স্টাফ রিপোর্টার: আলমডাঙ্গার ব্রাইট মডেল হাইস্কুলের গলাকাটা ফিস দিতে গিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। এসএসসি ফরম পূরণের সময় শিক্ষাবোর্ড দু’দফা বৃদ্ধি করলেও অনেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক ফরম পূরণের টাকা জোগাড় করতে পারেননি। ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও প্রতি মাসে ১৬০০ টাকা করে বেতন গুনতে হচ্ছে অভিভাবকদের। ফলে প্রত্যেক অভিভাবককে তার সন্তানের এসএসসির ফরম পূরণে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে। করোনা মহামারীর মধ্যে এই টাকা জোগাড় করতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এর সঙ্গে স্কুল কর্তৃপক্ষ যোগ করেছে পরীক্ষার ফিস ও ল্যাব খরচ বাবদ আরও এক হাজার টাকা। অভিভাবকরা বলছেন যেখানে ছেলে-মেয়েরা একদিনও কøাস করতে পারলো না, পরীক্ষা দিলো না এবং কম্পিউটার ল্যাবও ব্যবহার করলো না, সেখানে কেনো পুরোপুরি টাকা দিতে হবে। অন্যদিকে অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষাবোর্ডের নির্দেশ অমান্য করে নিজেদের মনগড়া কায়দায় এসএসসির ফরম পূরণের টাকা নিচ্ছে ব্রাইট মডেল স্কুল।
অভিভাবকদের অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরে কয়েক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয় মালিকানাধীন ব্রাইট মডেল হাইস্কুল। পরবর্তীতে বিদ্যালয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড থেকে পাঠদান ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হয়। বিদ্যালয়টিতে এ বছর ২৮০জন এসএসসি পরীক্ষা দেবে। এ জন্য স্কুল কর্তৃপক্ষ ফরম পূরণের কাজ করছে। কিন্তু তারা শিক্ষাবোর্ডের কোনো নির্দেশনা মানছেন না। চলতি মাসের ৭ এপ্রিল থেকে এসএসসি ফরম পূরণের লক্ষ্যে ৫ এপ্রিল বোর্ডের ওয়েবসাইটে নোটিশ দেয় বোর্ড কর্তৃপক্ষ। তাতে বলা হয় বিজ্ঞান বিভাগে বোর্ড ফি ১৫০৫ টাকা এবং কেন্দ্র ফি ৪৬৫ টাকা। সর্বসাকুল্যে ১৯৫০ টাকা এবং ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে বোর্ড ফি ১৪১৫ ও কেন্দ্র ফি ৪৩৫ টাকা সর্বসাকুল্যে ১৮৫০ টাকার বেশি নেয়া যাবে না। কিন্তু এ ঘোষণার আগেই আলমডাঙ্গার ব্রাইট মডেল স্কুল কর্তৃপক্ষ জনপ্রতি ২৩০০ টাকা হারে আদায় শুরু করে। এছাড়া এ বছর বোর্ড কর্তৃপক্ষ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফরম পূরণের নির্দেশনা দিলেও তা মানছে না ব্রাইট মডেল স্কুল। তারা নগদ টাকা তুলছেন অভিভাবকদের কাছ থেকে। বোর্ডের নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যালয়ের পাওনা লিখে অভিভাবকদের মোবাইল নম্বরে এসএমএস সেন্ট করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরীক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন নম্বর ও একটি পিন নম্বর যাচ্ছে। অভিভাবকরা ঘরে বসে কিংবা যেকোনো বিকাশ অথবা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দোকান থেকে ফরম পূরণের কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন। অথচ অভিভাবকরা বলছেন তারা মোবাইলে এখন পর্যন্ত কোনো এসএমএস পাননি।
আলমডাঙ্গার মুন্সিগঞ্জের রেজা আল মামুন অভিযোগ করে বলেন, মহামারী করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। অথচ আমাদের কাছ থেকে গলাকাটা বাণিজ্য করছে ব্রাইট মডেল স্কুল। আমার মেয়ের প্রতি মাসের বেতন এক হাজার ছয়শ’ টাকা। স্কুল চললে হয়তো মাসে মাসে আমরা বেতন দিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু প্রায় দেড় বছর তারা আমাদের সন্তানের কোনো লেখাপড়া করাননি। অথচ তারা পুরো দেড় বছরের বকেয়া বেতন ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে একত্রে দাবি করছেন। এটা কিভাবে দেয়া সম্ভব? তাছাড়া পরীক্ষা না হলেও পরীক্ষার ফি এবং কম্পিউটার ল্যাব ফি বাবদ আরও এক হাজার টাকা দাবি করছেন তারা। না হলে আমার মেয়ের ফরম ফিলাপ হবে না। তিনি আরও বলেন, এ ব্যাপারে আমি জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিতভাবে অভিযোগ করবো। জামজামি গ্রামের মিজানুর রহমানও একই কথা বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, করোনা মহামারীর মধ্যে মেয়ের এসএসসি ফরম পূরণ আমার জন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি এখন এত টাকা কোথায় পাবো? এ বিষয়ে আলমডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাটবোয়ালিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলি মাস্টার বলেন, ‘করোনা মহামারীর মধ্যে এত টাকা দাবি করা অবান্তর এবং অমানবিক। যেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বিভিন্নভাবে প্রণোদনা নিয়ে অসচ্ছল মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরাও সেই চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, আমার স্কুলের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের সমস্ত বেতন মওকুফ করে দিয়েছি। তারা শুধু বোর্ড ও কেন্দ্রের ফিস দিয়ে ফরম পূরণ করছে। তাতে মানবিক বিভাগে ১৮৫০ ও বিজ্ঞান বিভাগে ১৯৭০ টাকা লাগছে। এ বিষয়ে ব্রাইট মডেল স্কুলের এসএসসি পরিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা জেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
মোবাইলফোনে যোগাযোগ করা হলে ব্রাইট মডেল হাইস্কুলের শ্রেণিশিক্ষক শরিফুল ইসলাম বলেন, ফরম পূরণ করতে যে টাকা নেয়া হচ্ছে তা নিয়ম মেনেই নেয়া হচ্ছে। এর বেশি কিছু জানার থাকলে তিনি সরাসরি প্রধান শিক্ষক বা পরিচালকের সাথে কথা বলার পরামর্শ দেন। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক জাকারিয়া হিরোর সাথে গতকাল দিনভর যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মোবাইলফোন বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তবে কয়েকজন অভিভাবক বলেছেন, ফরম পূরণ কার্যক্রম শুরু থেকেই তার মোবাইল বন্ধ পাচ্ছি। ফরম পূরণ চলাকালীন তিনি কৌশলগত কারণে মোবাইলফোন বন্ধ রেখেছেন। যাতে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিষয়ে কারও কোনো সুপারিশ না শুনতে হয়।
তবে, মোবাইলফোনে কথা হয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ওবাইদুল আজাদ জনির সাথে। ফরম পূরণে কত টাকা নেয়া হচ্ছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্র-ছাত্রীদের ২৩শ’ টাকার কথা বলা হয়েছে। মানবিক বিভাগে ১৮৫০ টাকা এবং বিজ্ঞান বিভাগে ১৯৭০ টাকা বোর্ড নির্ধারিত থাকলেও ২৩০০ টাকা কেন নেয়া হচ্ছে? এ প্রশ্নের উত্তরে প্রধান শিক্ষক বলেন, যেহেতু এটা প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান আপনার এসব প্রশ্নের উত্তর দেবেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালক। অর্থনৈতিক কোনো ব্যাপারে আমরা শিক্ষকরা কোনোপ্রকার সিদ্ধান্ত নিই না। মালিকপক্ষের নির্দেশনাতেই সবকিছু হয়ে থাকে। পরিচালকের মোবাইল বন্ধ থাকার বিষয়টি জানালে তিনি সশরীরে পরিচালকের সাথে দেখা করার জন্য পরামর্শ দেন। অবশ্য মাসিক ১৬০০ টাকা বেতন নেয়ার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক বলেছেন, ২০২০ সালের ৬ মাস ফুল বেতন এবং ৬ মাস অর্ধেক বেতন নেয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ইমরুল হক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ‘বোর্ড নির্ধারিত ফি’র বেশি কোনোভাবেই কোনো প্রতিষ্ঠান আদায় করতে পারবে না। তা যদি আদায় করেও থাকে তাকে অবশ্যই ফেরত দিতে হবে।