স্টাফ রিপোর্টার: নানামুখী সংকটে মানুষ। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে জেরবার জীবন। অস্বাভাবিক দাবদাহে দুঃসহ সময়ে লোডশেডিং যন্ত্রণায় নির্ঘুম রাত কাটছে অনেকের। গরমের কারণে ছেদ পড়ছে কোমলমতিদের শিক্ষা কার্যক্রমে। রাজধানীর বাসিন্দাদের চোখ রাঙাচ্ছে ডেঙ্গু। নানা সংকটের মধ্যে নাগরিকদের এখন বেশি ভোগাচ্ছে তীব্র গরম আর অসহনীয় লোডশেডিং। টানা তাপদাহের কারণে পরিস্থিতি উন্নতির কোনো লক্ষণও দেখা যাচ্ছে না। উল্টো দুঃসংবাদ হয়ে এসেছে পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হওয়ার খবর। গতকাল সোমবার ওই কেন্দ্রের সর্বশেষ ইউনিটটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখান থেকে এখন আর বিদ্যুৎ সরবরাহ আসবে না জাতীয় গ্রিডে। এ কেন্দ্রটি থেকে এক হাজার মেগাওয়াটের বেশি বিদ্যুৎ আসতো জাতীয় গ্রিডে। কয়লা আমদানির অর্থ পরিশোধ করতে না পারায় কেন্দ্রটি বন্ধ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। চলতি মাসের শেষের দিকে এটি আবার চালু হতে পারে। কেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ায় চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতির আরও অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গরম লোডশেডিংয়ের এই দুরবস্থার মধ্যে গতকাল উচ্চ মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করেছে সরকারি সংস্থা পরিসংখ্যান ব্যুরো। সংস্থাটির তথ্য মতে গত এক যুগের মধ্যে গত মে মাসে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি হয়েছে এটি প্রায় দুই অঙ্কের ঘরের কাছাকাছি। দ্রব্যমূল্য নিয়ে অনেক জেরবার অবস্থায় আছে মানুষ। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে অব্যাহতভাবে। যুদ্ধ আর করোনার কারণে দাম বাড়ার কথা বলা হলেও অব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণহীনতাকে দুষছেন অনেকে। এমন অবস্থায় বিসিএসের তথ্য মানুষের দুরবস্থার চিত্রই তুলে ধরেছে। গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই ধুঁকছে শিল্প খাত। উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। নতুন করে লোডশেডিং বাড়ায় এখন পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। উদ্যোক্তারা বলছেন, গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সংকটের কারণে উৎপাদন ২০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কম হচ্ছে। এতে স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানিতেও প্রভাব পড়তে পারে। বাণিজ্যে বড় সমস্যা হয়ে উঠেছে ডলার সংকট। এই সংকটের কারণে অনেকে এলসি খুলতে পারছেন না। এই ডলার সংকটের কারণে জ¦ালানি আমদানিও বিঘিœত হচ্ছে।
দেশের সবচেয়ে বড় পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের মালিক বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এএম খুরশেদুল আলম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে গত ২৫ মে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এই কেন্দ্র থেকে এক হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যেতো।
অন্যদিকে, পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় দেশের চলমান লোডশেডিং পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। খোদ রাজধানীতেই দফায় দফায় লোডশেডিং হচ্ছে। দেশজুড়ে জ্যৈষ্ঠের প্রচ- দাবদাহে বিদ্যুতের যাওয়া-আসা মানুষের জীবনযাপনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। দেশে এখন বিদ্যুতের সর্বোচ্চ দৈনিক চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াটের কিছু বেশি। তবে প্রতিদিন সরবরাহ হচ্ছে ১১ থেকে সাড়ে ১১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সরকার বলছে, ডলার সংকটে তেল ও গ্যাস আমদানি ব্যাহত হচ্ছে। তাই চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে না। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে এখন বিদ্যুতের চাহিদা দৈনিক সাড়ে ১৫ হাজার মেগাওয়াট। তবে খাত-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, এই চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছেছে। গত রোববার দুপুর ১২টায় সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াটের বেশি লোডশেডিং হওয়ার কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বিদ্যুতে বর্তমানে ১২০ কোটি ঘনফুট গ্যাস দেয়া হচ্ছে, যা নিকট অতীতের মধ্যে সর্বোচ্চ। তারপরও পরিস্থিতি সামলাতে পারছে না সরকার। কারণ কয়লাভিত্তিক রামপাল, পায়রা ও বরিশাল বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং বেসরকারি তেলভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্রগুলো জ্বালানি সংকটে উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। গত শনিবার প্রায় ৪ হাজার ৪৩৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কম উৎপাদন হয়েছে। আর কেন্দ্র মেরামত ও সংরক্ষণের জন্য ৩ হাজার ২৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়নি। দেশের সবচেয়ে বেশি এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে