সমাজে অস্থিরিতা সৃষ্টিকারীদের রুখতে কমিটির সদস্যসহ সকলকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান

‘পুলিশ-জনতা ঐক্য করি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ স্লোগানে চুয়াডাঙ্গায় কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার: সমাজ শান্তিপূর্ণ ও শৃঙ্খলাবদ্ধ রাখতে এবং অস্থিরিতা সৃষ্টিতে উশৃঙ্খল চক্রান্তকারীদের রুখতে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সদস্যসহ সমাজের সচেতন মহলকে দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেছেন, কাউকে পিছে ফেলে নয়- সকলকে পাশে নিয়ে সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রিয় দেশকে প্রত্যাশিত উন্নয়নের শীর্ষে নেয়ার প্রয়াসে আমাদের সকলকে কাজ করতে হবে।
‘পুলিশ-জনতা ঐক্য করি, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলি’ প্রতিপাদ্য সামনে নিয়ে গতকাল শনিবার অনুষ্ঠিত কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত শোভাযাত্রা উত্তর আলোচনাসভায় প্রধান পৃষ্টপোষকের বক্তব্যে জেলা প্রশাসক উপরোক্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, পুলিশ জনগণকে পাশে পেলে আইন শৃঙ্খলা ক্রমউন্নতি অধিকতর সহজতর হয়। চরম এ বাস্তব উপলব্ধি থেকে গঠিত কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা সমাজের জন্য কল্যাণকর হয়েছে, হচ্ছে। চলমান ধারা অব্যাহত রাখতে আমরা বদ্ধ পরিকর।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার ও পুলিশিং কমিটির প্রধান উপদেষ্টা আব্দুল্লাহ আল মামুনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিউনিটি পুলিশিং ডে উদযাপনের আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মঞ্জু, সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শিরিন নাঈম পুনম, চুয়াডাঙ্গা পৌর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মালিক খোকন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মুন্সি আলমগীর হান্নান, জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির আহ্বায়ক সাবেক অধ্যক্ষ মো. কামরুজ্জামান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটর সদস্য সচিব সোনালী ব্যাংকের সাবেক সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মো. মনিরুজ্জামান।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান মনজু বলেন, কমিউনিটি পুলিশিং আমাদের দেশের জন্য প্রয়োজন ছিলো। পুলিশিং কমিউনিটির কারণে গ্রামে মামলা করার প্রবণতা কমেছে। পুলিশের মহান মুক্তিযুদ্ধে গৌরব একটা ইতিহাস আছে। পুলিশ এখন অনেক স্মার্ট, চৌকস। লজিস্টিক সাপোর্ট ভালো হয়েছে। আমরা আশা করি পুলিশ দক্ষতার মাধ্যমে নিজেদের গৌরবান্বিত করার জন্য সঠিক দায়িত্ব পালন করবেন। চুয়াডাঙ্গা একসময় সন্ত্রাসী এলাকা ছিলো। পুলিশের তৎপরতায় সেই সন্ত্রাস এখন নেই।
সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও সাবেক নারী সংসদ সদস্য শিরীন নাঈম পুনম বলেন, জনতাই পুলিশ এবং পুলিশই জনতা। এটা বঙ্গবন্ধুর ট্রপিক ছিলো। ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা আবার ক্ষমতায় এসে আমাদেরকে রুপকল্প ২০২১ বলেছে। তখন কিন্তু আমরা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারিনি এটা কি করে সম্ভব। ডিজিটাল বাংলাদেশ, রাস্তা ঘাটের উন্নয়ন করবো, স্যাটেলাইট পাঠাবো, ট্যানেল করবো, রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্র করবো, পদ্মা সেতু করবো। আমরা মেট্রোরেল করবো। চুয়াডাঙ্গাতে এত বড় বড় স্থাপনা করবো। যেগুলো অতীতে ছিলো না। একটা সময় রাস্তা ঘাট ছিলো না, স্কুল-কলেজের কোনো বিল্ডিং ছিলো না। এখন তার সবই হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যার জন্য। এই উন্নয়নের সাথে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর ব্যাপক ভয়মিকা আছে। সেই সাথে পুলিশ বাহিনীকেও আধুনিকায়ন করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। তিনি আরও বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি হলো নারী। সেই নারীকে ঘরে বন্দি করে রাখলে দেশের কোনো উন্নয়ন হবে না। আজ যেমন র‌্যালিতে নারী পুলিশ সদস্যরা আসছিলো ঠিক তেমনি প্রতিটা ক্ষেত্রে নারীদেরকে এগিয়ে নিতে হবে, তাহলেই দেশকে আরও উন্নত করা সম্ভব হবে।
