দলীয় প্রার্থীর গলাকাটা আওয়ামী লীগের হাফ ডজন বিদ্রোহী প্রার্থী

জীবননগর আন্দুলবাড়িয়া ইউপি নির্বাচনী হালচাল...................

জীবননগর ব্যুরো/আন্দুলবাড়িয়া প্রতিনিধি: জীবননগর উপজেলার ২নং আন্দুলবাড়িয়া ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৯জন, সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার পদে ৯জন ও সাধারণ মেম্বর পদে ৪৮ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। গতকাল রোববার মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন পর্যন্ত উপজেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার নিকট প্রার্থীরা এ মনোনয়নপত্র দাখিল করে।

জীবননগর উপজেলা নির্বাচন অফিসসূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। আগামী ২৫ জুন মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। এদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচনী মাঠে কে থাকছেন আর কে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করছেন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ হতেই হাফ ডজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরা হলেন-আন্দুবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও আওয়ামী লীগে মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মির্জা হাকিবুর রহমান লিটন। দলের বিদ্রোহী হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তার, সহসভাপতি মীর মকলেচুর রহমান টজো, সাধারণ সম্পাদক শেখ মহিদুল ইসলাম মধু, সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ ফিরোজ হোসেন ও শেখ আসাউল ইসলাম গোলাপ। এছাড়াও চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আতিয়ার রহমান, জামায়াতে ইসলামী দলের উপজেলা শাখার সাধারণ সেক্রেটারি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সাখাওয়াৎ হোসেন ও হাফিজুর রহমান হাসান। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হতে চেয়ারম্যান পদে মির্জা হাকিবুর রহমান লিটনকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেছে। অপরদিকে বিএনপি ও  জামায়াতে ইসলামী দল আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রার্থীর নাম ঘোষণা দেয়নি। তবে এ নির্বাচনে ৩ টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নিয়েছে। উপজেলার দ্বিতীয় বৃহত্তর আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন ও বাজার হিসেবে জেলায় পরিচিত হয়ে উঠায় আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দলের এখানে রয়েছে শক্ত ঘাঁটি। বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ প্রার্থীর বিজয় ছিনিয়ে আনতে দলের নেতাকর্মীরা হোমওর্য়াক শুরু করেছে। অপর দিকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী নির্বাচিত করলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর নামে একাধিক প্রার্থী থাকায় নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। সরেজমিনে এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমান সরকারের আমলে এ ইউনিয়নে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের ধারা ও চেয়ারম্যান পদটি ধরে রাখতে দলীয় নেতাকর্মীরা এমপি হাজি আলী আজগার টগরের দিকে চেয়ে আছেন। ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি আশাদুজ্জামানসহ দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তিনি এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে যে দিক নির্দেশনা দেবেন তা তৃণমূলের নেতাকর্মীরা অনুসরণ করে প্রার্থীর পক্ষ কাজ করবেন। দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন এমপি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে সাংগঠনিক অবস্থা ভেঙে পড়বে ও নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়বে। দল থেকে বিদ্রোহী প্রার্থীদের বহিষ্কারের খড়গ ঝুলবে। বিদ্রোহীদের পদ পদবির কি হবে? এ নিয়েও চলছে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চুলচেরা বিশ্লেষণ। নির্বাচন পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন সম্প্রতি উপজেলার কেডিকে, উথলী, মনোহরপুর, বাঁকা, হাসাদহ ও রায়পুর ইউনিয়নের অনুষ্ঠিত নির্বাচনের চেয়ে এ ইউনিয়নের নির্বাচন হবে রাজনৈতিক দলের লড়াই। রাজনৈতিক দলগুলো জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ স্থানীয় সরকার নির্বাচনটি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। সূত্র মতে ঈদের পর শুরু হবে রাজনৈতিক তৎপরতা। আওয়ামী লীগ দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এর খেসারত গুনতে হবে বলে অনেকে মনে করেন।

সূত্র জানান, সম্প্রতি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ঠেকাতে জেলা নেতৃবৃন্দকে তাগিদ দিয়েছে। নির্বাচনী প্রজ্ঞাপন জারী করায় সম্ভাব্য চেয়ারম্যান, মেম্বর ও সংরক্ষিত আসনের মহিলা মেম্বার প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের পদচারণায় হাট-বাজার, গ্রাম, পাড়া ও মহল্লায় ভোট ও দোয়া প্রার্থনার মধ্যদিয়ে ঘর গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ইউনিয়নের বিভিন্ন চায়ের দোকান, হাট বাজার, পাড়া, মহল্লা ও মাঠে যোগ্য প্রার্থী নিয়ে ভোটারদের মাঝে চলছে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত টকশো।

এ ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ২২ হাজার ৯৫০ জন। পেছনে ফিরে দেখা: ২০১৬ সালে ২৮ মে আন্দুলবাড়িয়া ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। চেয়ারম্যান পদে প্রাপ্ত ফলাফলে দেখা যায় শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তার আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী (আনারস) প্রতীক নিয়ে  ৪হাজার ৭৬৯ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত মির্জা হাকিবুর রহমান লিটন (নৌকা) প্রতীকে পান ৪ হাজার ৬৪১ ভোট, বিএনপির আতিয়ার রহমান (ধানের শীষ) প্রতীক নিয়ে ৩ হাজার ১৬৪ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর সাখাওয়াৎ হোসেন (মোটরসাইকেল) প্রতীক নিয়ে ২হাজার ৭৩৩ভোট, বিএনপির সাবদার রহমান (ঘোড়া) প্রতীক নিয়ে ১হাজার ১৮৮ভোট ও নজরুল ইসলাম (হাতুড়ি) প্রতীক নিয়ে পান ৫৫ ভোট। এবার কার কপালে জুটবে চেয়ারম্যানের মসনদ সেটাই এখন দেখার বিষয়।

Comments (0)
Add Comment