চুয়াডাঙ্গা অনূর্ধ্ব-১৭ বালিকা টিম গঠনে অনিয়ম
যাচাই-বাছাইয়ে ৯জন খেলোয়াড় ভুয়া প্রমাণিত
স্টাফ রিপোর্টার: বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের চুয়াডাঙ্গা জেলা পর্যায়ের খেলা সদ্য সম্পন্ন হয়েছে। এ টুর্নামেন্ট থেকে নিয়ম মাফিক ১৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি চুয়াডাঙ্গা জেলা টিম গঠনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি খেলোয়াড় সিলেকশন কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। এ কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সেলিনা খাতুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দিলরুবা খুকু, সাবেক কৃতি ফুটবলার মাহমুদুল হক লিটন, জেলা ক্রীড়া সংস্থার নির্বাহী সদস্য নুরুন্নাহার কাকুলি ও চুয়াডাঙ্গা মাহাতাব বিশ্বাস ফুটবল একাডেমির পরিচালক কোচ সালাউদ্দিন বিশ্বাস মিলন। টুর্নামেন্টের খেলা চলাকালীন সময়ে এ সকল সদস্যরা খেলোয়াড়দের যাচাই-বাছাই করে সেই তালিকা চুয়াডাঙ্গা জেলা ক্রীড়া অফিসার আমানুল্লাহ আহম্মেদের নিকট জমা দেন। এ তালিকা থেকে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট চুয়াডাঙ্গা জেলা বালিকা টিম গঠন করা হয়। এই তালিকাটি জেলা অফিসার আমানুল্লাহ আহমেদ জেলা প্রশাসকের নিকটে গিয়ে স্বাক্ষরও করিয়ে নেন। সরল বিশ্বাসে সে তালিকায় স্বাক্ষরও করে দেন জেলা প্রশাসক। কিন্তু সিলেকশন কমিটির কয়েকজন সদস্য জানতে পারেন, যে তালিকা তারা জমা দিয়েছিলেন সেই তালিকার বাইরেও একজন খেলোয়াড়কে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। বিদিশা নামের ওই খেলোয়াড়টি এ বছর বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭ জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের চুয়াডাঙ্গার কোনো টিম থেকেই খেলায় অংশগ্রহণ করেনি। এছাড়া মানিয়া ও হাফিজা নামের দু’জন খেলোয়াড়ের বয়স বিষয়েও প্রশ্ন ওঠে। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার কয়েকটি স্থানীয় দৈনিকে নিউজ প্রকাশিত হলে বিষয়টি প্রশাসন ও সিলেকশন কমিটির সদস্যদের নজরে আসে। মান্যবর জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা উপস্থিত সিলেকশন কমিটির সদস্য, জেলা ক্রীড়া অফিসার ও টুর্নামেন্ট কমিটির আহ্বায়ক চুয়াডাঙ্গা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মহোদয়কে এ বিষয়ে খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে মূল বিষয়টি খুঁজে বের করার তাগিদ দেন। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, এই তালিকায় যেহেতু আমার স্বাক্ষর আছে সেখানে প্রশ্নবিদ্ধ কোন খেলোয়াড়ের নাম যাচাই-বাছাই না করে প্রেরণ করা হবে না। প্রয়োজনে চুয়াডাঙ্গার বালিকা টিম চিঠি লিখে খুলনায় যাওয়া থেকে বিরত রাখা হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামিদ রেজা মহোদয়কে দায়িত্ব দিয়ে জেলাক্রীড়া অফিসার আমানুল্লাহ আহমেদসহ কমিটির উপস্থিত সদস্যদেরকে সাথে নিয়ে অভিযোগ উত্থাপিত ৩জন খেলোয়াড়ের অনলাইনে বয়স যাচাই-বাছাইয়ের নির্দেশনা দেন। সাথে