বিকল্প’ রাখতে বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছেন যুগপতের শরিকরা। কর্মসূচি প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্ল্যান ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ রাখার প্রস্তাব করেন তারা। যাতে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতিতে বিকল্প কর্মসূচিতে যাওয়া যায়। এই মুহূর্তে চাঁপাইনবাবগঞ্জে অবস্থান করছেন বিএনপির আরেক যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ। তিনি এই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য। বিএনপির তৃণমূল নেতারা কী ধরনের কর্মসূচি চাইছেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আছি। তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, এই সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। সরকার যদি তফসিলের দিকে এগোয় তাহলে আমরা জনগণকে মাঠে নামিয়ে দেবো। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরব না।’ অন্যদিকে বিএনপির কর্মসূচির দিনে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগও। তারা শান্তি সমাবেশ নাম দিয়ে কর্মসূচি দিচ্ছেন। আগামীতেও একইভাবে বিএনপির কর্মসূচির দিনে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগ, এমনটিই জানিয়েছে আওয়ামী লীগের একজন নীতিনির্ধারক নেতা। শুক্রবারও আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট সমাবেশ করেছে। শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাস ও নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রতিবাদে’ এই সমাবেশ করে। সেখানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘বিএনপি ষড়যন্ত্র করে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়। আমরা তাদের বলে দিতে চাই, এ দেশে সাংবিধানিক ধারা অব্যাহত থাকবে। এর বাইরে অসাংবিধানিক ধারা ও পন্থা চলবে না। যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল, যারা দেশের উন্নয়নের চাকা ঘুরিয়ে দিয়ে নব্য পাকিস্তান বানানোর পাঁয়তারা করেছিল, সেই চক্রান্ত বর্তমানে তারা আবারও করছে। গণতন্ত্র ও নির্বাচনের নামে বিভিন্ন ধুয়া তুলে নির্বাচনী গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করার চক্রান্ত চলছে।’