কমিউনিটি পুলিশিং ডে’র আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞ, কারণ অপরাধ সংঘটের ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ খবর আসে সাধারণ জনগণের মধ্য দিয়েই, তাই পুলিশ জনগণের বন্ধু। এই কমিউনিটি পুলিশিংকে আমাদের স্মার্ট করতে হবে এবং সেটি আপনাদের সহযোগিতায়। সেজন্য আমরা সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। আলোচনাসভার আগে চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের প্রধান কেন্দ্র শহীদ হাসান চত্বর থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের নিকটস্থ জেলা প্রশাসক সাহিত্য মঞ্চে শেষ হয়। শোভাযাত্রার নেতৃত্বে ছিলেন পুলিশ সুপার। জেলা পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাসহ পুলিশিং কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সদস্যগণ শোভাযাত্রায় অংশ নেন।
আলোচনাসভা শেষে কমিউনিটি পুলিশিং ডে -২০২৩ উদযাপন উপলক্ষে চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের পক্ষে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সনদ উপহার প্রদান করা হয়। রচনা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে যারা পুরষ্কার পেয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন ক’ বিভাগে যাথাক্রমে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় চুয়াডাঙ্গা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী মোছা. তাবাসসুম সুমাইয়া, আলিয়ারপুর আজিজ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাগীব নূর ও ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র শান্তনু ইসলাম অন্তু। খ’ বিভাগে যথাক্রমে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেনে, কার্পাসডাঙ্গা ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী মোছা. সুমাইয়া খাতুন, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মিথিলী বিনতে মাসুম ও সরকারি আদর্শ মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী ইছমিকা আক্তার অলি। গ’ বিভাগে যথাক্রমে প্রথম দ্বিতীয় ও তৃতীয় হয়েছেন চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের স্নাতকোত্তর মোছা. শারমিন আক্তার, একই কলেজের স্নাতকোত্তর মোছা. ইসমত আরা ও স্নাতকোত্তর মোছা. সুরাইয়া ইয়াছমিন। বিকেলে চুয়াডাঙ্গা পুলিশ লাইন্স মাঠে প্রীতি ফুটবল খেলার আয়োজন করা হয়। প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতায় ‘জেলা পুলিশ একাদশ’ বনাম ‘কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য একাদশ’ অংশগ্রহণ করে। প্রীতি ফুটবল খেলায় জেলা পুলিশ একাদশ ০৩-০২ গোলে জয়লাভ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটি পুলিশিংয়ের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা, চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ্ আল-মামুন, চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজিম উদ্দীন আল আজাদ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রিয়াজুল ইসলাম, সহকারী পুলিশ সুপার জাকিয়া সুলতানা, চুয়াডাঙ্গা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও জেলা কমিনিউটি পুলিশিং সমম্বয় কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর মো. কামরুজ্জামান, সদস্য সচিব মো. মনিরুজ্জামানসহ জেলা পুলিশের সকল পদমর্যাদার অফিসার ফোর্স, কমিউনিটি পুলিশিং নেতৃবৃন্দ এবং প্রীতি ফুটবল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী খেলোয়াড়গণ।