জীবননগর ব্যুরো: গেলো বছর গোলআলুর বাম্পার দাম পেয়ে এবারও ভালো মূল্য পাওয়ায় আশায় জীবননগর উপজেলার আলু চাষিরা আলু চাষে ঝুকে পড়েন। ফলনও হয়েছে বাম্পার; কিন্তু বাজারে দাম নেই। যে দাম পাচ্ছে তা দিয়ে আলু উৎপাদেনের খরচ ওঠায় দায় হয়েছে পড়েছে। এ অবস্থায় দিশেহারা উপজেলার আলু চাষিরা। আলুর দাম নেই তাই ভালো নেই জীবননগর উপজেলার চাষিরা।
সাংবাদিকদের পক্ষ হতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার হাসাদাহ ইউনিয়নের কাটাপোল গ্রামের মহিউদ্দিন এবার ৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। এ আলু চাষ করতে তার খরচ হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। ১০দিন পূর্বে তিনি সাড়ে ৩ বিঘা জমির আলু বিক্রি করেছিলেন। ভালো ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় তিনি লাভের মুখ দেখেন। মহিউদ্দিনের মত ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি অন্যান্য আলু চাষিদের। ভালো ফলন হওয়া সত্ত্বেও দাম কম হওয়ায় অধিকাংশ কৃষকের চলতি বছর আলুতে লোকসান গুনতে হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
আলু চাষি মহিউদ্দিন বলেন, চাষ শুরুর আগেই সার কিনে রেখেছিলাম। এছাড়া নিজের বীজ ও নিজের জমিতে চাষ করায় আমার খরচ কম হয়েছে। সেই সাথে আমি ১৭ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করতে পেরেছি। এতে কিছুটা লাভ পেলেও বেশির ভাগ চাষির আলুতে এবার লোকসান গুনতে হবে।
বৈদ্যনাথপুর ও হাসাদাহসহ আশেপাশের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে ক্ষেত থেকে মান ভেদে ১০ থেকে ১১ কেজি আলু কিনছেন ব্যবসায়ীরা। আগামীতে আলুর দাম আরও কমবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। একই ইউনিয়নের পুরন্দরপুর গ্রামের কৃষক নাসির উদ্দিন বলেন, আলুর দাম বেশি থাকায় প্রথমবারের মত ১০ কাটা জমিতে আলু চাষ করি। বীজ, সার, সেচ ও মজুর দিয়ে আমার খরচ হয়েছে ১৩ হাজার টাকা। আলু বিক্রি করার জন্য ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলেছি; কিন্তু দাম বলছে ১১টাকা করে। এই দামে আলু বিক্রি করলে আমার হাজার দুয়েক টাকা লোকসান হবে।
হাসাদাহ ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আতিকুজ্জামান সন্টু সাংবাদিকদের বলেন, আমি নিজেই এবার ১১বিঘা আলু চাষ করেছিলাম। তাতে আমার খরচ হয় ৩ লাখ ৬৩ হাজার টাকা; কিন্তু আলু বিক্রি করে পেয়েছি মাত্র ৩ লাখ ৫ হাজার ৫৯১ টাকা। আমার মতো এলাকার অধিকাংশ চাষিদের অবস্থা একই।
তিনি আরও বলেন, দাম বেশি থাকায় এলাকায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার আলু চাষ বেশি হয়েছে। আলু পরিপক্ক করে কোল্ড স্টোরেজ করার মতো কোনো সুযোগ নেই। কোল্ড স্টোরেজ থাকলে কৃষকের এই ক্ষতিটা হতো না। জীবননগর উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন আক্তার সাংবাদিকদের বলেন, চলতি মরসুমে এক হাজার ২২৮ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে ৩৪৮ হেক্টর বেশি। বর্তমানে বিঘা প্রতি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬০-৬৫ মণ। তবে ৯০দিন বয়সে আলু তুললে তা বিঘা প্রতি একশ মণের বেশি ছাড়িয়ে যাবে। তিনি জানান, আর কৃষি পণ্যর দাম নির্ধারণ করার কাজ কৃষি বিভাগের না। দাম নির্ধারণের জন্য মার্কেটিং কর্মকর্তা আছেন।
চুয়াডাঙ্গা জেলা বাজার অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা সহিদুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, আলু হিমাগারে নেয়ার মতো আর্দ্রতা এখনো আসেনি। হিমাগারে নেয়ার পর আমরা দাম নির্ধারণ করি। তবে গতবারের থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা এবার আমরা দাম নির্ধারণ করার চিন্তা করেছি।