স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজে স্বল্প সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত মো. গোলাম ছরোয়ার আর কতদিন দায়িত্বে অধিষ্ঠিত থাকবেন? কলেজটি জাতীয়করণ তথা সরকারিকরণের ঠিক আগমূহুর্তে ৪ জন সিনিয়র শিক্ষককে ডিঙ্গিয়ে সাময়িক সময়ের জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হয়েছিলেন তিনি। সেই থেকে টানা তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে পদটি কৌশলে যেমন আখড়ে আছেন, তেমনই কয়েকজনকে সাথে নিয়ে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অর্থও তছরুপ করছেন বলে অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন। তাদের দাবি, সরকারি বিধি মোতাবেক যত দ্রুত অধ্যক্ষ নিযুক্ত করা হবে কলেজটির জন্য ততই কল্যাণ।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১৭ আগস্ট ঐতিহ্যবাহী এই কলেজটি সরকারি ঘোষণা করা হয়। ঠিক তার কিছুদিন আগে কলেজের তৎকালীন গভর্ণিং বডি নিয়ম-নীতি অনেকটা উপেক্ষা করে মো. গোলাম ছরোয়ারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেন। ভুক্তভোগীদের দাবি, মো. গোলাম ছরোয়ারকে অধ্যক্ষ নিয়োগের মধ্যদিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালাকে চরমভাবে অগ্রাহ্য করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা অনুযায়ী কোনো ডিগ্রী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হতে হলে সেই শিক্ষকের বিষয়টি ডিগ্রী পর্যায়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকতে হবে। বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গোলাম ছরোয়ার যে বিষয়ের শিক্ষক, সেই বিষয়টি (কৃষি শিক্ষা) ডিগ্রী পর্যায়ে অধিভুক্ত নয়। কিন্তু পূর্বে নিযুক্ত অধ্যক্ষের অবসরের সুযোগে সরকারি ঘোষণার আট মাস আগে ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি থেকে তৎকালীন গভর্নিং বডিকে ম্যানেজ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বলাভ করেন। সিনিয়র শিক্ষক যথাক্রমে আবু সৈয়দ মো. আল মামুন রেজা, মো. আলম হোসেন, মোহা. আব্দুল মোনায়েম ও শেখ শফিউজ্জামানকে ডিঙ্গিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্বলাভ করেন। ২০২০ সালে মহামান্য হাইকোর্টের রায়ে সংসদ সদস্যকে সভাপতির দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়ার পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সভাপতির দায়িত্ব পান। কিন্তু তারপরও এই ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধ হয়নি। অধ্যক্ষের এসব অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কতটা জানেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শিক্ষা সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকার ২০১৮ সালে সারাদেশের ৩২৬টি বেসরকারি কলেজকে সরকারিকরণ করে। এসব কলেজের যেগুলোতে নিয়মিত অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষ নেই, সেখানে ডেপুটেশনে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেয়া হলেও তিন বছরেও আলমডাঙ্গা সরকারি কলেজে তা করা হয়নি। এদিকে কলেজের খরচ খাতওয়ারি করার কথা থাকলেও নিজের ইচ্ছেমত সাব কমিটি গঠন করে পছন্দের শিক্ষকদের মাধ্যমে মালামাল ক্রয় দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার কর্মকালীন সময়ে ক্রয়কৃত মালামালের বিপরীতে ভ্যাট প্রদান করা হয়নি বলেও জানা গেছে। ১৯৬৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই কলেজটিকে রক্ষায় গোলাম ছরোয়ারকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে নিয়মিত অধ্যক্ষ নিয়োগ এবং গোলাম ছরোয়ারের কর্মকালীন সময়ে আর্থিক অনিয়ম ও ক্ষমতা অপব্যবহারের বিষয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে। কলেজের গভর্নিং বডির সাবেক একাধিক সদস্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও দুদকে অভিযোগ দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গোলাম ছরোয়ার বলেন, আমি শিক্ষকদের একটি অংশের ষড়যন্ত্রের শিকার। আমার দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষার মান অনেক উন্নত হয়েছে। যেসকল অভিযোগ করা হয়েছে তা সঠিক নয়।