স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা এপেক্স হাসপাতাল ও ডায়গনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে কৌশলে রোগী ভাগিয়ে এনে সিজারের পর মোটা অঙ্কের অর্থ দাবির অভিযোগ উঠেছে। তাৎক্ষণিকভাবে এ অভিযোগ আমলে নিয়ে রোগীর পাশে দাঁড়িয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভুইয়া।
চুয়াডাঙ্গা এপেক্স হাসপাতাল ও ডায়াগনাস্টিক সেন্টারে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান প্রসব করা আলমডাঙ্গা উপজেলার জাহাপুর গ্রামের নুপুর নামের ওই নারীর স্বামী উজ্জ্বল হোসেন গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সদর ইউএনও শামীম ভুইয়ার সম্মুখে অভিযোগ করেন। অভিযোগ শুনে তাৎক্ষণিকভাবে উপস্থিত সাংবাদিকের খোঁজ নিতে বলেন নির্বাহী অফিসার। একই সাথে ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃক ধার্যকৃত অস্ত্রোপচার খরচ ১২ হাজার টাকার মধ্যে ৬ হাজার টাকা ইউএনও সাহেব দেবেন বলে জানান। বাকি ৬ হাজার টাকা রোগীর স্বজনরা ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে জমা দিয়ে রোগীকে ছাড়িয়ে নেন। তবে রোগীর স্বামী উজ্জ্বল হোসেন বলেন, ইউএনও স্যার ৬ হাজার টাকা পরিশোধ করতে বললেও ওই ডায়াগনস্টিক কর্তৃপক্ষ আরও ৫শ টাকা বেশি নেয়। তবে ছাড়পত্র দেয়নি। এপেক্স ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক সুমন বলেন, রোগী বাড়িতে নিয়ে যান। ডা. মামুন কুষ্টিয়ায় গেছেন। তিনি আসলে ছাড়পত্র দেয়া হবে। নুপুরের স্বামী উজ্জ্বল হোসেন আরও বলেন, আমি খুব গরিব মানুষ। আমার স্ত্রী সন্তানসম্ভাবা হওয়ায় অনেক কষ্ট করে তাকে চুয়াডাঙ্গার একটি ক্লিনিকে দেখাতাম। চলতি মাসের প্রথম দিকে চুয়াডাঙ্গায় আমার স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে আসলে এপেক্স হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক সুমন দুঃসম্পর্কের আত্মীয়ের পরিচয় দিয়ে বলেন, অন্য জায়গায় সন্তান সিজার করবেন কেন? আমার এখানে নিয়ে আসেন অর্ধেক টাকায় সিজার করে দেবো। সেই কথায় রাজি হয়ে আমি এপেক্স হাসপাতালে যোগাযোগ করি। গত ১৭ মার্চ রাতে আমার স্ত্রীর প্রসব বেদনা উঠলে আমি এপেক্স হাসপাতালের সুমনের নিকট ফোন দিই। রোগী তাড়াতাড়ি চুয়াডাঙ্গায় আনতে বলেন। ওই রাতে রোগীকে এপেক্স হাসপাতালে নিয়ে আসলে তারা রোগী দেখে বলেন, এখনো জরায়ুর মুখ খোলেনি। আপনি (উজ্জ্বল) বাইরে গিয়ে গরম দুধ নিয়ে আসেন বা গরম চা নিয়ে আসেন। তাদের কথা মতো আমি বাইরে থেকে গরম দুধ নিয়ে এসে দেখি আমার স্ত্রীর শরীরে স্যালাইন ও ইনজেকশন দেয়া হয়েছে। ওই স্যালাইন দেয়ার পরই রোগীর পেট শক্ত হয়ে যায় এবং বাচ্চা নড়াচড়া বন্ধ করে দেয়। তখন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলে রোগী এখনই সিজার করাতে হবে। তা না হলে সন্তান ও তার মায়ের কোন কিছু হয়ে যেতে পারে। আমরা তার দ্বায়ভার নেবো না। এ কথা শুনে আমার সন্তান স্ত্রীকে বাঁচাতে সিজার করাতে রাজি হই। কিন্তু কতো টাকা লাগবে এ বিষয়ে বার বার জানতে চাইলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাকে টাকার বিষয়টি স্পষ্ট করেনি। সন্তান সিজার হওয়ার পর গতকাল রোববার আমার স্ত্রী-সন্তানকে রিলিজ দেয়ার কথা বলে এবং সিজারের খরচ ১২ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি করেন। আমি গরিব মানুষ এতো টাকা এখন কোথায় পাবো। তাছাড়া ওই হাসপাতালেই আমার এক আত্মীয়ের সিজার খরচ ৬ হাজার টাকা নিয়ে ছিলো। আমাকে কেন ১২ হাজার টাকা দিতে হবে।
রোগীর স্বামী উজ্জ্বলের অভিযোগ শুনে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভুইয়া ফোন দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে বলেন, ৬ হাজার টাকা নিয়ে রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পথ্য দিয়ে ছেড়ে দিতে। বাকি ৬ হাজার টাকা আমি (সদর ইউএনও) দেবো। তবে ৬ হাজার নয় সাড়ে ৬ হাজার টাকা নিয়ে রোগী রিলিজ দিলেও রোগীর ছাড়পত্র দেয়া হয়নি। এ বিষয়ে এপেক্স হাসপাতাল ও ডায়াগনাস্টিক সেন্টারে ঘটনার সত্যতা জানতে গেলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম ভুইয়া বলেন, এপেক্স হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কর্তৃপক্ষ যদি সংশোধন না হয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।