স্টাফ রিপোর্টার: দেশে চলমান দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ভিন্নধর্মী প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছেন মো. হানিফ ওরফে ‘হানিফ বাংলাদেশি’ নামের এক যুবক। ঘুষ-দুর্নীতি ও নৈতিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সেøাগানসহ গলায় ফেস্টুন, হাতে ‘বদলে যাও বদলে দাও’ লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড নিয়ে ছুটে চলেছেন দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। করছেন প্রতিবাদ পদযাত্রা। গত মঙ্গলবার রাতে হানিফ ঝিনাইদহ থেকে চুয়াডাঙ্গায় এসে পৌঁছান। গতকাল বুধবার জেলা প্রশাসক এবং সদর ও জীবননগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দেন। এটি তার সফরের ২৩তম জেলা। ভোট, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের মানোন্নয়ন এবং ঘুষ, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিচ্ছেন মো. হানিফ। তিনি নোয়াখালী সদর উপজেলার মাইজদী এলাকার মৃত আব্দুল মান্নানের ছেলে। গত ৫ জুন কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) স্মারকলিপি দেয়ার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু করেছেন। আগামী বছরের ৩০ জানুয়ারি পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় ইউএনওর কাছে স্মারকলিপি দেয়ার মাধ্যমে ৬৪ জেলা সফর শেষ হবে।
চুয়াডাঙ্গা সফরকালে প্রতিবাদের বিষয় সংবলিত ব্যানার গলায় ঝুলিয়ে ও হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক ঘোরেন। পরে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান এবং সদর উপজেলা ইউএনও শামীম ভুইয়া ও জীবননগরের ইউএনও আরিফুল ইসলামের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রীকে লেখা স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, ‘বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে দেশ স্বাধীন হয়েছে। কিন্তু বিগত ৫০ বছরেও স্বাধীনতার লক্ষ্য পূরণে কোনো সরকারই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তবে আপনি ও আপনার সরকার স্বাধীনতার স্বপ্ন পূরণে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৩ বছরে বিগত সময়ের তুলনায় বেশি উন্নয়ন করেছেন। এ জন্য ধন্যবাদ। আগের সরকারে যারা ছিলেন, সে সময়ও দেশে ভোট, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের ওপর নগ্ন হস্তক্ষেপ হয়েছে। ঘুষ, দুর্নীতি, অর্থ পাচার হয়েছে। সামাজিক, মানবিক ও পারিবারিক মূল্যবোধের অবক্ষয় আগেও ছিলো, এখন আরও চরম আকার ধারণ করেছে। আশা করি আপনার যোগ্য নেতৃত্বে চলমান উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ঘুষ, দুর্নীতি ও অর্থ পাচার বন্ধের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। পাচারকৃত অর্থ ফেরত এনে যুবকদের মাঝে আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে সহজ শর্তে ঋণ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করবেন। ভোট, গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের মানোন্নয়নে আরও যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বাংলাদেশ বিশ্বে একটি আত্মমর্যাদাশীল দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। জাতির পিতার কন্যা হিসেবে আপনার কাছে সেটাই কামনা।’ হানিফ বাংলাদেশি চার বছর ধরে বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে সারাদেশ ঘুরে অভিনব প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। এর আগে ২০১৯ সালে ভোটাধিকার ও নির্বাচনের সময় নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে পদযাত্রা, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ শহরে জনবহুল এলাকায় গণশৌচাগার স্থাপনের দাবিতে প্রচারাভিযান চালান। একই বছর নির্বাচন কমিশনের সংস্কার ও তৎকালীন কমিশনারদের পদত্যাগের দাবিতে পচা আপেল নিয়ে ঢাকায় নির্বাচন কমিশনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন হানিফ।
হানিফ বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটবে। আমি বিশ্বাস করি মানুষ আমার দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে লড়াইয়ে নামবেন এবং ইতিবাচক পরিবর্তন আনবেন এ দেশে।’ হানিফ নিজের জমানো অর্থ ও সমমনা বন্ধুবান্ধবের সহযোগিতায় সারাদেশে ঘুরে ঘুরে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। গতকাল বুধবার সারাদিন চুয়াডাঙ্গায় অবস্থানের পর তিনি আজ বৃহস্পতিবার মেহেরপুরে যাবেন।