স্টাফ রিপোর্টার: দেশের দশ জেলার ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ৭ ডিগ্রির ঘরে। কনকনে ঠা-ায় এসব জেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ শৈত্যপ্রবাহ আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও কিছু কিছু এলাকায় অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। গতকাল শুক্রবার দেশের সর্বনিম্ন তামপাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেতুলিয়ায় ৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়াও কুষ্টিয়া, যশোর, গোপালগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে ১০ ডিগ্রি, রাজশাহীতে ৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি, ঈশ্বরর্দীতে ৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি, বাদলগাছীতে ১০ দশমিক ৪ ডিগ্রি, বাঘাবাড়িতে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি, সৈয়দপুর, রাজারহাট ও ডিমলায় ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি, শ্রীমঙ্গললে ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি ও ভোলায় দশমিক ১০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলাসয়াস সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো টেকনাফে ২৯ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদফতরের ৭২ ঘণ্টার সর্বশেষ পূর্বাভাসে এমন তথ্য জানানো হয়েছে। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। পাশাপাশি মরসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আর এর বর্ধিতাংশ বিস্তৃত রয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত। এই অবস্থায় আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সেই সঙ্গে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কোথাও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। বর্তমানে রাজশাহী, পাবনা, নওগাঁ, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, যশোর, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মৌলভীবাজার ও গোপালগঞ্জ জেলার উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় তা কিছু এলাকায় অব্যাহত থাকতে পারে। তবে এই সময়ে সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে।
এদিকে আগামীকাল রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। পাশাপাশি মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের পশ্চিম ও উত্তর পশ্চিম অঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা পড়তে পারে। এছাড়া সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্যদিকে আগামী সোমবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। পাশাপাশি এই সময়ে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। এছাড়া সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। তবে বর্ধিত ৫ দিনের প্রথম দিকে তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে বলেও পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে চলতি শীত মরসুমে তৃতীয় দফায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে চলছে। পৌষের শেষ সময়েই যেন শীত জেঁকে বসেছে। দু’দিন তাপমাত্রা হুহু করে নেমে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। দিনে সূর্যের আলো থাকলেও হিমেল বাতাসে অনুভূত হচ্ছে বরফের মতো শীত। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীতের প্রকোপে জর্জরিত হয়ে পড়েছে সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গার মানুষ। গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষগুলো খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। গতকাল শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা কমে যাওয়ার পাশাপাশি উত্তরের হিমেল হাওয়ায় তীব্র শীতে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সবথেকে বেশি বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষেরা। ভোর থেকে যেসব শ্রমজীবী মানুষ ঘর থেকে বের হয় তাদের দৈনন্দিন কর্মকা-ে ভাটা পড়ছে। অনেকে কাজ পাচ্ছেন না। অলস বসে সময় পার করছেন ভ্যান ও ইজিবাইক চালকরা। মাঠে বোরো আবাদে ব্যস্ত কৃষকরাও ঠিকমতো কৃষি কাজ করতে পারছেন না। তীব্র শীতে কৃষি কাজও ব্যাহত হচ্ছে। শহরের নতুন বাজার এলাকায় কাজের সন্ধানে অপেক্ষায় থাকা এক মাটিকাটা শ্রমিক রবিউল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিন শীত একটু কম ছিলো। কাজকর্ম করতে পারছিলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই শীত বেশি পড়ছে। অনেকেই কাজ পাচ্ছে না, আবার যারা পাচ্ছে তারাও কাজ শেষ করতে পারছে না। ভ্যান চালক শফিউর রহমান জানান, রাস্তাঘাটে লোকজন কমেছে। যাত্রী পাওয়া যাচ্ছে না। শীত উপেক্ষা করেও কাজে বের হলে ভাড়া ঠিক মতো হচ্ছে না। আয় রোজগার অনেক কমে গেছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান জানান, পশ্চিমে ঝড় সরে যাওয়ার কারণে বৃহস্পতিবার থেকে তাপমাত্রা হ্রাস পেতে শুরু করেছে। ১৩ জানুয়ারি পর্যন্ত তাপমাত্রা নেমে যাওয়াসহ শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর ১৪ জানুয়ারি থেকে তাপমাত্রা আবারও বৃদ্ধি পেতে পারে। দফায় দফায় শৈত্যপ্রবাহ বইতে থাকায় শীতজনিত রোগবালাই বেড়েই চলেছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ছাড়াও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগীদের ভিড় লেগেই আছে। সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের পরামর্শক মাহবুবুর রহমান মিলন জানান, বর্তমানে রোটাভাইরাসজনিত ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে বেশি চিকিৎসা নিতে আসছে।
