স্টেশনারী দোকানি জানে না তিনি পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ঠিকাদার
স্টাফ রিপোর্টার: একটি ১৫ ওয়াটের এলইডি বাল্বের দাম দেয়া হয়েছে ৭৭০ টাকা। আর ফ্যানের দর ২ হাজার ৭৩০ টাকা। যন্ত্রপাতি মেরামত না করেই ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯শ’ টাকার বিল উত্তোলন এবং স্টেশনারী দোকানীর নামে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিল প্রদান করা হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। সরকারি টাকায় কেনাকাটার এমনই চিত্র মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে নামকাওয়াস্তে বিল ভাউচার করে সরকারি এ অর্থ প্রদানের ঘটনা। এমন বিল ভাউচার করে সরকারি টাকা লোপাটের অভিযোগ উঠেছে বিলভাউচারকারীদের বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ঠরা জানান, যেখানে ৬০ টাকায় এলইডি বাল্ব কেনা যায় সেখানে একটি বাল্বের ৭৭০ টাকা দাম পরিশোধ করা রূপপুরের বালিশ ক্রয়ের ঘটনার চেয়ে কম নয়। অপরদিকে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতাসহ অন্যান্য বিল ভাউচারে কি পরিমাণ অসঙ্গতি রয়েছে তা খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রীর নিজ এলাকা তাই তার হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন অনেকে। মুজিবনগর উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিস এসব বিল ভাউচারের অর্থ প্রদানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবে মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডা. নাসির উদ্দীন আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুজিবনগর উপজেলার ১০টি কমিউনিটি ক্লিনিকে দুটি করে ফ্যান ও ২টি করে এলইডি বাল্ব সরবরাহের লক্ষ্যে মেহেরপুরের জোহা এন্টারপ্রাইজকে ৭০ হাজার টাকা বিল প্রদান করা হয় ২৫ জুন। প্রতিষ্ঠানটি ১৫ ওয়াটের একটি বাল্বের দর ৭৭০ টাকা আর অ্যাপোলো নামক একটি ফ্যানের দর ধরেছে ২ হাজার ৭৩০ টাকা। যার বাজার মূল্য ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা বলে জানা গেছে।
কয়েকটি কমিউনিটি ক্লিনিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে পিজিএল নামের এলইডি বাল্ব আর এপোলো সিলিং ফ্যান সরবরাহ করা হয়েছে। এই মানের বাল্ব ও ফ্যান যে দর ধরা হয়েছে তা পণ্যের মানের সাথে ব্যাপক তফাত বলে জানিয়েছেন কয়েকজন ইলেট্রনিক্স ব্যবসায়ী।
নি¤œমানের পণ্য ভালো পণ্যের বিল প্রদান এবং কর্তৃপক্ষ কিভাবে বুঝে নিয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে মুজিবনগর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ান আহমেদ বলেন, টেন্ডার কমিটির সকলেই বুঝে নেবেন।
এদিকে, মেহেরপুর হোটেল বাজারের ব্রাদার্স স্টোরের প্যাডে হাসপাতালের বিভিন্ন স্থান ও পাত্র পরিস্কার বাবদ ২৫ জুন ২ লাখ ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার দৃশ্যমান তেমন কিছু নেই। তবুও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দাবি করেছেন তিনি নিজে উপস্থিত থেকে এগুলো পরিস্কার করেছেন।
তবে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভুয়া বিলের বিষয়। মেহেরপুর ব্রাদার্স স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী মতিউর রহমানের কাছে মোবাইলে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন, হাসপাতালের লোকজন আমার কাছ থেকে স্টেশনারী পণ্য কেনে। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার বিল ভাউচারের বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। দোকানের প্যাড কে কখন নিয়ে কি করে তা বলা মুশকিল বলেও দাবি করেন তিনি।
অপরদিকে, একই তারিখে মেহেরপুর জোহা এন্টারপ্রাইজের প্যাডে ইসিজি মেশিন, অটোক্লেভ ও নেলাইজার মেশিন ইত্যাদি এমএসআর খাতভুক্ত মেরামত বাবদ ২ লাখ ৩৬ হাজার ৯০০ টাকার বিল প্রদান করা হয়েছে। তবে হাসপাতালের ইসিজি মেশিন অকেজো তাই এখনো হচ্ছে না রোগীদের ইসিজি। অপরদিকে জোহা এন্টারপ্রাইজের প্যাডে থাকা মোবাইল নম্বরে কল দিলেও কেউ রিসিভ করেনি।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প কর্মকর্তা ডা. রেজওয়ান আহমেদ প্রথমে বলেন, জুন ক্লোজিংয়ের জন্য টাকা উত্তোলন করে রাখা হয়। পরে তা বিল পরিশোধ করা হয়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে তিনি প্রথম কথা থেকে সরে এসে বলেন, সব কাজ ঠিকঠাক মতো করা হয়েছে। কোনোপ্রকার অসঙ্গতি নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের এ ধরনের বিল ভাউচারের বিষয়ে এলাকায় চলছে নানান সমালোচনা। রূপপুরের বালিশ কেলেঙ্কারির মতো কোনো ঘটনা এখানে ঘটেছে কি না তা খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেছেন এলাকার অনেকে।