মাঘের বাঘ পালানো শীত বিদায় : বইছে বসন্তের বাতাস

চুয়াডাঙ্গা ও মেহেরপুরের বিভিন্ন স্থানে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অব্যাহত

স্টাফ রিপোর্টার: মাঘের ‘বাঘ পালানো’ শীত বিদায় নিয়েছে, সেও সপ্তাহখানেক আগেই। জানুয়ারিতেই বইতে শুরু করে বসন্তের বাতাস। মার্চের মতো খানিক উষ্ণ আর খানিক হালকা হিমেল বাতাস ইতিমধ্যে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বইতে শুরু করেছে। দেশের কোথাও কোথাও তো রীতিমতো গ্রীষ্মের কাছাকাছি উত্তাপের আঁচ পাওয়া যাচ্ছে। গতকাল শনিবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে তেঁতুলিয়ায় ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৪ দশমিক ৩ ডিগ্রি এবং সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো টেকনাফে ৩০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

এদিকে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দেশের বেশির ভাগ এলাকায় বিশেষ করে দিনে হালকা গরম অনুভূত হচ্ছে। রাজধানীসহ বেশ কিছু এলাকায় দিনে তো বটেই, রাতেও বৈদ্যুতিক পাখা ব্যবহার শুরু হয়েছে। তবে শীতের খানিক চিহ্ন হিসেবে দেশের নদীতীরবর্তী এলাকাগুলোয় কুয়াশা থাকছে। আগামী কয়েক দিন তা অব্যাহত থাকতে পারে।

আবহাওয়া অফিস জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। তবে অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এ তথ্য জানানো হয়। উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ বিহার ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। লঘুচাপটি দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় বিরাজ করছে। এর বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে শনিবার দিনগত শেষরাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত দেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। এ সময় সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত এবং দেশের উত্তরাঞ্চলে দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস এবং অন্যত্র তা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

আবহাওয়াবিদেরা বলছেন, আপাতত দেশে আর তেমন তীব্র শীত নামার সম্ভাবনা নেই। জানুয়ারি মাসের বাকি সময় ও ফেব্রুয়ারিজুড়ে কোথাও কোথাও হালকা শীত ও বাকি এলাকায় বসন্তের হালকা ঠা-া বাতাস বইবে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণ বলছে, কয়েক দিন ধরে দেশের বেশির ভাগ এলাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকছে ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অথচ জানুয়ারিতে দেশের বেশির ভাগ এলাকার গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকার কথা ১০ থেকে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার কথা ২২ থেকে ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু দেশের বেশির ভাগ এলাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮ থেকে ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছে গেছে। সাধারণত দেশে গ্রীষ্মকাল এগিয়ে এলে, অর্থাৎ মার্চের শুরুতে এমন তাপমাত্রা থাকে। অধিদপ্তরের পর্যবেক্ষণে আরও বলা হয়েছে, আগামী দুএকদিন এ ধরনের আবহাওয়া থাকবে। তারপর আবারও দুই-তিন দিন ধরে তাপমাত্রা সামান্য কমবে। তারপর আবারও বাড়বে। আপাতত তীব্র তো দূরে থাক, মাঝারি শীত নামার সম্ভাবনাও দেখছেন না আবহাওয়াবিদেরা। দেশের হাতে গোনা কয়েকটি এলাকা ছাড়া আর কোথাও শৈত্যপ্রবাহ আসার সম্ভাবনা নেই।

যেমন চুয়াডাঙ্গার কথাই ধরা যাক। ওই জেলায় এই ৮ থেকে ১০ দিন আগেও টানা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে গেছে। গতকাল শনিবার এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিলো। মানে একেবারে গ্রীষ্মের মতো গরম পড়ছে সেখানে। ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা প্রায় প্রতিদিন ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস করে বাড়ছে। গতকাল শনিবার ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠেছিলো।

এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহিনুল ইসলাম বলেন, আপাতত দেশে শৈত্যপ্রবাহ আসার তেমন সম্ভাবনা নেই। তবে আগামী দুএক দিন পরে তাপমাত্রা কমে আবার তা বাড়তে পারে। ফেব্রুয়ারি মাসজুড়েও একই ধরনের তাপমাত্রা থাকার সম্ভাবনা বেশি।

এদিকে, চুয়াডাঙ্গায় অসহায় গরিব ও দুস্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা ভিক্টোরিয়া জুবিলি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে শীতবস্ত্র হিসেবে গায়ের চাদর বিতরণ করা হয়। বন্ধু মহল এসএসসি/৮৯ ও এইচএসসি/৯১ ব্যাচের আয়োজনে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি এজাজ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আসাদুল হক, ভি.জে জেলা স্কুলের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম লিটন, ব্যবসায়ী নেতা হাজি সেলিম, অ্যাড. মনিবুল হাসান পলাশ, পবিত্র কুমার আগরওয়ালা, বিপুল আশরাফসহ অনেকেই। এ সময় বক্তারা বলেন, বন্ধুমহল সব সময় মানুষের সেবাই নিয়োজিত থাকবে বলে আমরা আশাকরি। আগামীতেও বন্ধু মহল দরিদ্র মানুষের শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবায় সহায়তা দেয়ার আশ্বাস দেন।