থাকা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) চাহিদার ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ কম পাচ্ছে। খোদ ঢাকাতে দিনরাত সবসময় লোডশেডিং হচ্ছে। গ্রামে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম গণমাধ্যমকে বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে কারখানা চালানোই মুশকিল হয়ে গেছে। ডিজেল খরচ বেড়ে গেছে। এরপরও যদি আমাদের জানা থাকতো, কখন বিদ্যুৎ যাবে, কখন আসবে তাহলে সে অনুসারে শ্রমিকদের কাজে লাগানো যেতো। এখন তো লোডশেডিংয়ের কোনো শিডিউল নেই। দেশে লোডশেডিং পরিস্থিতি যে অসহনীয় হয়ে উঠেছে, তা খোদ বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও স্বীকার করেছেন। তবে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
অপরদিকে, নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে দেশে চলতি অর্থবছরের মে মাসে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি গড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ দাঁড়িয়েছে, যা প্রায় এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১২ সালের মার্চে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হয়েছিলো। এরপর আর কখনো মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের ঘরে যায়নি। পরের মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশে নেমে আসে। গতকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দেয়া ভোক্তা মূল্যসূচকের (সিপিআই) হালনাগাদ তথ্যে এমনটা জানা গেছে। বিবিএসের প্রকাশিত তথ্যে বলা হয়েছে, গত মে মাসে দেশে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি গড়ে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ দাঁড়িয়েছে, আগের মাস এপ্রিলে মূল্যস্ফীতির এই হার ছিলো ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। এদিকে মে মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ হয়েছে। এপ্রিল মাসে যা ছিলো ৮ দশমিক ৮৪ শতাংশ। চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ, মাংস, সবজি, মসলা ও তামাকজাতীয় পণ্যের দাম বাড়ায় খাদ্যে মূল্যস্ফীতির হার বেড়েছে বলে জানিয়েছে বিবিএস। অন্যদিকে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এপ্রিলে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ছিলো ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। বাড়ি ভাড়া, আসবাবপত্র, গৃহস্থালি, চিকিৎসাসেবা, পরিবহন ও শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে এই খাতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। ওদিকে গ্রামের চেয়ে শহরের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেশি। গ্রামে এখন মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ, আর শহরে এই হার ৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত মে মাসে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি হওয়ার মানে হলো, ২০২২ সালের মে মাসে একজন মানুষ যে পণ্য ১০০ টাকায় কিনতেন, চলতি বছরের মে মাসে একই পণ্য কিনতে তার খরচ হয়েছে ১০৯ টাকা ৯৪ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খরচ বেড়েছে ৯ টাকা ৯৪ পয়সা। এক বছর ধরেই দেশের মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। সাড়ে ৭ শতাংশ মূল্যস্ফীতি নিয়ে চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই শুরু হয়। ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ডলারের দাম বৃদ্ধির কারণে আমদানি পণ্যের দাম বাড়তে থাকায় মূল্যস্ফীতি বাড়ে। গত বছরের আগস্টে জ্বালানি তেলের রেকর্ড দাম বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি এক লাফে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ উঠে যায়। এরপর টানা পাঁচ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি কমে। তবে তা কোনো মাসেই সাড়ে ৮ শতাংশের নিচে নামেনি। গত তিন মাস ধরেই মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির ধারায় রয়েছে।
জীবননগর ব্যুরো জানিয়েছে, তীব্র তাপপ্রবাহ আর ঘণ-ঘণ লোডশেডিঙের কবলে পড়েছে জীবননগর হাসপাতাল। নিজস্ব বিদ্যুত ব্যবস্থা সচল না থাকায় তীব্র এ গরমে রোগীরা হাসফাস করছে। অসুস্থ রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে। হাসপাতাল ছাড়াও ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে এ উপজেলাবাসীর নাভিশ^াস উঠেছে। ক্ষোভ বাড়ছে বিদ্যুত বিভাগের ওপর।
হাসপাতালে ভর্তি রোগী সরফরাজ বলেন, বারবার বিদ্যুৎ যাচ্ছে। এতে সুস্থ হওয়ার জায়গায় আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছি। গরমে খুব খারাপ লাগছে। ঘণ ঘণ রোডসেডিঙের কারণে শিশু, বৃদ্ধসহ নানা বয়সের রোগীর খুব কষ্ট হচ্ছে। সুস্থ হওয়ার চেয়ে গরমে আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন রোগীরা। সেই সঙ্গে স্বজনরাও ভোগান্তিতে পড়েছেন। রোগীদের স্বস্তির জন্য হাতের কাছে যা পাচ্ছেন, তা নাড়িয়েই বাতাস করার চেষ্টা করছেন।
