গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুরের গাংনীতে শিশু কিশোররা নামী-দামী ব্রান্ডের দ্রুতগামী মোটরসাইকেল নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শহর ও গ্রামাঞ্চলো। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানী। তারপরও থামানো যাচ্ছে না ওই সব কিশোরদের। গত তিন মাসে গাংনীতে ২৩টি দুর্ঘটনায় ৮ জনের প্রাণহানী ঘটে। নামী দামী ব্রা-ের এসব মোটর সাইকেলের কোন রেজিস্ট্রেশন নেই। নেই কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স। ট্রাফিক পুলিশেরও কোন উদ্যোগ চোখে পড়ে না।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সর্বশেষ চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি গাংনীতে ৩টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ৩ জনের প্রাণহানী হয়। দুজন লড়ছেন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা। বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানোর কারণে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুঘটনায় প্রাণ হারায়। এরা হচ্ছেন গাংনী উপজেলার পীরতলা গ্রামের সৌদি প্রবাসী আলেক হোসেনের ছেলে সিয়াম হোসেন (১৮) ও একই গ্রামের আরেক সৌদি প্রবাসী সোহরাব হোসেন ওরফে সেন্টুর ছেলে আব্দুল্লাহেল বাকী (১৮) এবং চিৎলা গ্রামের শিপন আলী (১৭)। সকলেই শিশু-কিশোর।
বেশ কয়েকজন অভিভাবক জানান, ছেলেরা দেখা দেখি মোটর সাইকেলের বায়না ধরে। কিনে না দিলে স্কুল কলেজে যেতে চায় না। এমনকি আত্মহত্যারও হুমকী দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে বাবা মা তাদের আদরের ছেলেকে গাড়ি কিনে দেন। বিশেষ করে প্রবাসীর ছেলেরা মায়ের ওপর রাগ দেখিয়ে মোটরসাইকেল কিনে দিতে বাধ্য করে। ছেলের ভবিষ্যত ভেবে অভিভাবকরা ছেলের শখ পূরণ করেন। এতে হিতে বিপরীত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুজন অভিভাবক জানান, তাদের সন্তানরা লেখাপড়ায় বেশ ভাল ছিল। মাস ছয়েক আগে একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে পড়ার সময় একটি রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। গাড়ি কিনে না দিলে সমস্যা আছে বলে জানায়। একরকম চাপাচাপিতে গাড়ি কিনে দেয়া হয়। এখন পড়াশোনা বাদ দিয়ে ওইসব ছেলেদের সাথে রাত দিন ঘোরাফেরা করে। গভীর রাতে বাড়ি ফেরে। দুপুর পর্যন্ত ঘুমায়। ভয়ে কিছু বলা সম্ভব হয় না। শিশু কিশোররা এখন অনেকটা ভয়ঙ্কর।
স্থানীয় অনেকেই জানান, অপ্রাপ্ত বয়স্ক এসব ছেলেরা যেভাবে রাস্তায় গাড়ি চালায় তাতে পথচারীরা নিরাপদ নয়। আঁকা বাঁকা ও দ্রুত গাড়ি চালানোর কারণে রাস্তায় চলাচল কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার ওইসব মোটর সাইকেলে রেডিয়াম লাইট ও ইমার্জেন্সী হর্ণ লাগিয়ে পথচারীদের বিব্রতকর পরিস্থিতে ফেলে। অনেকেই সাইরেন বাজিয়ে পথ চলে। এক মোটর সাইকেলে তিনজন চড়ে স্কুল কলেজে আসে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষও কোন বিধি নিষেধ আরোপ করে না।
কেউ কেউ জানান, মোটর যান রেজিস্ট্রেশনের সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখানো বাধ্যতামূলক। তাই অনেকেই রেজিস্ট্রেশন না করেই রাস্তায় চলাচল করে। এছাড়াও অল্প টাকা জমা দিয়ে কিস্তিতে মোটর সাইকেল পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কিশোররা এসব মোটর সাইকেল কিনছে আবার তা চড়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাস্তা ঘাটে। বেশ কয়েকটি তেল পাম্পের ম্যানেজারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কিছু আগেও কিশোরদের এবং হেলমেট ছাড়া কাউকে তেল দেবেন না মর্মে সাইন বোর্ড দেয়া হয়। তারা পাম্পের তেল না নিয়ে লোকাল দোকান থেকে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তেল কেনে। এতে ব্যবসায় ধ্বস নামে। বাধ্য হয়ে সকলকেই তেল দেয়া হয়।
মেহেরপুর ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর ইসমাইল জানান, গাড়ির রেজিস্ট্রেশন, রোড ট্যাক্স, চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স নিয়মিত পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়। মামলাও দেয়া হচ্ছে সেটা কিশোর হোক না হয় বয়স্ক হোক। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। শিশুরা অভিভাবকদের ইমোশনালী ব্লাকমেইল করে মোটর সাইকেল কিনছে। তিনি আরো জানান, সচেতনতা বৃদ্ধিতে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে।