দামুড়হুদা প্রতিনিধি: পূর্ব বিরোধের জেরে মাথাগোঁজার একমাত্র সম্বল বাঁশের কুঞ্চির বেড়া ও টিনের ছাপড়া দেয়া এক টুকরো মাটির ঘরটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। নিঃসম্বল ইয়ার আলীর মতো ভূমিহীনের মাথার ওপর থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে আশ্রয়স্থলের শেষ ছাওনিটুকুও। গতকাল শনিবার সকালে এ ঘটনাটি ঘটেছে দামুড়হুদা উপজেলার সীমান্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের মুন্সিপুর গ্রামের মাঝের পাড়ায়। নিকট আত্মীয়দের এমন নিষ্ঠুর অমানবিক আচরণে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ৫৫বছর বয়সী ভিটাহীন ইয়ার আলী। তার ওপর এমন অমানবিক, নিষ্ঠুর আচরণে ক্ষুদ্র এলাকাবাসীসহ সচেতন মহল। ঘটনা সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ইয়ার আলীর পিতা-মাতা পূর্বের বসবাসকৃত স্থান সাবেক নতিপোতা ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রাম থেকে মুন্সিপুর গ্রামে চলে আসেন। বসবাস শুরু করেন মুন্সিপুর গ্রামের মাঝের পাড়ার লিয়াকত আলী ও আনছার আলীদের (ইয়ার আলীর মামাতো ভাই) বাড়িতে। এরই মাঝে ইয়ার আলীর পিতা আবু তালেব গত হয়েছেন। মামাতো ভাইদের কাছে জমি কেনা বাবদ ওই সময় ১৭হাজার টাকা দেন ইয়ার আলী। কিছুদিন পর মামাতো ভায়েরা ৭হাজার টাকা ফেরত দেন। ইয়ার আলী তার নামে জমি লিখে দিতে বললে শুরু হয় বিবাদ। এভাবেই চলতে থাকে বছরের পর বছর। বৃদ্ধ মাকে নিয়ে অতিকষ্টে খেয়ে না খেয়ে জীবন কাটতো ইয়ার আলীর। গত আনুমানিক এক বছর পূর্বে ইয়ার আলীর বৃদ্ধ মা পরপারে পাড়ি জমান। এরপর একদিন ইয়ার আলীকে তার মামাতো ভায়ের ছেলেরা জমি থেকে উঠে যেতে চাপ সৃষ্টি করেন। ইয়ার আলি জমি কিনে সরে যাবেন বলে সময় চান। জমির দখল না ছাড়ায় কোনো প্রকার অবগতি না করেই গতকাল সকালে ইয়ার আলী বাড়িতে না থাকার সুযোগে মাটির সেই টিনের ছাপড়া ঘরটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন মামাতো ভাইয়ের ছেলেরাসহ কয়েকজন। মাথা গোঁজার একমাত্র সম্বল টিনের ছাপড়াটি ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে তার ওপর এমন অমানবিক আচরণে ক্ষুদ্র এলাকাবাসীসহ সচেতন মহল। ভুক্তভোগী বাস্তুভিটাহীন ইয়ার আলী বলেন, দেশ স্বাধীনের পর আমার পিতা-মাতা মুন্সিপুর গ্রামে এসে বসবাস শুরু করেন। এরই মাঝে আমার পিতা গত হন। পিতা মাতা যাবার পর আমি জমি কেনা বাবদ মামতো ভাইদেরকে ১৭হাজার টাকা দিই। তারা আমাকে তাদের কিছুজমি রেজিষ্ট্রেশন করে দেবে বলে জানান। এক পর্যায়ে তারা আমাকে ৭হাজার টাকা ফেরত দেন এবং জমিটি অন্য আর একজনের কাছে চড়া দামে বিক্রি করে দেন। এরপর বিভিন্ন সময়ে আমার মাথা গোাঁজার ঠাঁই টুকু ছেড়ে চলে যেতে চাপ সৃষ্টি করেন। গত আনুমানিক এক বছর পূর্বে মা-ও মারা যান। এ সময় মামাতো ভাই ও তার ছেলেরা তাকে জমির দখল ছেড়ে দিতে প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে। তাদের থেকে জমি কেনার জন্য কিছু সময় চাই। তারা সুযোগ না দিয়ে শুক্রবার সকালে আমি বাড়িতে না থাকার সুযোগে ঘরটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। এরপর মামাতো ভাইয়ের ছেলে ছানোয়ার বেলা আনুমানিক ১০টার দিকে মোবাইল করে বলেন, আপনি বাড়ি এসে আপনার জিনিসপত্র নিয়ে যায়। তার আগেই জানতে পারি আমার মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকু ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে দুপুরে সেখানে গিয়ে আমার প্রয়োজনীয় কিছু জিনিসপত্র নিয়ে বড় ভায়ের বাড়িতে অবস্থান করি। বিষয়টি আমি স্থানীয় নেতাকর্মীদেরকে জানিয়েছি। তারা কি বিচার করে দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের মেম্বার নূর মোহাম্মদ ভগু জানান, এ ঘটনার বিষয়ে আমি অবগত নই। আমাকে কেউ কিছু জানাইনি।