সাময়িক স্থগিত কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের নির্বাচন

ভোটের দাবিতে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ লিখিত দিলেন এমডিকে

দর্শনা অফিস: কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন বরাবরই আলোচনা-সমলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হলেও এবার ব্যাতিক্রম ঘটনা ঘটেছে। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একের পর এক অঘটন ঘটেই চলেছে। ভোট বন্ধের ষড়যন্ত্রের জাল এমনভাবেই বিস্তার করা হয়েছে যা থেকে বের হতে নাকানি-চুবানি খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। শুরু থেকেই এ ভোট নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। শেষ অবধি প্রশ্নকারিদের মন্তব্যই হলো সঠিক। নির্ধারিত দিনে ভোটতো হলোইনা বরং শেষ অবধি স্থগিত করা হলো সাময়িকভাবে। স্মরণকালের রেকর্ড ভেঙেছে এবারের ভোটের বহুমুখি ষড়যন্ত্র। নির্বাচনমুখি শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে কোনভাবেই কাটছে না হতাশার চিহ্ন। এ হতাশা শুরু হয়েছে সাধারণসভার আগের রাত থেকে। অবশ্য তার আগে প্রচার-প্রচারণায় জমকালো ভাব থাকলেও দিনদিন তা তিমিরে হারিয়েছে। উৎসবমুখর পরিবেশের স্থরে বেদনা বিধুরে রূপ নিয়েছে শেষ পর্যন্ত। গত ১৮ জানুয়ারি সাবেক কার্যনির্বাহী পরিষদের শেষ বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৫ জানুয়ারি ঘোষণা করা হয় দ্বি-বার্ষিক সাধারণসভার। সাধারণসভার ঠিক আগের দিন অর্থাৎ ২৪ জানুয়ারি সৃষ্টি হয় প্রথম জটিলতার। মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সাথে দীর্ঘ বৈঠক শেষে রাত দুটোর দিকে সে সমস্যার সমাধান হয়। শেষ অবধি সে জটিলতার গিটও খোলা সম্ভব হয়। গভীর রাতে দর্শনা থানা পুলিশকে ৬ সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী কোন প্রকার সহিংসতা হবে না মর্মে লিখিত মুচলেখা দিয়ে সাধারণসভার অনুমতি নেন। ৮ ফেব্রুয়ারি ভোটের স্থলে সাধারণসভায় গঠনতন্ত্রজনিত কারণে তা পরিবর্তন করে নির্ধারণ করা হয় ১৬ ফেব্রুয়ারি। অবশ্য এ সমস্যার গিট খুব সহজেই প্রার্থীরা ছোট বৈঠকে খুলে ফেলেন। ১৯৩৮ সালে কেরুজ চিনিকল প্রতিষ্ঠা হলেও ১৯৫৮ সালে শ্রমিক-কর্মচারি ইউনিয়নের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সে থেকেই ইউনিয়নের মেম্বার (সদস্যরা) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকেন ওয়ার্ড ভিত্তিক। চিনিকলের হিসাব, প্রসাশন ভান্ডার, স্বাস্থ্য বিধান, ইমারত, সেনিটেশন, হাসপাতাল, চোলাই মদ কারখানা, ডিস্টিলারি, বিদ্যুত ও কারখানা, প্রকৌশলী, পরিবহন, ইক্ষু উন্নয়ন, ইক্ষু সংগ্রহ বিভাগ সহ বাণিজ্যিক খামারগুলো নিয়ে গঠিত ৭টি ওয়ার্ড। ওয়ার্ড ভিত্তিক ভোট গ্রহণের মাধ্যমেই সদস্য নির্বাচিত হলেও হঠাৎ করেই সে প্রথা বাতিল করেছে কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তর। ফলে এবারের নির্বাচনে মেম্বার প্রার্থীকেও সমগ্র এলাকার ও ভোট গ্রহনের প্রথা চালু করা হয়। পরে ওয়ার্ড নির্ধারণ করা হবে। এ নিয়ে কেরুজ ৯ শ্রমিক নেতা সমস্যা সমাধানে কুষ্টিয়া শ্রম অধিদপ্তরেও যান। কর্তা মশাইদের সাথে দীর্ঘ বৈঠকেও হয়নি সমাধান। যে কারণে মেম্বার প্রার্থীরা সমগ্র ভোট গ্রহণের মাধ্যমেই নির্বাচনের আলোচনার মধ্যে ছিলেন। সে সমস্যার গিট না খুলতেই ফের নতুন করে বড় ধরণের সমস্যার দেয়াল হয়ে দাঁড়াই চুক্তি ভিত্তিক শ্রমিক ভোটার নিয়ে। গত ৩ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম দপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জহিরুল হোসেন স্বাক্ষরিত একপত্রে উল্লেখ করা হয় স্থায়ী ও মরসুমি পদে নিয়োজিত বা কর্মরত শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়নের সদস্য হওয়া ও কর্মকর্তা নির্বাচনে ভোট প্রদানে আইনগত কোন বাঁধা নেই। তথ্যনুয়ায়ী এবারের নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা হতে পারে ১ হাজার ২শ বা তার বেশী ও কম। সেক্ষেত্রে চুক্তি ভিত্তিক শ্রমিক ভোটার ৪শ’র বেশী। চুক্তিভিত্তিকদের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেয়া হলে মোট ভোটারের ৩ ভাগের ১ ভাগ ভোটাধিকার বঞ্চিত হবে। জটিল দুটো সমস্যা সমাধানে সকল প্রার্থীকে নিয়ে বৈঠক করেছেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এ নিয়ে চুক্তিভিত্তিক ভোটাররা আন্দোলন কর্মসূচি পালনও করেছে। তবে আন্দোলনের সময়টা বেশী দীর্ঘ হয়নি। সকালে আন্দোলন করলেও বিকেলে তা সমাধান দেয় কুষ্টিয়া শ্রম অধিদপ্তর। একপত্রে জানানো হয় চুক্তিভিত্তিকরাও ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ বলবৎ থাকবে। ৫ ফেব্রুয়ারি এ জটিল সমস্যা গিট ছুটলেও ৬ ফেব্রুয়ারি বড় ধরণের জটিলতা সৃষ্টি হয়। ওই দিন দুপুরে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের ই-মেইল বার্তায় জানা যায় এবারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বি সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সৌমিক হাসান রূপমকে বন্ধ পঞ্চগড় চিনিকলে বদলি করা হয়েছে। এ খবরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কেরুজ আঙিনা। শুরু হয় বিক্ষোভ সভা ও আন্দোলন কর্মসূচি। বিক্ষাভকারীরা টানা ১০ ঘণ্টা আখ মাড়াই বন্ধ করে দেয়। দফায় দফায় মিলের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের সাথে শ্রমিক-নেতৃবৃন্দের বৈঠক অব্যাহত রাখে। রূপমের বদলি আদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রমিক নেতৃবৃন্দ দাঁড়ান এক কাতারে। এক পর্যায়ে শ্রমিক নেতৃবৃন্দ মিলের ব্যবস্থাপনা পর্ষদে লিখিত দেন রূপমকে ছাড়া নির্বাচনে অংশ নেবেনা কোন প্রার্থী। ফলে সাময়িকভাবে নির্বাচন কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য লিখিত আবেদনও করা হয়। সে মতেই ১৬ ফেব্রুয়ারির ভোট স্থগিত করা হয়। তাতেও দমেনি ষড়যন্ত্রকারিরা। কেরুজ এলাকায় কে বা কারা সম্প্রতি আতংক ছড়িয়েছে বিভিন্ন স্থানে শক্তিশালি বোমা রেখে। ফলে গত ৩ দিনের ব্যবধানে পৃথক তিনটি স্থান থেকে ৬টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধারের ঘটনাও ঘটেছে। যা নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারায় নীলনকশা বলেও মন্তব্য শ্রমিক-কর্মচারীদের। এবার সকল ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে ভোটের পথেই হাটতে চাচ্ছেন প্রার্থীরা। রূপমকে ছাড়াই নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি হয়েছেন সকল প্রার্থী। যে কারণে নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহী ৩২ প্রার্থীর স্বাক্ষরিত পত্র গতকাল সোমবার জমা দেয়া হয়েছে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসানের কাছে। প্রার্থীদের আবেদনে বলা হয়েছে সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে সব ধরণের অনাকাংখিত অপ্রীতিকর ঘটনার দায়ভার নিয়েই ভোট করতে আগ্রহী। ফলে যত দ্রুত সময়ে সম্ভব নির্বাচনের ব্যবস্থা করার দাবী করা হয়েছে। এ ব্যাপারে মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান বলেন, কেরুজ এলাকায় সম্প্রতি সময় বোমা আতংকের কারণে ভীতিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তবুও চিনিকলের সদর দপ্তর, খুলনা রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি মহোদয়, চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করা যায় কী-না দেখবো।