বহিরাগতদের আড্ডা-অবাধ চলাফেরায় নিরাপত্তাহীনতায় কোয়ার্টারে থাকা নার্স ও ছাত্রীরা
স্টাফ রিপোর্টার: চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়েছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে হাসপাতালের বহিঃবিভাগে এবং ওয়ার্ডে সোনার গয়না, নগদ টাকা-মোবাইল চুরির ঘটনা। ফলে চোর আতঙ্কে ভুগছে সেবা আসা রোগী ও স্বজনরা। এছাড়াও দালালের উতপাতে অতিষ্ট রোগীরা। তারা প্রতিনিয়ত হচ্ছে প্রতারিত। অপরদিকে, সন্ধ্যা হলেই সদর হাসপাতাল চত্বরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে মর্গ হাউজের আশপাশে বহিরাগত যুবকদের আড্ডা ও মাদক সেবন করতেও দেখা যায়। এছাড়াও হাসপাতালের আবাসিক (কোয়ার্টার) এলাকায় রোগীর স্বজন কিংবা বহিরাগত প্রেমিকজুটির অবাধ চলাফেরা তো রয়েছেই। যুবকদের আড্ডার কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কোয়ার্টারের থাকা নার্স এবং নার্সিং ইনিস্টিটিউটের ছাত্রীরা। সদর হাসপাতালে সার্বক্ষণিক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকলেও হচ্ছেনা কোনো সুরাহা।
ভুক্তোভুগী কোয়ার্টারে বসবাসরত কয়েকজন সিনিয়র নার্স দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, সন্ধ্যা হলেই রোগী ও স্বজন পরিচয় দিয়ে কোয়ার্টারের মধ্যে আড্ডা ও খোস গল্পে মেতে ওঠে। এছাড়াও বহিরাগত প্রেমিক জুটিও প্রায় আসে। আমাদের যেখানে সেখানে মূত্রত্যাগসহ ধূমপান করছে। আমরা এসব বারণ করলে কেউ কেউ রোগীর স্বজন পরিচয় দেয় আবার কেউ কেউ উলটো আমাদের উপরেই চড়াও হয়। এতে আমরা যেমন নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি এবং আমাদের সন্তানদের জন্য লজ্জাজনক। এর আগে কয়েজন বহিরাগতরা প্রবেশ করে কোয়ার্টারের মধ্যে থাকা কুলগাছের লক্ষ্য করে ইট ছোড়ে। সেই ইটের টুকরা কোয়ার্টারের জানালায় লেগে কাচ ভেঙে যায়। সেই জানালার ধারে বসে ১০ বছরের বাচ্চা খাবারের প্লেটে কাচের টুকরা পড়ে। জানালা খোলা থাকলে বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারতো। তারা আরও বলেন, ভেতরে নার্সিং ইনিস্টিটিউটের ছাত্রীরা থাকে। এভাবে বহিরাগতরা প্রবেশ করলে বড় ধরনের কোন দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। নিরাপত্তার দিক বিবেচনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তারা।
এদিকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে দালালের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই থামছে না। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের উদাসীনতায় দীর্ঘদিন ধরে নামধারী চক্রটি আরো সক্রিয় হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগ থেকে রোগী ভর্তির পর ওয়ার্ডের পরিবর্তে চক্রটি বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রয়োজনীয় পরীক্ষায় বাধ্য করছে তারা। ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে পরীক্ষা অনুযায়ী মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে তারা যে কোনোভাবে ক্লিনিকে নিয়ে যায়। এতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের যেমন বদনাম হচ্ছে তেমনই রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্বাস্থ্য বিভাগ। অপরদিকে, অভিযোগ রয়েছে অনেক চিকিৎসকেরও রয়েছে কিছু ব্যক্তিগত লোকজন। তারা চিহ্নিত দালাল হলেও চিকিৎসকের পছন্দের হওয়ায় স্থান পেয়েছে হাসপাতালে।
ভুক্তভোগীদের ভাষ্য, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও রোগনির্ণয় কেন্দ্রের নিয়োগ করা দালালদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে হাসপাতালটির স্বাস্থ্যসেবা। তারা রাজনৈতিক আশীর্বাদপুষ্ট হওয়ায় কর্তৃপক্ষও অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে। যেখানে রোগী, সেখানেই হাজির হয়ে যায় দালালেরা। মূল ফটক থেকে ওয়ার্ড পর্যন্ত গোটা হাসপাতালজুড়ে রয়েছে তাদের অবাধ বিচরণ ও আধিপত্য। মাঝেমধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও পুলিশের অভিযানে দালালদের আনাগোনা সাময়িকভাবে কমে এলেও অল্প দিনেই তা আগের অবস্থায় ফিরে আসে। এদেরকে রুখতে জোড়ালো ভূমিকা প্রয়োজন বলে মনে করেন স্বাস্থ্য সচেতনরা।
উদাসীনতা এবং আইনের সঠিক প্রয়োগ না থাকায় এসব ঘটনা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দায়ি করছেন সচেতন মহল বলছেন। তারা বলেন, কয়েকবছর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কোন পদক্ষেপই চোখে পড়েনি। তারা শক্ত হলেই তাদের প্রতিহত করা সম্ভব। কমে আসবে চোর, দালাল ও বহিরাগতদের আড্ডা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের (ভারপ্রাপ্ত) আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. ওয়াদেহ মাহমুদ রবিন দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, বহিরাগতদের আনাগোনা বেড়েছে। ছিচকে চোরের উৎপাতে অতিষ্ঠ রোগীরা। আবার দিনরাতে হাসপাতালের মধ্যে কোয়ার্টারের মধ্যেও প্রেমিকজুটিও খোশগল্প করে বলে জেনেছি। হাসপাতালের মধ্যে থাকা বিভিন্ন চায়ের দোকানেও অনেকে আড্ডা দেয়। তিনি আরও বলেন, দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। হাসপাতালটি পূর্বের রুপে ফিরিয়ে আনতে আমরা দ্রুত পদক্ষেপ নিচ্ছি।
চুয়াডাঙ্গা ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. ওয়ালিউর রহমান নয়ন দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমি হাসপাতালের কোয়ার্টারের থাকি। হাসপাতালের নতুন ভবন হওয়ার পর বেড়েছে বহিরাগতদের আনাগোনা। এদের জন্য অতিষ্ঠ আমরা। আমাদের বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য বাইরে বের হতে দিতে পারি না। এক প্রকার আতঙ্ক বিরাজ করে আমাদের মধ্যে। আগামী আইনশৃংখলা মিটিং এ বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হবে। দ্রুত সমাধান হবে বলে মনে করি।
চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, পূর্বে হাসপাতালে তিনজন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকতো। পরবর্তীতে বাড়িয়ে পাঁচজন করা হয়েছে। যে কোন ঘটনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে জানালে আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।