বড় জোট বাধার প্রক্রিয়া : ৮১ সাংগঠনিক জেলার ৫২টিতে পুনর্গঠন
স্টাফ রিপোর্টার: পুরোদমে চলছে বিএনপির দল গোছানোর কাজ। লক্ষ্য আগামী জাতীয় নির্বাচন এবং আন্দোলন। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে এক দফা আন্দোলনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। একই সঙ্গে অন্য দলগুলোর সঙ্গেও বড় জোট বাধার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে। ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে ৫২টির কমিটি গঠন শেষ করেছে বিএনপি। বাকিগুলোর পুনর্গঠনের প্রক্রিয়াও অব্যাহত। দলের কেন্দ্রীয় সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এখন বিএনপির সামনে লক্ষ্য একটাই- ‘নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে আন্দোলন’।
জানা গেছে, বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে দ্রুত সময়ে বাকি কমিটিগুলোর কাজ শেষ করা হবে। মূল দলের পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোকেও ঢেলে সাজানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে কৃষক দল ও জাসাসের নতুন কমিটিসহ শ্রমিক দলের ঢাকা মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। চলছে যুবদল, শ্রমিক দল, মহিলা দল ও কৃষক দলের দেশব্যাপী জেলা-উপজেলা কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া। এ প্রসঙ্গে কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহসভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ নাসির জানান, বেশির ভাগ জেলা ও উপজেলায়ই কৃষক দলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি রয়েছে। সেগুলোর পুনর্গঠন কাজের পাশাপাশি সংগঠনটির কাঠামোগত সংস্কারের প্রক্রিয়াও চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠনের ব্যাপারে দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশনা বাস্তবায়নের কাজ চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, যত দ্রুত সম্ভব পুনর্গঠন করা হবে ছাত্রদল, যুবদল, মহিলা দল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সর্বস্তরের কমিটি। ইতোমধ্যেই এসব অঙ্গসংগঠন তাদের মহানগরী কমিটিসহ বিভিন্ন ইউনিটের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি পুনর্গঠন করা শুরু করেছে। ঢাকা মহানগরকে আন্দোলন ও নির্বাচনমুখী করতে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শওকত মাহমুদ এ প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে যে, দেশে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়, তা প্রমাণিত। তাই আমরা চাই নির্বাচনকালীন একটি নিরপেক্ষ সরকার। এ দাবিতে আমরা আন্দোলন করছি। আগামীতে সবাইকে নিয়ে এ আন্দোলন আরও জোরদার করা হবে। এ জন্য দল গোছানোসহ সব ধরনের প্রস্তুতিই গ্রহণ করছে বিএনপি।
বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, আন্দোলন ও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত বিএনপি। আমাদের দাবি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে আগামী নির্বাচন। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি পূরণ করেই বিএনপি আগামীতে নির্বাচনে অংশ নেবে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়কেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বিএনপি। তবে এ লক্ষ্যে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে। এ জন্য দৃশ্যমান কোনো তৎপরতা না থাকলেও ভেতরে ভেতরে কাজ শুরু করেছে হাইকমান্ড। আন্দোলনের প্রস্তুতির পাশাপাশি আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিটি সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীদের তালিকা তৈরির কাজও শুরু করা হয়েছে। এখন থেকেই তাদের (সম্ভাব্য প্রার্থীদের) দলীয় কর্মসূচি পালনসহ নানা ইস্যুতে নিজ নিজ এলাকায় থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দলীয় নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে আওয়াজ দিচ্ছেন তারা।
জানা গেছে, অনেক এলাকায় নির্বাচনী প্রস্তুতি ও দল গোছানোর প্রক্রিয়া একই সঙ্গে চলছে। আগামী নির্বাচনে যাদের দলীয় মনোনয়ন দেয়া হবে তাদের জেলা ও মহানগরের একাধিক দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যারা নির্বাচন করতে আগ্রহী-দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ তাদের জন্য বাধ্যতামূলক। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা অংশ নিচ্ছেন কি না- তা কেন্দ্র থেকে মনিটরিং করা হচ্ছে। আন্দোলনে রাজপথে না থাকলে মনোনয়ন দেওয়া হবে না বলেও সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।