সাথে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সকলের সামনে ওই ৩ খেলোয়াড়ের জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী বয়স যাচাই-বাছাই করা হয়। বয়স যাচাই-বাছায়ে দেখা গেছে, অভিযোগ উত্থাপিত ওই তিন খেলোয়াড়ের বয়স সংক্রান্ত কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। প্রমাণিত হয় জন্ম নিবন্ধন টেম্পারিং করে তাদের বয়স কমিয়ে অনূর্ধ্ব-১৭র মধ্যে রাখা হয়েছে। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামিদ রেজা বলেন, কোথা থেকে কিভাবে বয়স টেম্পারিং করা হয়েছে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ সময় উপস্থিত খেলোয়াড় সিলেকশন কমিটির সদস্যরা বলেন, শুধুমাত্র ওই ৩জন খেলোয়াড়ের বয়স যাচাই-বাছাই না করে সকলের বয়স যাচাই-বাছাই করা হোক। এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সম্মতি দিলে বাকি খেলোয়াড়দের বয়সও যাচাই-বাছাই করা হয়। এতে দেখা গেছে ১৮ জনের ঘোষিত তালিকা থেকে ৯ জন খেলোয়াড়ের বয়স-ই ভুয়া জন্ম নিবন্ধনের মাধ্যমে দেখানো হয়েছে। উল্লেখ্য এই ৯জন ভুয়া নিবন্ধন ব্যবহারকারী খেলোয়াড়দের মধ্যে অধিকাংশ খেলোয়াড়-ই চুয়াডাঙ্গা মাহাতাব বিশ্বাস ফুটবল একাডেমির খেলোয়াড়। এরা হলেন মানিয়া খাতুন, হাফিজা খাতুন, চানমতি, বিথী, বিদিশা, সুরাইয়া খাতুন ও ফারজানা। পরবর্তীতে ভুয়া প্রমাণিত ৯ জন খেলোয়াড়কে বাদ রেখে টুর্নামেন্টের খেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য খেলোয়াড়দের মধ্যে থেকে বয়স যাচাই-বাছাই করে আরো ৯ জন খেলোয়াড় নিয়ে ১৮ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করা হয়। প্রয়োজনীয় কার্যসম্পাদন শেষে সেই ১৮ জন খেলোয়াড় নিয়ে দাযিয়ত্বপ্রাপ্ত কোচ মাহাতাব বিশ্বাস ফুটবল একাডেমির পরিচালক সালাউদ্দিন বিশ্বাস মিলন ও ম্যানেজার দিলরুবা খুকুকে ট্রেন যোগে খুলনার উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়। এদিকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কক্ষে আলোচনার এক পর্যায়ে সিলেকশন কমিটির সদস্যরা জেলা ক্রীড়া অফিসারকে প্রশ্ন করেন বিদিশারানী বেধকে চূড়ান্ত তালিকায় আপনাকে কে রাখতে বলেছিলেন? এ সময় জেলা ক্রীড়া অফিসার আমানুল্লাহ আহমেদ সোজা-সাপটা বলে দেন কোচ মিলন বিশ্বাস বলেছিলেন। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি বলেন, যে মিলন বিশ্বাস তার খেলোয়াড়দের বয়স টেম্পারিং করে জেলা প্রশাসক সহ জেলার মান ডুবাতে বসেছিলেন তাকেই কিভাবে পুনরায় জেলা টিমের দায়িত্ব দিয়ে খুলনায় পাঠানো হলো। এ বিষয়ে জানতে জেলা ক্রীড়া অফিসার আমানুল্লাহ আহমেদ এবং চুয়াডাঙ্গা মাহাতাব বিশ্বাস ফুটবল একাডেমির পরিচালক কোচ সালাউদ্দিন বিশ্বাস মিলনের ব্যক্তিগত নাম্বারে একাধিক কল করা হলে রিসিভ করেননি। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) নাজমুল হামিদ রেজা বলেন, দৈনিক মাথাভাঙ্গার প্রকাশিত প্রতিবেদন আমাদের নজরে আসে। পরে কমিটির মাধ্যমে কয়েকজনের বয়সের সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে কোন অভিযোগ পাইনি।