গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজারকে (এজিএম) অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ দেয়া ইউপি মেম্বারের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতি পুঁজি করে ইউপি মেম্বার একজন কর্মকর্তাতে যেভাবে লাঞ্ছিত করেছেন তা অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিভিন্ন দফতরের কর্মকর্তারা। সামান্য লোডশেডিংয়ের ঘটনায় ধর্মপ্রাণ মানুষকে ভুল বোঝানো ইউপি মেম্বারের সাজা দাবি ও নিজের নিরাপত্তা দাবি করে থানায় জিডি করেছেন ওই কর্মকর্তা।
লোডশেডিং নিয়ে গেলো ৪ এপ্রিল মোবাইলে কল দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন মটমুড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড সদস্য শাহজাহান আলী। এ দৃশ্য স্থানীয়রা ভিডিও করে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দিলে ভাইরাল হয়।
পল্লী বিদ্যুত সূত্রে জানা গেছে, গ্যাস সঙ্কটের কারণে দেশের কয়েকটি বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন কমেছে। ফলে সারাদেশে কিছু সময় লোডশেডিং দেয়া হচ্ছে। গেলো ৪ এপ্রিল ইউপি সদস্য শাহজাহান আলী মোবাইলে কল দেন মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির বামন্দী জোনাল অফিসের সহাকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম ওএন্ডএম) হানিফ রেজাকে। ইফতার ও তারাবির সময় বিদ্যুত কেনো থাকে না তা নিয়ে কৈফিয়ত তলব করেন ইউপি সদস্য। কথা বলার এক পর্যায়ে কমকর্তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন তিনি। এছাড়াও ধর্মীয় অনুভূতির কথা তুলে ধরে হাজার হাজার মানুষ নিয়ে পল্লী বিদ্যুতের অফিস ঘেরাও করার হুমকি দেন তিনি। প্রায় সাড়ে তিন মিনিটের মোবাইলে ইউপি সদস্যর কথোপকোথন দৃশ্য স্থানীয় যুবকরা ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে ছেড়ে দেয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইউপি ইউপি সদস্য শাজাহান আলী বলেন, আমি জনগণের স্বার্থে অনেক কিছু করতে পারি। তবে আমার জায়গায় আমি যা করেছি তা ঠিক করেছি।
এদিকে ইউপি সদস্যর এই ভিডিওতে যেভাবে গালিগালাজ করা হয়েছে তা নিয়ে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তাদের মাঝে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ বিরাজ করছে। সরকারি দায়িত্ব পালনকালে একজন দায়িত্বশীল জনপ্রতিনিধির এ ধরণের আচরণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেকে।
ভুক্তভোগী সহকারী জেনারেল ম্যানেজার হানিফ রেজা জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে আমি ওইদিনই গাংনী থানায় জিডি করেছি। নিরাপত্তা নিশ্চিত ও তার বিরুদ্ধে আইনী সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে।
আইনী ব্যবস্থার বিষয়ে গাংনী থানার পরিদর্শক তদন্ত মনোজিত রায় বলেন, তদন্ত দ্রুত শেষ করে আইনী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশে লোডশেডিং চলছে। এর বাইরে নয় মেহেরপুর জেলা। পল্লী বিদ্যুতের বেশিরভাগ কর্মকর্তা ও কর্মচারী মুসলিম। তারা রোজা নামাজ করছেন। এক শ্রেণির মানুষ এই ধর্মীয় অনুভূতি কাজে লাগিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। এ ধরনের ঘটনার যদি প্রকৃত বিচার না হয় তাহলে চাকরি করতে পারবে না দেশের লাখ লাখ পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তা কর্মচারী।
তবে বিষয় অতি অবেগে বের হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন মটমুড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহেল আহম্মেদ। তিনি বলেন, বিষয়টি অবশ্যই দুঃখজনক। নিরসনের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মেহেরপুর পল্লী বিদ্যুত সমিতির জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আবু রায়হান বলেন, বিদ্যুত খাতে এই সরকারের কতো অর্জন তা ১৫ বছর আগের দিকে তাকিয়ে দেখতে হবে। তবুও সামান্য লোডশেডিং হলেই এক শ্রেণির মানুষ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে উঠে পড়ে লাগে। এরই অংশ হিসেবে এই ঘটনা বলে আমরা মনে করছি। এ ঘটনার বিচার দাবি করেন তিনি।