দামুড়হুদায় আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিকসভায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা : শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে উদ্বেগ

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা, চোরাচালান, মানব পাচার, সন্ত্রাস ও নাশকতা, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা ১১টায় উপজেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত মাসিক সভার সভাপতি দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. মমতাজ মহল বলেন, গত ৫ আগস্টের পর উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সভাপতির দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অবগত হয়েছি এ উপজেলার শিক্ষা ব্যবস্থা একবারে নাজুক। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে অন্যান্যদের রয়েছে মতবিরোধ ও সমন্বয়হীনতা। যে যার মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আসেন আবার চলে যান। কেউ কারও কথা শোনেন না। পর্যবেক্ষণে ও গত বিজ্ঞান মেলায় কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরিলক্ষিত হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীদের লেখাপড়ার প্রতি অনীহা রয়েছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অর্থনৈতিক লেনদেনের ভাউচারগুলো সবাই গড়মিল করে আমার কাছে নিয়ে আসে ধান্দা করার জন্য। এ থেকে বোঝা যায় উপজেলার বেশিরভাগ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার মান তো নেই এবং অর্থনৈতিক লেনদেনের স্বচ্ছতার যথেষ্ট অভাব আছে।
দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে মাসিক সভায় সভাপতিত্ব করেন সভার সভাপতি দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. মমতাজ মহল। এসময় দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান মনির বলেন, এখনকার ছেলে মেয়েরা লেখাপড়া করছে না সবাই বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, মিছিল মিটিং নিয়ে ব্যস্ত। লেখাপড়ার প্রতি কোন খেয়াল নেই। চারিদিকে হাত বাড়ালেই মাদক পাওয়া যাচ্ছে। দামুড়হুদা উপজেলা সদরের অবাধে বিক্রি হচ্ছে মাদকদ্রব্য। মাদকদ্রব্য সংগ্রহ করতে অর্থ যোগানোর জন্য চারিদিকে ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও চুরি বেড়েই চলছে নিত্যদিন । এ ব্যাপারে মাদক নির্মূল সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ ও প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন রেখে বলতে চাই, মাদক তো চাঁদের দেশে থেকে আসে না? আপনারা সবই জানেন, কিন্তু আমরা লক্ষ্য করছি যেভাবে চারিদিকে প্রতিদিন মাদকের চালান ধরা পড়ছে মনে হচ্ছে যেন প্রশাসনের লোকজনের সাথে জড়িত আছে। এই অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রাণ চাই। তিনি আরো বলেন, পুলিশের সহযোগিতায় অভিনব কৌশলে রাতের আধারে চারিদিকে কৃষকের উর্বর ভূমি থেকে যেভাবে মাটি কাটার উৎসব চলছে। এক সময় এই উপজেলায় খাদ্য সংকট দেখা দেবে বিষয়টা আমাদের ভেবে দেখা উচিত। উন্নয়ন করতে হলে অবশ্যই বালি মাটির প্রয়োজন হবে আমাদেরকে উপযুক্ত স্থান থেকে বালি মাটি সংগ্রহ করতে হবে সমতল ভূমি ও কৃষকের উর্বর জমি থেকে নয়।
দর্শনা থানা বিএনপির অন্যতম নেতা মো. হাবিবুর রহমান বুলেট বলেন, শিল্প নগরী দর্শনা একটি ঐতিহ্যেবাহী খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক প্রাবণ এলাকা। গত ১৭ বছর স্বৈরাচারী আওয়ামী সরকারের লোকজন এই দর্শনাকে বাংলাদেশের বুকে স্বর্ণসহ বিভিন্ন অবৈধ ভারতীয় মালামাল চোরাচালান এবং মাদক খাওয়া ও কেনা বেচার হট স্পট হিসাবে উপস্থাপনা করেছে। সত্যিই অত্যন্ত দুঃখের বিষয়। আমরা আমাদের দর্শনার হারানো গৌরবকে ফিরিয়ে আনতে চাই। সেজন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই যারা এই অবৈধ চোরাচালান ও মাদকের ব্যবসা করবে আপনারা তাদের ধরে আইনের আওতায় আনেন। এ বিষয়ে যে ব্যক্তি সুপারিশ করবে তাকেও একই মামলায় আসামি করবেন; আমি আপনাদের পাশে থাকবো। মাদকের বিরুদ্ধে কোনো আপস চলবে না।
দামুড়হুদা উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির নায়েব আলী বলেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের দোসর আলী আজগর টগর এবং তার ভাই আলী মনসুর বাবু এই উপজেলায় পরিকল্পিতভাবে স্বাস্থ্য খাতে টেন্ডার বাণিজ্য, মাদক, চোরাচালান ও শত শত কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করে যুব সমাজ এবং শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে। যার খিসারত আজকে উপজেলাবাসী দিচ্ছে। চাকরি দেয়ার নাম করে আমার এক নিকট আত্মীয়র কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা নিয়েছে আজো ফেরত দেয়নি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এইসব নিয়োগ-বাণিজ্যের মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে অন্তবর্তিকালীন সরকারকে ।
দামুড়হুদা প্রেসক্লাবের সভাপতি শামসুজোহা পলাশ বলেন, বেশ কিছু দিন ধরে যে পরিমাণে অপরাধমূলক কর্মকা- বেড়েই চলেছে তা থেকে বোঝা যাচ্ছে উপজেলায় আইনশৃংখলার চরম অবনতি হচ্ছে। দামুড়হুদা মডেল থানার পুলিশ অপরাধের স্পট থেকে মোটরসাইকেল উদ্ধার করল এবং এই বিষয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরও কিভাবে আসামি গ্রেফতার না করে মোটরসাইকেল ছেড়ে দিল তা আমার বোধগম্য নই। এভাবে চলতে থাকলে আজকে যাদের ছেড়ে দিচ্ছেন কালকে তারা বড় বড় ক্রাইম সৃষ্টি করবে। থানা এলাকায় একটি চক্র জুয়া পরিচালনা করছে ; সাংবাদিকেরা পুলিশকে একাধিক বার অবগত ও সংবাদ প্রকাশের পরও থানা পুলিশের ভূমিকা নিষ্ক্রিয়। বিষয়টি দুঃখজনক।
এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন আক্তার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হেলেনা আক্তার নিপা, দামুড়হুদা মডেল থানার (ওসি) মো হুমায়ুন কবীর, দর্শনা থানার (ওসি) শহীদ তিতুমীর, দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো রফিকুল হাসান তনু, দর্শনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইকরামুল হক পিপুল, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম বজলুর রশীদ, প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু হাসান, বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল হক, কার্পাসডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল করিম বিশ্বাস, কুড়ালগাছি ইউপি চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিনসহ বিভিন্ন দফতরের দফতর প্রধানগণ প্রমুখ।