মনজুরুল আলম: একুশের চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে ঝিনাইদহ পৌর শহরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর শহীদ মিনার। ৮১ ফুট উচ্চতা আর ৫২ ফুট প্রস্থের এই শহীদ মিনারটি ২০১৫ সালের নভেম্বরে শহরের চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড এলাকার প্রেরণা ৭১ চত্বর সংলগ্ন চার রাস্তার পূর্ব-দক্ষিণ কোণে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছিল। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে শহীদ মিনারটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন ঝিনাইদহ পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুর করিম মিন্টু। ২০১৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি মিনারটি উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ৭৪ বছর পরও জেলার ৬০ ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখনো তৈরি হয়নি শহীদ মিনার। এসব প্রতিষ্ঠানে দায়সারা কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়ে থাকে মহান ভাষা দিবসের কর্মসূচি। ফলে অধরা থেকে যাচ্ছে একুশের চেতনা আর ভাষা শহীদদের মহান আত্মত্যাগ। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকায় দিনটিতে কমলমতি শিক্ষার্থীরা প্রতিকি শহীদ মিনার তৈরি করেই ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়। শিক্ষা অফিস জানায়, জেলায় কলেজ রয়েছে ৫৬টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩০২টি, মাদরাসা ১১৬টি এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ৯০৭টি। এরমধ্যে প্রায় শতভাগ কলেজে শহীদ মিনার থাকলেও প্রায় ৪০ ভাগ মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১০০ ভাগ মাদরাসায় শহীদ মিনার নেই। আবার যে সব প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার আছে, তা সারা বছরই অবহেলা আর অযতেœ সারা বছরই পড়ে থাকে। সারাদিন ছাগল গরুর বিচরণক্ষেত্র আর রাতে বখাটেদের আড্ডা বসে এসব মিনারে।
ঝিনাইদহ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জানান, জেলায় ৯০৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তবে কতোগুলো প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নেই তা নিশ্চিত করতে না পারলেও প্রায় ৪০ ভাগ বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই বলে জানান। তবে যে সব স্কুলে শহীদ মিনার নেই সেখানে নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে।
সরেজমিন জেলার মহেশপুর উপজেলার হামিদনগর-বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায়, নতুন করে তৈরি করা শহীদ মিনার। সেখানে ময়লা আবর্জনা রয়েছে। শহীদ মিনারের বেদীতে ছাগল হাঁটাহাঁটি করছে। ১৯৮৬ সালে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের নামে প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে দীর্ঘদিন পর ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের ১ লাখ টাকা অর্থায়নে শহীদ মিনারের নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু এ অর্থে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ শুরু করা হলেও শেষ পর্যন্ত বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় নির্মাণের কাজ শেষ করা হয়েছে। স্কুল করোনাকালীন বন্ধ থাকায় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
তবে এ বিষয়ে ওই স্কুলের দফতরি কাম নৈশপ্রহরী সম্রাট হোসেন বলেন, বর্তমান স্কুল বন্ধ রয়েছে। যে কারণে ধুলা-বালু ময়লা আবর্জনা সৃষ্টি হয়েছে। আর কয়েকদিন পরেই স্কুল খোলা হবে। তখন পরিষ্কার হয়ে যাবে। মিনার তৈরি করা হয়েছে- জেলা পরিষদ ও বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানের পরিবারের সহায়তায়। এখনে শহীদ মিনারের রক্ষণ বেক্ষণের জন্য সীমানা পাঁচিল বা বেড়া না থাকা এবং পাশে গাছগুলোর পাতা পড়েছে। ওই পাতা খেতে ছাগল উঠে পড়েছে। স্কুল খোলা থাকলে সারা বছর দেখেশুনে রাখা হয়।
ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সভাপতি এম রায়হান বলেন, শুধুমাত্র একুশে ফেব্রুয়ারি আসলেই ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনার পরিষ্কার না করে, সারা বছরই মুক্তিযোদ্ধা ও ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান রাখতে হবে। নতুন প্রজন্মকে ভাষা আন্দোলনের, ভাষা শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সম্পর্কে জানাতে হবে। তাদের মধ্যে একুশে চেতনা সৃষ্টি করে, শ্রদ্ধা সম্মান জানাতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। এছাড়া যে সকল প্রতিষ্ঠানে আজও শহীদ মিনার তৈরি হয়নি, সেখানে শহীদ মিনার তৈরির দাবি করেন তিনি।