শিশু সন্তান ফিরে পেতেসহ চুয়াডাঙ্গা মানবতা ফান্ডেশনে আইনি সহায়তা দুটি আবেদন

স্টাফ রিপোর্টার: ৬ বছরের শিশু সন্তান ফিরে পেতে আইনি সহায়তা চেয়েছেন শ্রীমতী লক্ষ্মী রাণী। গতকাল রোববার চুয়াডাঙ্গা মানবতা ফাউন্ডেশনে আবেদন করেন তিনি। আবেদন পাওয়ার পর সব ধরণের আইনি সহায়তা দিতে পাশে দাঁড়িয়ে সংস্থাটি। শ্রীমতী লক্ষ্মী রাণী আলমডাঙ্গা উপজেলার পূর্ব কমলাপুর ব্রিজ মোড়ের হেমন্ত কর্মকারের মেয়ে এবং একই উপজেলার নান্দবার গ্রামের শ্রী শিমুল প্রামানিক স্ত্রী। শ্রী শিমুল প্রামানিক প্রায় ১১ মাস আগে আত্মহত্যা করেন। এছাড়াও আইনি সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছেন চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার মৃত আবু বকর সিদ্দিকের ছেলে তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চুয়াডাঙ্গার মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাড. মানি খন্দকার।
এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে তিনি জানান, আলমডাঙ্গা উপজেলার নান্দবার গ্রামের শ্রী নিরঞ্জন প্রামানিকের ছেলে শ্রী শিমুল প্রামানিকের সাথে বিয়ে হয় পূর্বকমলাপুর ব্রিজ মোড়ের হেমন্ত কর্মকারের মেয়ে শ্রীমতী লক্ষ্মী রাণী। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় প্রায় ১১ মাস আত্মহত্যার পথ বেছে নেন শিমুল প্রামানিক। তাদের ৬ বছর বয়সী অর্জুন কুমার প্রামানিক নামের এক সন্তান রয়েছে। শিমুল প্রামানিকের মৃত্যুর পর শ্রীমতী লক্ষ্মী রাণী পিতার বাড়িতে ফিরে আসেন। কিন্তু তার শিশু সন্তানকে আটকে রাখেন শিমুলের পিতা নিরঞ্জন প্রামানিক ও মা বিশুকা প্রামানিক। ১১ মাসে একবারও তার মায়ের সাথে দেখা করতে দেয়া হয়নি।
স্থানীয় মোড়ল মাতব্বর, স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে অভিযোগ দিলে পুলিশ শিশুকে তার মায়ের কাছে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিলেও দাদা বাধা দেয়ায় মায়ের কাছে যেতে পারেনি অর্জুন কুমার। সন্তান ফিরে পেতে স্থানীয় মাতুব্বরদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় গতকাল রোববার আইনি সহায়তা চেয়ে মানবতা ফাউন্ডেশনে আবেদন করেন শ্রীমতী লক্ষ্মী রাণী।
অপরদিকে, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার তাহমিদ আহমেদ সিদ্দিকীর স্ত্রী ছালিমা খাতুনের বিরুদ্ধে পালিত পুত্র রিদওয়ান সিদ্দিকীকে তার গর্ভজাত ও তাহমিদ আহমেদ সিদ্দিকীর ঔরষজাত সন্তান দাবি করে জমি জবর দখল করে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগ করেছেন তাহমিদ আহমেদ সিদ্দিকীর ছোট ভাই তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী। গতকাল রোববার অভিযোগে আইনি সহায়তা তুলে মানবতা ফাউন্ডেশন বরাবর আবেদন করা হয়। তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী অভিযোগ করে বলেন, তার দেড় বছরের বড় ভাই তাহমিদ আহমেদ সিদ্দিকী ছোট বেলা থেকেই পারকিনসন রোগে আক্রান্ত ছিলেন। বাবা সরকারি চাকরি করতেন। তিনি হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ছিলেন। বড় ছেলেকে একই ডিপার্টমেন্ট চাকরি দিয়েছিলেন। শখ করে বাবা-মা বড় ভাইকে বিয়ে দেন। শারীরিক অসুস্থতার কারণে তাদের সন্তান হতো না। ঢাকায় চাকরি করা অবস্থায় অন্যজনের সন্তান রিদওয়ান সিদ্দিকীকে পালিত ছেলে হিসেবে গ্রহণ করেন। তানভীরের বাবা মারা যান ২০১৩ সালে। বড় ভাই তাহমিদ আহমেদ সিদ্দিকী মারা যান ২০১৭ সালে এবং মা তহুরুন নেছা মৃত্যুবরণ করেন ২০১৯ সালে। স্বামীর মৃত্যুর পর ছালিমা খাতুন অতিরিক্ত সম্পত্তি হাতিয়ে নেয়ার মানসে রিদওয়ান সিদ্দিকীকে তার গর্ভজাত ও তাহমিদ আহমেদ সিদ্দিকীর ঔরষজাত সন্তান দাবি করে বিজ্ঞ চুয়াডাঙ্গা সদর সহকারী জজ আদালতে সন্তানের দেহ ও সম্পত্তির অভিভাবক নিযুক্তির জন্য মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাদী করা হয় শাশুড়ি তহুরুন নেছাকে। অথচ সমন চেপে একতরফা রায় করেন তিনি। শাশুড়ির মৃত্যুর ২ বছর পর একতরফা ডিগ্রির বিষয়টি জানতে পারেন তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী। তিনি প্রতারণা মূলে জবরদখল করে রাখা অতিরিক্ত সম্পত্তি ফেরতের বিষয়ে ভাবীকে বলেন। কিন্তু ভাবী সম্পত্তি ফেরত দিতে অস্বীকৃতি জানান এবং মামলা করলে তাকে মেরে ফেলা হবে মর্মে হুমকি দেন। তানভীর আহমেদ সিদ্দিকী সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালতে গতকাল রোববার মামলা দায়ের করেন। মানবতা ফাউন্ডেশন আইনি সহায়তা দিয়েছেন বাদীকে। বাদী তার কথিত ভাতিজা রিদওয়ান সিদ্দিকীর ডিএনএ পরীক্ষার আবেদনও করেছেন মামলাতে। মানবতা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট মানি খন্দকার জানান, দুটি আবেদন পত্র গ্রহণ করে, সংস্থার নির্বাহী কমিটির সম্মানিত সদস্যগণ ভিকটিমকে যাবতীয় আইনি সহায়তা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সমস্যাটির আইনি সমাধান ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় শিশু বাচ্চাটিকে তার মায়ের বুকে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।