স্টাফ রিপোর্টার: ‘চোকার’ হিসেবে বদনাম রয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার। চাপের মুখে ভেঙে পড়ে তারা! আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচেও তারা চাপে থাকবে সন্দেহ নেই। আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সুবিধাজন অবস্থায় থেকেও জয় বঞ্চিত হয়েছে তারা বৃষ্টির কারণে। অন্যদিকে প্রথম ম্যাচে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে উজ্জীবিত টাইগার বাহিনী। দলের সবাইকে নিজ নিজ খেলাটা দেখানোর স্বাধীনতা দিয়েছেন টাইগার অধিনায়ক। সাকিব আল হাসান বলেছেন, ‘আজ এক হিরোর খোঁজে বাংলাদেশ।’ অস্ট্রেলিয়াতে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশির বসবাস কোথায়? উত্তরটা খুব সহজেই দিয়ে দেয় সবাই। হ্যাঁ, সিডনি। এই শহরে বাংলা নামের দোকানও পাওয়া যায়। সেখানেই আজ টাইগাররা মাঠে নামবে চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় জয়ে চোখ রেখে। সাকিব আল হাসান বাহিনীর আজ সিডনি জয়ের অপেক্ষা।
টাইগার অধিনায়ক জানিয়ে দিলেন এখানকার প্রবাসী দর্শকরাই হবেন তাদের অনুপ্রেরণা। প্রতিপক্ষের শক্তির প্রতি সমীহ করেই সাকিব বলেন, ‘ওদের দলে বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় আছে। যেটা আমরা অস্বীকার করছি না। কিন্তু আমাদের খেলা হবে ব্যাটে এবং বলে। যেখানে আমরা চেষ্টা করবো আমাদের সেরা পারফরম্যান্সটা করার।
আমাদের কিছু ভালো স্মৃতি আছে ওদের বিপক্ষে, যেগুলো হয়তো সাহায্য করবে। যদিও এই ফরম্যাটে নেই, তারপরও আমার মনে হয় এটা মানসিকভাবে আমাদের সাহায্য করবে। আমি যেটা বললাম, আমরা আসলে পরিষ্কার মনে থাকতে চাই, খেলাটাকে উপভোগ করতে চাই। আমি আশাবাদী বেশ ভালো একটা ক্রাউড আসবে যারা আমাদের সমর্থন দেবে এবং তাদের সমর্থনের প্রতিদানটা যেন আমরা দিতে পারি।’ সিডনি গ্রাউন্ডের ১৫০ বছরেরও বেশি সময়ের ইতিহাস বলে এই মাঠে টসে জিতে অধিনায়করা আগেই ব্যাটিং নিয়েছেন। বিশেষ করে দিনের বেলায়। কিন্তু রাতে এই মাঠে পেসাররাই দাপট দেখান। সঙ্গে স্পিনাররাও সুবিধা পাবেন। যে কারণে সিডনিতে টস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কে টস জিতবে সেটি তো আর কারো হাতে নেই। তিনি বলেন, ‘টস একটা জিনিস যেটা আমাদের হাতে নেই। আমাদের যদি আগে ব্যাটিং করতে হয়, চেষ্টা করবো ভালো ব্যাটিং করতে। যদি আগে বোলিং করতে হয় সেটাও চেষ্টা করবো ভালো করতে। কারণ, আমরা ম্যাচটা খেলতে নামবো জেতার জন্য।
আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকার জন্যও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। যেহেতু ওদের প্রত্যাশা ছিল একটা পয়েন্ট বেশি পাবে প্রথম ম্যাচে, যেটা পায়নি। তো ওদের জন্য অনেকটা বাঁচা-মরার লড়াই, একটু হলেও চাপ থাকবে। সেখানে আমরা ম্যাচ জিতে এসেছি। (সিডনি) এমন একটা মাঠ যেখানে আমরা হয়তো প্রেফার করবো যেকোনো দলের সঙ্গে খেলার জন্য। অস্ট্রেলিয়ার