স্টাফ রিপোর্টার: কম্পিউটার ও ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেয়ার নামে টাকা আত্মসাতের অভিযোগে চুয়াডাঙ্গার আলুকদিয়া রোমেলা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে অবরুদ্ধ করার ঘটনা ঘটেছে। প্রায় তিন ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর পুলিশের সহোযোগিতায় তিনি মুক্ত হন। তবে প্রধান শিক্ষকের অভিযোগ আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। এমনকি ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নিয়ে আমাকে চেয়ারম্যানসহ তার লোকজন মারধর করেছেন। গতকাল বুধবার বেলা ১১টার দিকে সদর উপজেলার আলুকদিয়া রোমেলা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে ওই ঘটনার সূত্রপাত হয়। প্রায় ৩ ঘন্টা অবরুদ্ধ থাকার পর ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে তাকে উদ্ধার করে পুলিশ।
আলুকদিয়া এলাকার আহসান সাকিব, শিহাব উদ্দিন, ফারহান হোসেন, শোভন আলী, অভি ইসলামসহ বেশ কয়েকজন প্রশিক্ষণার্থী জানান, আমরা বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থী। সম্প্রতি আমাদের কম্পিউটার ও ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ দেয়ার নামে এক হাজার টাকা করে জমা নেন আলুকদিয়ার রোমেলা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান। আমাদের মতো আরও ৩০ জন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ দেয়ার নামে ওই টাকা নেন তিনি। প্রশিক্ষণে একটি ব্যাগ ও খাবার দেয়ার কথা ছিলো। প্রশিক্ষণ শেষে ৫ হাজার টাকা করে দেয়ারও আশ্বাস দেন তিনি। বিক্ষুব্ধরা আরও জানান, প্রশিক্ষণ শুরু না করায় প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি জিজ্ঞেস করা হয়। তিনি প্রশিক্ষণের বিষয়টি অস্বীকার করেন। প্রশিক্ষণ না দেয়ায় টাকা ফেরত চাইলে প্রধান শিক্ষক খারাপ আচরণ করেন। পরে তাকে অবরুদ্ধ করা হয়।
আলুকদিয়ার রোমেলা খাতুন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আক্তারুজ্জামান জানান, সমাজসেবা কার্যালয় কম্পিউটার ও ড্রাইভিং ট্রেনিংয়ের জন্য পত্রিকায় সার্কুলার দেয়। মানবকল্যাণ ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংস্থা ওই প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। প্রথমে অনুমতি না পেলেও পরে মৌখিকভাবে আমাকে অনুমতি দেন ইউএনও মহোদয়। স্কুলে ভেন্যু ভাড়া হিসেবে আমাকে ১০ হাজার টাকা দেয়ার কথা ছিলো আয়োজকদের। আমি প্রশিক্ষণার্থীদের কাছ থেকে কোনো টাকা পয়সা গ্রহণ করিনি। টাকা পয়সার বিষয়টি ষড়যন্ত্রমূলক। তিনি আরও জানান, এক পর্যায়ে স্কুল থেকে আমাকে ডেকে নেন আলুকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ। এ সময় তিনি পরিষদে নিয়ে আমাকে গালাগালি করেন এবং মারধর করেন। পরে তার লোকজন দলেচটকে আমাকে মারেন। এ সময় আমি বাঁচার জন্য ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিলে পুলিশ আমাকে রক্ষা করে।
এ ব্যাপারে আলুকদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, দুপুরে ঘটনাটি শুনে বিদ্যালয়ে গিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের শান্ত করি। পরে ওই প্রধান শিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীদের ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে বিষয়টি মিমাংসা করার চেষ্টা করি। কিন্তু তা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গার শিক্ষক নেতা ফজলুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক যদি অবৈধভাবে কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েই থাকেন, তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া যায়। কিন্তু তাকে ইউনিয়ন পরিষদে ডেকে নিয়ে মারধর করা অন্যায়।
সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আবু সাঈদ জানান, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়। প্রশিক্ষণার্থীদের সাথে কথা বলে তাদের শান্ত করে পুলিশ।
এ বিষয়ে সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ কুমার সাহা বলেন, দুপুরে বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। ইভটিজিংয়ের মতো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে বালিকা বিদ্যালয়ে বহিরাগতদের প্রশিক্ষণ দেয়ার বিষয়টি একাধিকবার নিষেধ করা হয়। কিন্তু তা অমান্য করে প্রশিক্ষণের আয়োজন করেন প্রধান শিক্ষক।