হরিণাকুন্ডুতে গণসমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান

নির্বাচনের আগে অবশ্যই আ.লীগের বিচার করতে হবে

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেছেন, ‘দেশে বারবার গণঅভ্যুত্থান ঘটেছে, কিন্তু জনগণের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে হাজারো শহিদের রক্ত এখনও শুকায়নি। আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করছে। তারা ফিরলে তৃতীয়বারের মতো গণহত্যা চালাবে। কিন্তু জনগণ আর তাদের সে সুযোগ দেবে না। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করে অবশ্যই রাষ্ট্রের কাঠামোগত সংস্কার ও গণহত্যার দায়ে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের বিচার নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে যত ধোঁয়াশা তৈরি করা হবে, যত বিলম্ব হবে, দেশে ততই অস্থিরতা বাড়বে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে টালবাহানা জাতি মেনে নেবে না।’ গতকাল শনিবার বিকেলে ঝিনাইদহের হরিণাকু-ু প্রিয়নাথ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে উপজেলা গণঅধিকার পরিষদ আয়োজিত এক গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাশেদ খান বলেন, ‘গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগের নির্মম ও নিষ্ঠুর পতনের পর আমরা ভেবেছিলাম সমাজ থেকে চাঁদাবাজি টেন্ডারবাজি দখলবাজি বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। যারা এই অপকর্মের সাথে জড়িত তারা গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে ছিল না। তারা সুযোগ সন্ধানী ও স্বার্থপর হিসেবে পরীক্ষিত নেতাদেরকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে। হাসিনার মতো জুলুম নির্যাতন, খুন গুম গণহত্যার মতো রাষ্ট্র আর চায় না। আমরা এমন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করতে চাই যেখানে এসব থাকবে না। কথা বলার অধিকার থাকবে। জনবিরোধী নেতা থাকবে না, চাঁদাবাজ টেন্ডারবাজ থাকবে না।’ তিনি বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে সবাই মিলে ন্যায় ভিত্তিক সমাজ গড়তে সাম্য মানবিক মর্যাদা ও শোষণবিহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। জুলাই বিপ্লবের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে এক কাতারে শামিল হতে হবে, নাহলে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ কাউকে রেহাই দেবে না। এ জন্য সবাইকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের মতো ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। ফ্যাসিবাদের দোসররা যেন কোনো ভাবেই দেশে মাথা চাঁড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি বলেন আওয়ামী লীগকে যারা পুনর্বাসন করার জন্য টাকা নিচ্ছেন, ডামি এমপিদের জামিন দেয়ার ব্যবস্থা করছেন, উপদেষ্টাদের কেউ কেউ আছেন যারা আওয়ামী লীগের প্রতি দুর্বলতা দেখাচ্ছেন, এমনটি করা হলে তাদেরকে সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করা হবে। আওয়ামী লীগের যারা অপরাধী যারা গণহত্যার সাথে জড়িত আমরা তাদের বিচার দেখতে চাই, তবে আওয়ামী লীগের নিরীহ কর্মীদের বিরুদ্ধে যেন কোন জুলুম বা হয়রানি না করা হয়। নতুন বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদীদের কোনো জায়গা দেয়া হবে না। রাশেদ খান বলেন, ঝিনাইদহের উন্নয়ন চাইলে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব দরকার। যে নেতা জনগণের পাশে থাকবে সে রকম নেতৃত্ব দরকার। স্বাধীনতার এত বছর পার হলেও আমরা দেশ গড়তে পারেনি। প্রত্যেকটি গণঅভ্যুত্থান শেষে যেভাবে রাষ্ট্র গঠন করার কথা ছিল, তা হয়নি। গণসমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সুমন কবির, সভাপতি প্রভাষক মো. সাখাওয়াত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল জাহিদ রাজন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান মিল্টন, জেলা পেশাজীবী অধিকার পরিষদের সভাপতি মো. রাসেল আহমেদ, জেলা যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মো. রকিবুল ইসলাম এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন। সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন গণঅধিকার পরিষদের হরিণাকু-ু উপজেলা শাখার আহ্বায়ক আমর বিন মারুফ এবং সভা পরিচালনা করেন পৌর গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক মকলেছুর রহমান (টোকন মিয়া)। সমাবেশ শেষে রাশেদ খানের নেতৃত্বে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়, যাতে গণঅধিকার পরিষদের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা অংশ নেন। এর আগে বেলা ৩টায় ঝিনাইদহ শহর থেকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা সহকারে হরিণাকু-ু পৌঁছান রাশেদ খান।