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, তারা দেবী ফাউন্ডেশন এর উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মোমিনপুর ও জেহালা ইউনিয়নের শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করা হয়। কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য তারা দেবী ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান দিলীপ কুমার আগরওয়ালা। চুয়াডাঙ্গা জেলা কৃষক লীগের সাবেক সভাপতি ও মোমিনপুর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম ফারুক জোয়ার্দ্দারের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন আব্দুর সালাম জোয়ার্দ্দার, আলমগীর মেম্বার, জাহিদ মেম্বার, শাহিনুর মেম্বার, আরিফ মেম্বার, আমিরুল মেম্বার, আসাদুল মেম্বার, উজ্জ্বল মেম্বার।

এছাড়া জেহালা ইউনিয়নের মাধবীতলা সতী মায়ের আশ্রমে শীতার্ত সাধুর দরবেশদের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করা হয়।

দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদায় ‘ওরা বন্ধু সংঘ’র পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র (কম্বল) ও মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। শীতার্ত অসহায় মানুষের সামান্য ঊষ্ণতা দিতে সামাজিক দায়বদ্ধতার বিষয়টি মাথায় রেখে বিগত বছরগুলোর ন্যায় স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনটি’র আয়োজনে এবারও শীতবস্ত্র (কম্বল) ও মাস্ক বিতরণ করা হয়। গতকাল শনিবার বিকেলে দামুড়হুদা দশমী সরকারি প্রাইমারি স্কুলে কম্বল ও মাস্ক বিতরণ করা হয়। ‘ওরা বন্ধু সংঘ’র সভাপতি সাংবাদিক তানজীর ফয়সালের সভাপতিত্বে কম্বল ও মাস্ক বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলার শ্রমিকলীগের সভাপতি হাজি আব্দুল কাদির। সংগঠনটির উপদেষ্টা ম-লির সদস্য শিক্ষক হাফিজুর রহমান কাজলের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন জাগ্রত জনতা (সেবামূলক প্রতিষ্ঠান-এর প্রতিষ্ঠাতা) প্রাণি চিকিৎসক মো. জাহাঙ্গীর আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সহকারী প্রকৌশলী মো. ইমরান হোসেন, দামুড়হুদা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বাসস্ট্যান্ড বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মাকসুদুর রহমান রতন, দামুড়হুদা প্রেসক্লাবের সাবেক সেক্রেটারি শামসুজ্জোহা পলাশ। আরও উপস্থিত ছিলেন ‘ওরা বন্ধু সংঘ’র সহ-সভাপতি আসলাম মিয়া, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক সাংবাদিক মিরাজুল ইসলাম মিরাজসহ ক্লাবের সদস্যবৃন্দ।

গাংনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার চিৎলা গ্রামে গোলাম আম্বিয়া পাঠাগারের উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল সকালে চিৎলা গ্রামে পাঠাগার প্রাঙ্গণে এলাকার হতদরিদ্র তিন শতাধিক মানুষের মাঝে এ কম্বল বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস উইং সদস্য ও প্রয়াত গোলাম আম্বিয়ার বড় ছেলে সাইফুল ইসলাম কল্লোল, মেজ ছেলে হামিদুল ইসলাম হিল্লোল, চিৎলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহকারী প্রধান শিক্ষক রফিকুল ইসলামসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ। গাংনী উপজেলার বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী গোলাম আম্বিয়ার স্মৃতি ধরে রাখতে তার পরিবারের উদ্যোগে স্থাপন করা হয় পাঠাগার। পাঠাগারের উদ্যোগে এলাকার মানুষের নানাভাবে সহযোগিতা করেন তার সন্তানেরা।

অপরদিকে, মেহেরপুরের গাংনীর রাইপুর ইউনিয়নের শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে রাইপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে এ ইউনিয়নের দুস্থদের মাঝে এ কম্বল বিতরণ করা হয়। কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রাইপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি সামসুজ্জামান মঙ্গল। বিশেষ অতিথি ছিলেন রাইপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান, ইউনিয়ন আা.লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান মোকলেছ, আওয়মী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান আতু, আবুল বাশার ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা হাসান রেজা সেন্টুসহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানে মেহেরপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ সাহিদুজ্জামান খোকনের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের ৫০০টি কম্বল বিতরণ করা হয়।

 

Comments (0)
Add Comment