মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে জামায়াত নেতা তারেক মাহমুদ সাইফুল ইসলাম হত্যা মামলায় সাবেক মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে দুইদিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মেহেরপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম শারমিন নাহার এ আদেশ দেন। এ সময় তাকে ওই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। এর আগে মেহেরপুর জেলা কারাগার থেকে সকালে আসামি হিসেবে ফরহাদ হোসেন ও তার ভাই সরফরাজ হোসেন মৃদুলকে আদালতে নেয়া হয়। মামলার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আবু সালেহ মোহাম্মদ নাছিম আসামিদের ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। তবে আদালতে তাদের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে মেহেরপুর জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ মঞ্জুর করেন। গত বুধবার রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে প্রিজন ভ্যানে করে ফরহাদ হোসেনকে মেহেরপুর জেলা কারাগারে আনা হয়।
মেহেরপুর জজ আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী (পিপি) আবু সালে মো. নাসিম জানান, জামায়াত নেতা তারেক হত্যা মামলায় ফরহাদ হোসেনকে সাত দিনের রিমান্ডের আবেদন জানানো হয়েছিলো। তবে তাকে জেলগেটে দুই দিন জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। আদালতে আসামিপক্ষের আইজিবি ছিলেন অ্যাড.ইব্রাহিম শাহীন।
মামলার আরজি সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালে জামায়াত নেতা তারেককে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়ে সাবেক জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন ও মেহেরপুর সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রসুল হত্যা করান। ওই সময় আদালত কিংবা থানায় মামলা করতে পারেনি নিহতের পরিবার। ৫ আগস্ট মেহেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর হামলার ঘটনায় সদর উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের রাশেদুল ইসলাম সন্ত্রাস বিরোধী আইনে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই মামলার প্রধান আসামি হিসেবে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখিয়ে বুধবার ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মেহেরপুরে নিয়ে আসে জেলা পুলিশ।
এদিকে সকাল সাড়ে ৭টায় ফরহাদ হোসেনকে আদালতে তোলায় মেহেরপুরের মানুষজনের ভিতর দেখা গেছে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেহেরপুরের একজন বিএনপি নেতা বলেন, এই প্রথম দেখলাম এতো সকালে আদালত বসিয়ে ফরহাদ হোসেনকে আদালতে আনা হয়েছে। অথচ আমরা ঘন্টার পর ঘন্টার পর ঘন্টা আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে থেকে হাজিরা দিয়েছি। কিন্তু ফরহাদ হোসেন হত্যা মামলার আসামি হওয়া সত্বেও তাকে ভিআইপিভাবে আদালতে আনা হলো। তিনি প্রশ্ন ছুঁড়ে বলেন এখনো কি দেশের আইন সবার জন্য সমান নয়? ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি মাসুদ অরুন বলেন, আমরা অত্যন্ত আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করছি ফ্যাসিবাদের দোসর হত্যা মামলার আসামি, হাজার কোটি টাকা লুটপাটের মহা-নায়ক সাবেক জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে মেহেরপুর কারাগারে আনার পর থেকেই একটা গভীর ষড়যন্ত্র চলছে এবং সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে লোক চক্ষুর অন্তরালে ভোরে আদালতে হাজির করে স্বল্প সময়ের জন্য শুনানির মধ্য দিয়ে তাকে কারাগারে ফেরত পাঠানো হয়। অন্যদিকে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের জাতীয় নেতৃবৃন্দকে ডান্ডাবেড়ি, হাতকড়া পরিয়ে অত্যন্ত অমানবিক মর্যাদাহীনভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা কোর্টের বারান্দায় বিচারের নামে নাটক মঞ্চস্থ হয়েছে। তিনি আরও বলেন শুধু তাই নয় আজকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ৯০ বছর বয়সী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে আট তলায় পায়ে হেঁটে উঠে মিথ্যা মামলায় হাজিরা দিতে হয়েছে। মাসুদ অরুন বলেন, আমরা মনে করি ফ্যাসিবাদের দোসরের প্রতি এই সহানুভূতি জনগণের আকাক্সক্ষার বিপরীত। এই ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত সকলের সিদ্ধান্তকে আমরা অত্যন্ত নিন্দার সাথে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এই ঘটনার বিপরীতে গণতান্ত্রিক শক্তি আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট মেহেরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ওপর হামলার ঘটনায় সদর উপজেলার দরবেশপুর গ্রামের রাশেদুল ইসলাম সন্ত্রাসবিরোধী আইনে একটি মামলা করেছিলেন। ওই মামলার প্রধান আসামি হিসেবে ফরহাদ হোসেনকে গ্রেফতার দেখিয়ে গত বুধবার ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মেহেরপুরে নিয়ে আসে পুলিশ। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান ফরহাদ হোসেন। গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তার নামে ঢাকায় কয়েকটি হত্যা মামলা হয়েছে। এছাড়া মেহেরপুরেও কয়েকটি মামলা হয়েছে।