যেকোনো উইকেট থেকে সাধারণত এখানে স্পিনারদের জন্য একটু বেশি সুবিধা থাকে। তবে বিশ্বকাপে যেটা হয়, আইসিসি ট্রু উইকেট তৈরির চেষ্টা করে। যেখানে সবার জন্যই একটা ভারসাম্য থাকে। তো ওভাবেই আমাদের পরিকল্পনা করতে হবে। আমরা খোলা মনে নামতে চাই যে ব্যাটিং করবো না বোলিং করবো কিংবা টস নিয়ে বেশি চিন্তা করবো। আসলে যেগুলো আমাদের হাতে নাই সেগুলো নিয়ন্ত্রণ করতেও পারবো না এবং আমরা নিয়ন্ত্রণ করতেও চাই না। আমরা খোলা মনে যেতে চাই, একটা ভালো মাইন্ডসেট নিয়ে যেতে চাই এবং খেলাটাকে উপভোগ করতে চাই।’ বাংলাদেশ দলের ওপেনিং নিয়ে চিন্তার শেষ ছিল না। বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকে এ নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলেছে। তবে প্রথম ম্যাচে নাজমুল হোসেন শান্ত ও সৌম্য সরকার দারুণ জুটি গড়ে তোলেন। যা দলকে দিচ্ছে ভরসা। এ নিয়ে টাইগার অধিনায়কও ভরসার কথা শুনিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘অবশ্যই এটা (আগের ম্যাচের উদ্বোধনী জুটি) আমাদের আত্মবিশ্বাস দেবে। আমাদের জন্য এটা গুরুত্বপূর্ণ না যে কত রান হলো স্কোরবোর্ডে। এর চেয়ে কী এপ্রোচ ছিল ব্যাটসম্যানদের। আমার কাছে যেটা দেখে ভালো লেগেছে যে দু’জনই বেশ ইতিবাচক ছিলো। এমন না যে, আড়ষ্ট হয়ে ব্যাটিং করছে। ওই জিনিসটাই আমরা চাই। প্রথম ম্যাচে সবসময় একটু নার্ভাসনেস কাজ করে, প্রেসার থাকে। এখন ঐ জড়তা থেকে বেরিয়ে আসতে পারা উচিত। অনেক খোলা মনে খেলা উচিত এবং ভালো পারফর্ম করা উচিত। যারাই দলে আছে, সবাই যদি সম্ভাব্য সেরা খেলাটা খেলতে পারে, আমার মনে হয় ভালো কিছু হওয়া সম্ভব।’ প্রথম ম্যাচে যে রণকৌশল ছিল সেখানে আসতে পারে পরিবর্তন। আজ বাংলাদেশ দলে দেখা যেতে পারে একজন বাড়তি স্পিনার। ধারণা করা হচ্ছে মেহেদী হাসান মিরাজকে খেলানো হতে পারে। কারণ, তিনি বোলিংয়ের সঙ্গে ব্যাটিংটাও পারেন।
যদিও একাদশ কেমন হতে পারে এ নিয়ে অধিনায়ক কিছু জানাতে রাজি হলেন না। আর ক্রিকেটারদের কাছে টাইগার অধিনায়ক চাইছেন চমকে দেয়ার মতো পারফরম্যান্সও। তিনি বলেন, ‘চমকে দেয়ার মতো কিছু হলে সেটা তো চমকই হলো। কিছু কিছু ব্যতিক্রম থাকে যেটা উদাহরণ হতে পারে না। উদাহরণ হলো দলগতভাবে পারফর্ম করছে, কেউ না কেউ প্রতিদিন পারফর্ম করছে। দলের কেউ একজন হয়তো ধারাবাহিকভাবে ভালো খেলছে। সেই দলগুলোই হয়তো দীর্ঘমেয়াদে ভালো খেলে। তো আমরা ওরকমই পারফরম্যান্স চাই। এর ভেতরে যদি দু’-একটা ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স হয় সেটাকে আমরা সাদরে গ্রহণ করবো এবং আমরা চাইবো যে প্রতি ম্যাচেই এ রকম এক-দুইটা ব্যতিক্রমী পারফরম্যান্স হোক। যেটা আসলে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়। বিশেষ করে এটা যেহেতু অনেক ছোট একটা সংস্করণ। ওরকম একটা পারফরম্যান্স হলে প্রতিপক্ষের জন্য ঘুরে দাঁড়ানোটা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যায়।’