দর্শনা অফিস: করোনা ভাইরাস দিনদিন মহামারি আকার ধারণ করেছে। গোটা দেশের মতোই দর্শনায় দিনদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেনো লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দামুড়হুদা উপজেলায় ৯১ জনের মধ্যে দর্শনায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৪৯ জন। করোনা উপসর্গ নিয়ে দর্শনায় ২ জনের হয়েছে মৃত্যু। তুলে নেয়া হয়েছে লকডাউন। কেউ মেনে চলছে না স্বাস্থ্যবিধি। পুলিশ প্রশাসন অনেকটাই নীরব ভূমিকায়। আক্রান্তের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বাড়লেও তেমন মাথা ব্যাথা নেই কারো। রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজার, হোটেল-রেস্তোরা, চায়ের দোকান, রাস্তার মোড়ে মোড়ে জনমানবের উপচে পড়া ভীড়ে বোঝার উপায় নেই দেশের ক্রান্তিÍকালীন করোনা মহামারী সময় পার করছি আমরা। মাস্ক পরছে না ও নিরাপদ দূরত্বের ধার-ধারছে না কেউ। দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু হেনা জামান শুভ জানান, দামুড়হুদা উপজেলায় মোট করোনা ভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা ৯১ জন। এদের মধ্যে দর্শনায় আক্রান্ত ৪৯ জন। এরই মধ্যে করোনা উপসর্গ নিয়ে দর্শনায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৩০ জন। ১৫ জন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদের মধ্যে মাত্র একজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকলেও বাকী ১৪ জনই বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। ২৬ মে দর্শনা থানায় প্রথম করোনা আক্রান্ত হলেও ১৯ জুন চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসকের বৈঠকে দর্শনা পৌরসভার ৫ ও ৭নং ওয়ার্ডকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ওই দুটি ওয়ার্ডের থানাপাড়া ও রিফুজিকলোনি এলাকাকে লকডাউন ঘোষণা করা হলেও ২/৩ দিন তা পরিপূর্ণ বলবৎ ছিলো। পুলিশি কঠোর অবস্থান, ৭টি পয়েন্টে পুলিশি চৌকি, মহল্লার প্রবেশ দ্বারে বাঁশের ব্যারিকেট, লকডাউন সংবলিত ব্যানার ও ম্যাপের দৃশ্য ছিলো চোখে পড়ার মতো। ২/৩ দিন যেখানকার পানি সেখানেই গড়িয়েছে। পুলিশি চৌকি ও ভূমিকা যেমন দেখা মেলেনি, তেমনই বাঁশের ব্যারিকেট ও ব্যানার কোথায় হারিয়েছে তা খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে ২/১টি পয়েন্টে বাঁশের ব্যারিকেট থাকলেও তা সরিয়ে অবাধে যাতায়াত করেছে পথচারীরা। রাতারাতি দর্শনা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় ২৪ জুন পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডকে রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত করে বাসস্ট্যান্ডপাড়াকে লকডাউনের আওতায় আনা হয়। সেখানেও পুলিশের ভূমিকা দেখা গেছে ২/১ দিন। বর্তমানে লকডাউন মুক্ত দর্শনা শহর। ১৪ জন বাড়িতে চিকিৎসা নিলেও ওই বাড়িগুলোও ঠিকমতো লকডাউনের আওতায় আনা হয়নি। ফলে করোনা আক্রান্ত রোগীর বাড়ির সদস্যরা অবাধেই ঘোরাফেরা করছে হাট-বাজারে। এতে করে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে ব্যাপকভাবে। এমনভাবে চললে দর্শনায় ভয়াবহ রূপ নিতে পারে মহামারি করোনা ভাইরাস। সেক্ষেত্রে থানা পুলিশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহলকে এগিয়ে আসতে হবে জরুরিভাবে। সচেতন মহল অভিমত ব্যক্ত করে বলেছেন, দর্শনাবাসী কোনোভাবেই সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে না। সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করে স্বাভাবিক নিয়মেই অবাধে যেমন খোলা থাকছে দোকানপাট, তেমনই মানুষের চলাচলেও নেই নিরাপদ দূরত্ব। ফলে যতোই দিন যাচ্ছে, ততই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এমনিভাবে চলতে থাকলে দর্শনায় করোনা ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করতে পারে। তাই নিজেদের স্বার্থে হলেও এখনই প্রশাসনকে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের কাছে জোর দাবি তুলেছে দর্শনাবাসী।