ফ্রি ফায়ার গেম খেলা নিয়ে বন্ধুদের হাতে খুন হয় শিশু আবির

গাংনী থানায় হত্যাকা- নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে ব্রিফিংকালে ওসি বজলুর রহমান

গাংনী প্রতিনিধি: মিরাজের পরীক্ষা তাই মোবাইলে গেম খেলতে পারবে না। পরীক্ষা চলাকালে তার ফ্রি ফায়ার গেমের অ্যাকাউন্ট থেকে গেম খেলার বায়না করে বন্ধু আবির হোসেন। গেম খেলার জন্য অ্যাকাউন্ট ও গোপন পাসওয়ার্ড দেয় মিরাজ। কয়েকদিন গেম খেলার পর পরীক্ষা শেষ হলেও পাসওয়ার্ড ফেরত দেয়নি আবির।
ফ্রি ফায়ার পাবজি গেমে আসক্ত ছিলো তিন কিশোর। মোবাইলে ওই গেমের আইডি নিয়ে কয়েকদিন ধরে চলা বিরোধের জের ধরে দুই কিশোর মিলে আরেক শিশু আবির হোসেনকে (১২) শ^াসরোধে হত্যা করে। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটে গেলো ২৬ জুন বিকেলে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার মিনাপাড়া গ্রামের একটি পাটক্ষেতে।
হত্যাকা-ের দায় স্বীকার করে ফ্রি ফায়ার গেম নিয়ে বিরোধের বিষয়টি আদালতে জানিয়েছে নিহতের বন্ধু মিরাজ ও হামিম। তাদের জবানবন্দী ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করেছেন বিজ্ঞ আদালত। গতকাল বুধবার বিকেলে গাংনী থানায় এক ব্রিফিংয়ে হত্যাকা-ের বিষয়টি সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা গাংনী থানার ওসি বজলুর রহমান।
ওসি বলেন, চুয়াডাঙ্গার সরিষাডাঙ্গা গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী আসাদুল ইসলামের ছেলে আবির হোসেন তার মায়ের সাথে গাংনী উপজেলার মিনাপাড়া গ্রামে নানার বাড়িতে বসবাস করতো। দুঃসম্পর্কের খালাতো ভাই একই গ্রামের হামিম ও মিরাজের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিলো। মিরাজের মোবাইলে ব্যবহৃত ফ্রি ফায়ার গেমের একটি অ্যাকাউন্ট ও পাসওয়ার্ড নিয়ে নিজের মোবাইলে খেলতো আবির। অ্যাকাউন্ট ফেরত দেয়া নিয়ে আবিরের সাথে মিরাজ ও হামিমের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এক পর্যায়ে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করে মিরাজ ও হামিম। গেলো ২৬ জুন কৌশলে তাকে ঘুরতে নিয়ে যায় গ্রামের অদূরে মাঠের সড়কে। সেখানে একটি পাটক্ষেতের মধ্যে আবিরকে শ^াসরোধে হত্যা করে মোবাইল ছিনিয়ে তার দুই বন্ধু। ওই দিন রাতেই মিরাজ ও হামিমকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর গভীর রাতে মরদেহ উদ্ধার করতে সক্ষম হয় পুলিশ।
দুই কিশোরের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে ওসি আরও জানান, মিরাতের ওই গেমের অ্যাকাউন্টে ছিলো ৫০ হাজার টাকা। এর অর্ধেক দাবি করে আবির। অপরদিকে আবিরকে হত্যা করার পর তার মোবাইল থেকেই মালয়েশিয়া প্রবাসী পিতার কাছে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে হামিম। হামিম হিন্দি ভাষা জানে। গেম খেলতে গিয়ে হয়তো সে হিন্দি ভাষা শিখেছে। হিন্দি ভাষায় মুক্তিপণ চাওয়ায় পিতা আবিরের অবস্থান নিয়ে সন্দেহের মধ্যে পড়ে।
মুক্তিপণের বিষয়ে ওই কিশোরের স্বীকারোক্তির বরাত দিয়ে ওসি বলেন, এক লাখ টাকা মুক্তিপণ পেলে হামিম ও মিরাজ ভাগ করে নেবে বলে সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু মুক্তিপণ চাওয়ার আগেই তারা আবিরকে হত্যা করেছিলো। ফলে মুক্তিপণের আশা ছেড়ে দিয়ে তারা হত্যাকা-ের বিষয়টি ঢামাচাপ দিতে নানা অপকৌশল করতে থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত পুলিশের বুদ্ধিমত্তায় তারা সবই স্বীকার করেছে।
ওসি বজলুর রহমান বলেন, মিরাজ ও হামিমকে আটকের পর আবিরের মায়ের দায়ের করা মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়। আদালতে তারা হত্যাকা-ের স্বীকারোক্তি দিয়েছে।

 

Comments (0)
Add Comment