সদ্য ভূমিষ্ট এক নবজাতকের অভিভাবক বলেন, এটা কেমন সেবা প্রতিষ্ঠান। একটা হাসপাতালে জেনারেটর তো থাকবে। কর্তৃপক্ষের কোনো কথা নেই, তারা যে যার মতো। তীব্র গরমে নবজাতক ও মা দুজনই এখন ছটফট করছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিকল্প বিদ্যুতের কোনো ব্যবস্থা নেই। পূর্বের একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন আইপিএস থাকলেও তা এখন অকেজো বলে দাবি করেছে কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নার্স সাংবাদিকদের জানান, অসহনীয় গরম আর লোডশেডিংয়ে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলেই বিদঘুটে অন্ধকার নেমে আসে। মোবাইলের টর্চ ও চার্জার লাইট জ্বালিয়ে সেবা দিতে হচ্ছে। অবস্থা এমন হয়ে গিয়েছে যে রোগীদের সুস্থ করতে গিয়ে আমরা নিজেরাই অসুস্থ্য হয়ে যাচ্ছি। তিনি আরও জানান, লোডশেডিংয়ের পর রোগী ও স্বজনরা অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ে যাচ্ছে। ফলে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে আমাদেরকে গালিগালাজ করছে এবং আজেবাজে ভাষায় কটূ কথা শোনাচ্ছে। এত কিছু সহ্য করে আমাদের চিকিৎসাসেবা প্রদান করতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জীবননগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরএমও ডা. নাহিদ হাসান সাংবাদিকদের বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে হাসপাতাল অন্ধকার তো থাকবেই। হাসপাতালের জেনরেটরে তেল নেই, তাই ভোগান্তি হচ্ছে। তিনি জানান যে আইপিএসটি আছে সেটা কেবল জরুরি বিভাগে সার্ভিস দেয়ার জন্য।
গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, অব্যাহত লোডশেডিংয়ের মুখে পড়েছে মেহেরপুরের শিল্প কারখানা। অনিয়মিত বিদ্যুৎ সরবরাহের কারণে কারখানায় উৎপাদন এসে ঠেকেছে সিঁকি ভাগে। ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ছোট ও মাঝারি ধরণের অন্তত ৪৬টি শিল্প কারখানা। দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না হলে আরো অন্তত অর্ধশত কারখানা বন্ধ হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। এতে পথে বসবে তারা। তবে বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বলছে, অচীরেই এর সমাধান সম্ভব হবে।
গত দু’সপ্তাহ ধরে চলছে লোডশেডিং। অব্যাহত লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে জেলার গাংনী উপজেলার অন্তত ১০৬টি ছোট বড় ও মাঝারী ধরণের শিল্প কারখানা। সেই সাথে বিপাকে পড়েছে এসব শিল্পর সাথে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে ছোট ও মাঝারী ধরণের অন্তত ৪৬টি শিল্প কারখানা। এসব কারখানার মধ্যে রয়েছে হাসকিং ও ক্যাটল অ্যান্ড ফিস ফিড মিল্স। সেই সাথে বেকার হয়েছে পাঁচ শতাধিক শ্রমিক।
ষোলটাকার দেলোয়ার হাসকিং অ্যান্ড ফিসফিড মিলের মালিক দেলোয়ার হোসেন জানান, বিদ্যুৎ সরবরাহ না থাকায় তিনি মিলের কাজ বন্ধ করেছেন। মিলে ১১ জন শ্রমিক ছিল তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। তারা এখন বেকার। একই কথা জানালেন মড়কা বাজারের সাগর চাল কলের মালিক আব্বাছ আলী।
অন্যদিকে যে সকল মিল কারখানা চালু রয়েছে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় সেগুলোর উৎপাদন নেমে এসেছে সিঁকি ভাগে। উৎপাদন কম হলেও প্রয়োজনের তাগিদে শ্রমিক রাখতে হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় তার চাপ পড়ছে গ্রাহক পর্যায়ে।
বামন্দী বাজারের সুইট ফ্লাওয়ার মিলের স্বত্বাধিকারী হাজি মতিয়ার রহমান জানান, বিদ্যুৎ সঠিকভাবে না পাওয়ায় তার মিলের চারটি ইউনিটের একটি ইউনিট সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। উৎপাদন নেমেছে অর্ধেকে। তারপরও শ্রমিকদের মজরি দেয়া হচ্ছে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। একই কথা জানালেন মুক্তি ফ্লাওয়ার মিলের সোহেল রানা বাবু ও বিসমিল্লাহ অ্যাগ্রো ফিডের লাল্টু মিয়া।
এদিকে স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন সংকটে। গোপালনগরের ব্যবসায় সোলাইমান জানান, গবাদী পশুর খামারিরা ও মৎস্য খামারিদেরকে সঠিক সময়ে খাবার সরবরাহ করতে পারছেন না তারা। দুতিন দিন ধর্ণা দিয়েও খাবার মেলাতে পারছেন না। মিল মালিকরা খাবার উৎপাদন করতে না পারায় এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। জোড়পুকুরিয়ার ব্যবসায়ী রুবেল জানান, তার কাছ থেকে বাকিতে অন্তত ৩০ জন মৎস্যচাষি মাছের খাবার নিয়ে থাকেন। এস সপ্তাহ ধরে মাছ চাষিদেরকে কোন খাবার সরবরাহ করতে পারেন নি তিনি।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির গাংনী জোনাল অফিসের ডিজিএম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই। প্রচ- তাপদাহ ও কয়লা সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যহত হওয়ায় জাতীয় গ্রীড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে অনিয়মিত। যেখানে প্রয়োজন ১৩ মেগাওয়াট সেখানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ৩ মেগাওয়াট। ফলে বিদ্যুৎ বিতরণ স্বাভাবিক রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অনতিবিলম্বে এ সমস্যার সমাধান হবে।