এদিকে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জনজীবন অনেকটাই থমকে গেছে। মানুষের স্বাভাবিক কার্যক্রম অনেকটাই ব্যাহত হচ্ছে। বিশেষ করে ঠা-াজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি কষ্টে আছে। সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোয় প্রতিদিনই বাড়ছে রোগীর চাপ।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ১৫ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে অন্তত ৪২জন রোগী চিকিৎসাধীন ছিলো। এছাড়া ডায়রিয়া ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ৫১জন রোগীর মধ্যে বেশির ভাগই ছিলো শিশু। একইভাবে পুরুষ ও নারী মেডিসিন ওয়ার্ডে ঠা-াজনিত রোগ নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট ও শ্বাসতন্ত্রের রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি।
চুয়াডাঙ্গায় ‘আসুন শীতার্ত দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াই’ এ সেøাগানে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করেছে ‘আমরা মানুষের জন্য সংগঠন’। গতকাল শুক্রবার বেলা ১০টায় শহরের রেডক্রিসেন্ট চক্ষু হাসপাতল চত্বরে এ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। চুয়াডাঙ্গা বড় বাজারের নিউ জুয়েলার্সের আর্থিক সহযোগিতায় এবং আমরা মানুষের জন্য সংগঠনের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় এ শীতবস্ত্র শীতার্ত ৬২জন নারী-পুরুষের মাঝে তুলে দেন সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা। এ সময় সংগঠনটির সভাপতি সহিদুল হক বিশ^াস, সাধারণ সম্পাদক শাহান ইউসুফ কেয়া, সহ-সভাপতি জাফরুল হক, অ্যাড. আবুল বাসার, অ্যাড. রবিউল হক, অ্যাড. আহসান আলী, মফিজুর রহমান মনা এবং কমিটির সদস্যবৃন্দরা উপস্থিত ছিলেন।
চুয়াডাঙ্গা হাসপাতাল রোডে অবস্থিত ‘আমরা মানুষের জন্য সংগঠনটি’ ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সেই সময় থেকেই প্রতি শীতে শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, পবিত্র ঈদে শিশুদের জন্য নতুন জামা-কাপড় ও খাদ্য সামগ্রী প্রদান, পূজায় সনাতন ধর্মাম্বলীদের জন্য খাদ্য সামগ্রী প্রদান এবং অসহায় রোগীদের চিকিৎসার সহযোগিতা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। সমাজের বিত্তবান মানুষ সংগঠনটির ভালো কাজের জন্য পাশে দাঁড়ালে সমাজের পিছিয়ে পড়া কিছু মানুষ উপকৃত হবেন।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার ও গতকাল শুক্রবার সাহিত্য পরিষদ প্রাঙ্গণ থেকে শীতার্তদের মাঝে এসব শীতবস্ত্র তুলে দেন নেতৃবৃন্দ। আগামী ১৪ জানুয়ারি বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত দরিদ্র শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম চলবে বলে সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুজ্জামান শরীফের নির্দেশে আলুকদিয়া ইউনিয়নে পথচারী ও দুস্থ শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে দৌলাতদিয়াড় গ্রামে কম্বল বিতরণ করেন সাবেক আলুকদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মো. মিজানুর রহমান মিজান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আলাউদ্দীন আলা, কামরুজ্জামান, শাহজাহান আলী, ইমরান খান (কিং খান), ফরজ আলী, নাজমুল হোসেন, শিমুল, অন্তর, এআর রুমি, আলমগীর হোসেন, মেহেদী হাসান, ইমরান হোসেন, রাহাত আলী, ফয়সাল প্রমুখ।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে মেহেরপুর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. মো. কামরুল হাসানের নেতৃত্বে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় মেহেরপুর পৌর এলাকার হালদারপাড়া, মালোপাড়ায়, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ রকা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা বিএনপি নেতা আব্দুল লতিফ বিশ্বাস। সঞ্চালায় ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্মসম্পাদক মিজান মিলন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্মআহবায়ক অধ্যাপক ফয়েজ মোহাম্মদ, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রুমানা আহমেদ, জেলা মহিলা দলের সহ-সভাপতি ছাবিহা সুলতানা, জেলা যুবদলের সহসভাপতি আনিসুর রহমান লাবলু, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাড. মীর আলমগীর ইকবাল আলম, জেলা যুবদলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান জনি, জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি নাহিদ মাহাবুব সানি, জেলা জিয়া মঞ্চের সদস্য সচিব মনিরুল ইসলাম মনি, পৌর ছাত্রনেতা ফুর্তি হাসান, নাহিদ আহমেদ, ইমন বিশ্বাস, আলাল হোসন, মিজু, ইসমাইল শাহ, জনি নাজমুল হাসান প্রমুখ।
কালীগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে দুস্থ ও অসহায় নারী-পুরুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছে উপজেলা বিএনপি। গতকাল শুক্রবার বিকেলে জামাল ইউনিয়নে এ শীত্রবস্ত্র বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক হামিদুল ইসলাম হামিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জামাল ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি নজরুল ইসলাম মোল্লা, কালীগঞ্জ পৌর যুবদলের আহবায়ক শাহজাহান আলী খোকন, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব মিলন হোসাইন প্রমুখ।